ট্যাক্সিতে নতুন মিটার বসানোর আবেদন করার সময়সীমা বৃদ্ধির আর্জি সোমবার খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। সব ট্যাক্সিতে ‘কম্পিউটারাইজ্ড থার্মাল প্রিন্টার মিটার’ বসাতে রাজ্যকে ছ’মাস সময় দেওয়া হয়েছিল। ওই সময়ের মধ্যে কেন নতুন মিটার বসানোর নির্দেশ কার্যকর করা যায়নি, সেই প্রশ্ন তুলেই এ দিন রাজ্য সরকার ও একটি ট্যাক্সিমালিক সংগঠনের ওই আর্জি খারিজ করে দেয় প্রধান বিচারপতি জে এন পটেল ও বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ। হাইকোর্টের নির্দেশ, ৩১ মার্চের মধ্যে যে সব ট্যাক্সি ওই মিটার বসায়নি, তাদের পারমিট বাতিল করার কাজ এ বার শুরু করুক রাজ্য সরকার।
শুক্রবার হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, ৩১ মার্চ রাতের মধ্যে সব ট্যাক্সিকেই ওই মিটার নিতে বা নেওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ছয়-সাত হাজার ট্যাক্সি নতুন মিটারের আবেদন করেনি। তাদেরকেই আরও দু’দিন সময় দেওয়ার আর্জি জানায় রাজ্য ও ট্যাক্সি-মালিকদের সংগঠনটি। এ দিন হাইকোর্টের নির্দেশের ফলে এখন ওই সব ট্যাক্সির পারমিট বাতিল করতে হবে রাজ্যকে। |
সমাধান কী? এ দিন হাইকোর্ট সে পথও বাতলে দেয়। ডিভিশন বেঞ্চ বলে, নির্দিষ্ট বিধি থাকলে খারিজ হওয়া ট্যাক্সির মালিকদের থেকে জরিমানা নিয়ে নতুন পারমিট দিতে পারে রাজ্য। কিন্তু আইন ঘেঁটে পরিবহণ দফতর দেখে, পারমিট খারিজের পরে জরিমানা নিয়ে নতুন পারমিট দেওয়ার বিধি নেই। এ দিন বিষয়টি নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। পরে তিনি বলেন, “পুরো বিষয়টি অফিসার, আইনজীবীরা খতিয়ে দেখছেন। বিধিতে কী আছে, তা দেখা হচ্ছে। তাঁরাই আলোচনা করে সমাধান বার করবেন। আশা করি, মঙ্গলবার কোনও রাস্তা বেরোবে।” মন্ত্রীর দাবি, হাইকোটের্র নির্দেশ মেনে নতুন মিটার না থাকা ট্যাক্সির পারমিট বাতিল করতে শুরু করেছে পরিবহণ দফতর। যারা ইতিমধ্যেই মিটার বদলের আবেদন করেছেন, তাঁদের ধরা হবে না বলে জানান মন্ত্রী। অর্থাৎ আবেদনের কাগজ দেখালে আপাতত ওই সব ট্যাক্সি রাস্তায় চলতে পারবে।
হাইকোর্ট সকালেই নির্দেশ দেওয়ায় ট্যাক্সিচালকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়ায়। মোটর ভেহিক্লস দফতরে মিটারের কাগজ নিতে যাওয়া চালকদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন পরিবহণমন্ত্রী স্বয়ং। বিক্ষোভকারীরা ‘মুর্দাবাদ’ স্লোগানও দেন। হাইকোর্ট ১০ সেপ্টেম্বর নতুন মিটার বাধ্যতামূলক করে নির্দেশ দিলেও কেন এত দিন রাজ্য ব্যবস্থা নেয়নি, ট্যাক্সিচালকেরাও সেই প্রশ্ন তোলেন। বিভিন্ন রাস্তায় ট্যাক্সি দাঁড় করিয়ে দেন তাঁরা। মদনবাবু অবশ্য বলেন, “ওখানে অনেক চালক জমায়েত করেছিলেন। সরকারের পরিবহণ-নীতি সম্পর্কে তাঁদের ভুল ধারণা ছিল। তাঁরা ‘মদন মিত্র, ফিরে যাও’ বলেও স্লোগান দিচ্ছিলেন।”
বিক্ষোভকারীরা কি সিপিএম-সমর্থক? মন্ত্রী বলেন, “ওঁরা ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, জিন্দাবাদ’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন।” তাঁর দাবি, “হাইকোর্টের নির্দেশে ট্যাক্সিচালকেরা অনেকেই দিশাহারা। তবে বিষয়টি তেমন কিছু নয়।” তিনি ‘ঘুরে দাঁড়াতেই’ বিক্ষোভকারীরা দমে যান বলে দাবি করেন মদনবাবু।
এ দিকে, বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা ভাবছে। অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিমল গুহ বলেন, “হাইকোর্টের এই ঘোষণায় আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা ভাবছি।’’ তিনি আরও বলেন, “গত ১৮ ফেব্রুয়ারি পরিবহণমন্ত্রী পাঁচ হাজার চালক-মালিকের সামনে যে প্রতিশ্রুতি দেন, তা তিনি মানেননি। পুলিশি জুলুম বন্ধ হয়নি। শহরে দূষণ পরীক্ষার অতিরিক্ত কেন্দ্র তৈরি হয়নি। তৈরি হয়নি সরকারি ট্যাক্সি স্ট্যান্ডও।” মিটার-কাণ্ডে সোমবার থেকেই প্রায় সাত হাজার ট্যাক্সি বসে গিয়েছে। পরবর্তী সময়ে ৩৫ হাজার ট্যাক্সিই এই পথে হাঁটবে বলে মন্তব্য বিমলবাবুর। কবে থেকে ট্যাক্সি-পরিষেবা বন্ধ হবে, তা আজ, মঙ্গলবার সিদ্ধান্ত নেবে অ্যাসোসিয়েশন। |