ছুটি মঞ্জুর না হলেও শনিবার থেকে সিউড়ি সদর হাসপাতালে আসছেন না স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ দেবাশিস দেবাংশী। তাঁর অনুপস্থিতির জন্য ‘হয়রান’ হয়ে মঙ্গলবার হাসপাতালে আসা রোগীরা সুপারের কাছে অভিযোগও জানিয়েছেন। ঘটনা হল, আজ, বুধবার দেবাশিসবাবুর বিরুদ্ধে ওঠা এক অভিযোগের তদন্তে হাসপাতালে আসছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের দল। এই অবস্থায় বিভিন্ন মহলের অভিযোগ, তদন্ত-দলকে এড়াতেই ‘নিয়মবিরুদ্ধ’ ভাবে গরহাজির রয়েছেন ওই ডাক্তার।
বহু চেষ্টা হলেও দেবাশিসবাবুর সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর মোবাইল ছিল বন্ধ। বীরভূমের স্বাস্থ্য-কর্তারাও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। এ দিন বহির্বিভাগে ‘ডিউটি’ থাকলেও দেবাশিসবাবু না থাকায় ‘নাকাল’ হন বহু রোগীই।
মাস পাঁচেক আগে ঝাড়খণ্ডের কুসুমনগরের আসন্নপ্রসবা রেখা বাউরিকে দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে সিউড়িতে ‘রেফার’ করা হয়েছিল। রক্তচাপ খুব বেশি, স্রেফ এই যুক্তিতে কর্তব্যরত চিকিৎসক দেবাশিসবাবু ওই বধূকে বর্ধমান মেডিক্যালে ‘রেফার’ করে দেন।
বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে দুবরাজপুর থানার সামনে ওই বধূর প্রসব হয়। ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন
রেখাদেবী। পরে দেবাশিসবাবুকে ‘শো-কজ’ও করা হয়। ওই ঘটনারই তদন্তে আজ রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের দুই সদস্যের দল আসছে সিউড়িতে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার দাবি, “কর্তব্যে গাফিলতির একাধিক অভিযোগ রয়েছে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। তদন্তের জন্য ওই দল যে আজ হাসপাতালে আসবে, তা গত শুক্রবারই (৩০ মার্চ) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। সেই মতো চিকিৎসক ও নার্সদের তা বলা হয়।” ওই স্বাস্থ্য-কর্তার অভিযোগ, “আমাদের অনুমান, তদন্ত-দলের মুখোমুখি হওয়ার ভয়ে কাউকে না জানিয়ে দেবাশিসবাবু গত শনিবার থেকে হাসপাতালে আসছেন না।”
একই অভিযোগ সদর হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির সদস্য তথা সিউড়ির তৃণমূল পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়ের। তাঁর কথায়, “তদন্ত এড়াতেই দেবাশিসবাবু গা ঢাকা দিয়েছেন। এটাই অবাক লাগে, বারবার নানা বিধ অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও উনি এই হাসপাতালে বছরের পর বছর কাজ করছেন কী করে!”
হাসপাতাল সুপার মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “৩০ মার্চ পারিবারিক কারণ দেখিয়ে অনির্দিষ্ট কালের ছুটির আবেদন করেছিলেন দেবাশিসবাবু। তদন্তকারী দল আসবে জানিয়ে ছুটি দেওয়া যাবে না বলে তাঁকে জানিয়ে দিই। ওই দিন বিকেলে ফের তিনি ছুটির আবেদন করেন। তা-ও খারিজ হয়। অথচ, শনিবার থেকে তিনি কাউকে কিছু না জানিয়ে আসছেন না।” সুপারের বক্তব্য, “এ দিন বহির্বিভাগেও উনি না আসায় রোগীদের ঘুরে যেতে হল। আমিও ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি।” বীরভূমের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবেই। এ ব্যাপারে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে বলেছি।” মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক আশিস মল্লিক বলেন, “নির্দেশ অমান্য করায় ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারকে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য ভবনেও সব জানানো হয়েছে।”
সিউড়ির বাসিন্দা সাদি মাহারা, মহম্মদবাজারের মালেকা বিবি, আকমিনা বিবিদের ক্ষোভ, “এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বসে ছিলাম। সাড়ে ১২টা নাগাদ বলা হল চিকিৎসক আসবেন না। আগে জানালে এই হয়রানি হত না।” |