চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১...
মানব-মানবীর প্রেমে যৌবনের অসামান্য উচ্ছ্বাস
বিড়লা অ্যাকাডেমি অব আর্ট অ্যান্ড কালচারের সূচনা হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। সরলা বিড়লা ও বসন্তকুমার বিড়লার দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যক্তিগত শিল্প সংগ্রহকে একটি সংগ্রহালয়ে সুচারু ভাবে স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা ছিল এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য। তার পর থেকে ধীরে ধীরে এই মিউজিয়ামের কর্মকাণ্ড বহু দূর প্রসারিত হয়েছে। বিড়লা অ্যাকাডেমি এখন শুধু কলকাতার নয়, সারা দেশেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পচর্চা কেন্দ্র। সম্প্রতি ৪৫ বছর পূর্ণ করল বিড়লা অ্যাকাডেমি। এ উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো সর্বভারতীয় বার্ষিক প্রদর্শনীর বদলে অ্যাকাডেমি কর্তৃপক্ষ আয়োজন করেছেন একটি অভিনব প্রদর্শনী। তাঁদের বিপুল সংগ্রহ থেকে নির্বাচিত কিছু কাজ তাঁরা তুলে ধরলেন। চারটি গ্যালারি জুড়ে অনুষ্ঠিত হল প্রদর্শনী যার শিরোনাম: ‘ওডিসি আ জার্নি ইনটু টাইম উইথ দ্য কালেকশন’। প্রদর্শনীটি তিনটি পর্যায়ে বিভাজিত। প্রথম পর্যায়ে দেখানো হয়েছে ভারতের প্রাচীন ও মধ্য যুগের ছবি ও ভাস্কর্য। এটি কিউরেট করেছেন টি.কে. বিশ্বাস। দ্বিতীয় পর্যায়ে ভারতের আধুনিক ও সমকালীন শিল্প। কিউরেট করেছেন নানক গঙ্গোপাধ্যায়। তৃতীয় ভাগ আন্তর্জাতিক শিল্পকলা উপস্থাপিত হয়েছে শাহিন মোরালির কিউরেশনে।
প্রাচীন ও মধ্য যুগের ভারতের ভাস্কর্য ও চিত্রের সংগ্রহ অত্যন্ত সমৃদ্ধ। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে সুঙ্গ যুগের এলাহাবাদ থেকে পাওয়া একটি ছোট টেরাকোটা, যার শিরোনাম ‘যক্ষ টয় কার্ট’ আদিমতার তীব্র অভিব্যক্তিতে অনবদ্য। এই আদিমতার উৎসের নতুন মূল্যায়ন হয়েছে আবার আধুনিকতাবাদী যুগে। ধ্রুপদী ভাস্কর্যের দু’টি নিদর্শনের কথা উল্লেখ করা যায়। প্রথমটি গুপ্ত যুগের। খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতকে মথুরা থেকে সংগৃহীত লাল বেলে পাথরে নির্মিত ‘শিবের মুখ’। দ্বিতীয়টি ত্রয়োদশ শতকের দক্ষিণ ভারতের চোল যুগের ব্রোঞ্জ ‘নটরাজ’।
শিল্পী: অগুস্ত রদাঁ
এর পরেই উল্লেখযোগ্য মধ্য যুগের মিনিয়েচার বা অণুচিত্রের সংগ্রহ। ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে মোগল যুগের রামায়ণ সচিত্রকরণের একটি ছবি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে কী ভাবে পারস্যের চিত্র-আঙ্গিককে আত্তীকৃত করছেন মোগল শিল্পীরা। মোগল অণুচিত্রের বেশ কিছু নিদর্শন পেরিয়ে আমরা আসি রাজস্থানী ও পাহাড়ি অণুচিত্রে।
অষ্টাদশ শতকে বিকানীরের ‘
রাগিণী মেঘমল্লার’ বা দাক্ষিণাত্যের ‘রাগিনী কুকুভ’ পরিপ্রেক্ষিত বিন্যাসে ও ছন্দিত উপস্থাপনায় যে প্রজ্ঞার পরিচয় দেয় তার তুলনা বিরল। এ রকম আরও অজস্র ছবি, বস্ত্রশিল্প ও লোকচিত্রের দৃষ্টান্ত পেরিয়ে আমরা আসি আধুনিক যুগে।
ব্রিটিশ অ্যাকাডেমিক স্কুল ও রবি বর্মা পেরিয়ে প্রদর্শনী আসে নব্য ভারতীয় ধারায়। অবনীন্দ্রনাথ, গগনেন্দ্রনাথ ও নন্দলাল বসুর বেশ কিছু অনবদ্য ছবি আছে। আছে এই ঘরানার অন্য শিল্পীদেরও কাজ। সুনয়নী দেবীর ‘রাধা-কৃষ্ণ’তে পাই নিমগ্ন, অন্তর্মুখী লৌকিক চেতনার প্রাথমিক স্পন্দন, যা পরে প্রসারিত হয় যামিনী রায়ের কাজে। রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি ছবি এই প্রদর্শনীকে বিশেষ ভাবে সমৃদ্ধ করেছে। তার পর এসেছে ১৯৩০-এর দশকে প্রতিষ্ঠাপ্রাপ্ত শান্তিনিকেতন ঘরানার শিল্পী বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় ও রামকিঙ্করের কাজ। ১৯৪০-এর দশকের শিল্পীদের সংগ্রহটিও যথেষ্ট সমৃদ্ধ।
প্রদোষ দাশগুপ্তের ভাস্কর্য, গোপাল ঘোষ, হুসেন, রাজা, সুজা, হেব্বার প্রমুখ শিল্পীর ছবি এবং মীরা মুখোপাধ্যায়ের ভাস্কর্য ও সোমনাথ হোরের ছাপচিত্র বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৬০-এর দশকে এসে ভারতীয় আধুনিকতাবাদী চিত্রধারা নিজস্ব আত্মপরিচয়ে ভাস্বর হয়ে ওঠে। শ্যামল দত্তরায়, গণেশ পাইন, যোগেন চৌধুরী, রবীন মণ্ডল, বিকাশ ভট্টাচার্য, রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, এ. রামচন্দ্রন, শক্তি বর্মন প্রমুখ আরও অনেক শিল্পীর কাজ এই নতুন দৃষ্টিকোণ মেলে ধরে।
আন্তর্জাতিক শিল্পকলার মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় অগুস্ত রদাঁ-র ১৯০৪ সালে করা কয়েকটি লিথোগ্রাফ। মানব-মানবীর প্রেমে যৌবনের অসামান্য উচ্ছ্বাস এখানে। এ ছাড়া রয়েছে জোয়ান মিরো, পাবলো পিকাসো, গুস্তাভ ক্লিম্ট-এর কাজ। আঁন্দ্রে ম্যাসনের একটি তেলরঙের ছবি, জাঁ আর্পের ১২টি এচিং-এর একটি চিত্রমালা প্রদর্শনীকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে।
ফ্রাঙ্ক কুপকা-র ১৯১৬ সালে করা উড-কাট-এচিং-এর ছবিটি সঙ্গীতময় বিমূর্ততার অসামান্য দৃষ্টান্ত। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক শিল্পীরই দেশ ও কাজটির তারিখের উল্লেখ নেই। থাকলে সম্পাদনা সম্পূর্ণতর হত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.