বিজয় মাল্যের সঙ্গে বৈঠক
চান কিংফিশারের কর্মীরা
ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে চলেছে। সরাসরি বিজয় মাল্যের সঙ্গে কথা বলে এ বার একটা হেস্তনেস্ত করতে চাইছেন কিংফিশার বিমান সংস্থার কর্মীরা। শুরু হয়েছে সই সংগ্রহ। সই-সহ চিঠি পাঠানো হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। ২ এপ্রিল মুম্বইয়ে বিজয় মাল্যের সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন কর্মীরা। জানা গিয়েছে, বৈঠকে পাইলট-বিমানসেবিকা-ইঞ্জিনিয়ার ও অফিসারদের প্রতিনিধিরা চেয়ারম্যানের কাছ থেকে বেশ কয়েকটি প্রশ্নের জবাব চাইবেন।
বিজয় মাল্য বলছেন, কিংফিশার ঘুরে দাঁড়াবে। শুধু এই বক্তব্যে আর সন্তুষ্ট হতে পারছেন না কর্মীরা। গত তিন মাস ধরে বেতন নেই। কলকাতা সহ দেশের বেশ কিছু শহর থেকে উড়ান তুলে নেওয়া হয়েছে। এ দিকে ৪ এপ্রিল আইপিএল শুরু হচ্ছে। সেখানে বিজয় মাল্যের ‘রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু’ খেলবে। কর্মীদের প্রশ্ন, “আমাদের বেতন দেওয়া যাচ্ছে না। সংস্থা ধুঁকছে। আর মালিক কী না ক্রিকেট খেলায় মেতে রয়েছেন? এটা কত দিন সহ্য করা যায়?”
বিজয় মাল্যের কাছ থেকে আরও বেশ কয়েকটি প্রশ্নের জবাব চান কর্মীরা। অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের বক্তব্য স্বচ্ছ নয়। এক পাইলটের বক্তব্য, “কিংফিশারের ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী এবং ঠিক কবে আমাদের বেতন দেওয়া যাবে, এই দুটিই এখন প্রধান বিষয়। কে বা কারা আমাদের সংস্থায় টাকা ঢালতে রাজি হয়েছেন, তা জানার অধিকারও আমাদের রয়েছে।” তাঁর কথায়,“ কলকাতা, আমদাবাদ, জয়পুরের মতো যে সব গুরুত্বপূর্ণ শহর থেকে উড়ান তুলে নেওয়া হল, সেখানে কবে আবার উড়ান শুরু হবে তাও জানা প্রয়োজন।” বিজয় মাল্য এই সব প্রশ্নের মোকাবিলা করার জন্য কর্মীদের মুখোমুখি বসবেন কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলেই।
কর্মীদের অভিযোগ, বিজয় মাল্য ব্যক্তিগত ভাবে বিশাল সম্পত্তির মালিক। দামি গাড়ি বা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা বাড়ি তো রয়েইছে। তা ছাড়া তাঁর মালিকানায় আছে আস্ত দ্বীপও। শুধু যা বেচলেই বিশাল অঙ্কের টাকা পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। উঠে আসছে তাঁর শখ-সৌখিনতা আর বিলাসবহুল প্রমোদতরীর (ইয়ট) কথাও। কান শহরের কাছে একটি দ্বীপে রয়েছে তাঁর প্রায় ৬ কোটি ডলারের সম্পত্তি। নাম ‘গ্র্যান্ড গার্ডেন’। সারা দ্বীপে যা একমাত্র ব্যক্তিগত সম্পত্তি। কারণ সেখানকার বাকি দু’টি বাড়িরই মালিকানা রয়েছে সরকারের হাতে। সংশ্লিষ্ট মহলের একটি অংশের ধারণা, বিমানসংস্থাকে বাঁচাতে বিয়ার ব্যবসা ইউনাইটেড ব্রিউয়ারিজ-এ নিজের অংশীদারি বেচে দিতে পারেন বিজয় মাল্য।
শুক্রবার কলকাতায় ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)-র দফতরের সামনে কিংফিশারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান প্রায় সাড়ে তিনশো কর্মী। এখানকার ডিজিসিএ-র দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার সানিত কুমারের হাতে তাঁরা একটি স্মারকলিপিও জমা দেন। এঁরা অবশ্য কেউ কিংফিশারের স্থায়ী কর্মী নন। কলকাতা বিমানবন্দরে কিংফিশারের মালবাহক, সাফাইকর্মী, গাড়িচালকের কাজ ‘আউটসোর্স’ করা হয়েছিল স্টার ইন্টারন্যশনাল নামে একটি সংস্থাকে। বিক্ষোভকারীরা ওই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। মঙ্গলবার রাতে স্টারের মালিক মিঠু ভট্টাচার্যের নামে একটি ই-মেল আসে। কিংফিশার জানিয়ে দেয়, কলকাতায় তাদের সঙ্গে স্টারের চুক্তি শেষ। সংস্থার ম্যানেজার, মিঠুদেবীর স্বামী পার্থ ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের ৩৮৩ জন কর্মীর হাতে আর কোনও কাজ নেই।”
বিমানবন্দরের এই ‘গ্রাউন্ডসম্যান’-দের সিটু সমর্থিত ইউনিয়নের সভাপতি স্বপন গুপ্ত বলেন, “বিষয়টি নিয়ে সূর্যকান্ত মিশ্র এবং সাংসদ তপন সেনের সঙ্গে কথা হয়েছে। বিধানসভা এবং লোকসভায় এই বিষয়টি তোলা হবে। বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহের সঙ্গে তপনবাবু কথা বলবেন।”
পার্থবাবু জানিয়েছেন, প্রতি মাসে কিংফিশারের কাছ থেকে ৫২ লক্ষ টাকা করে তাঁদের পাওয়ার কথা। কিন্তু, গত ন’মাস ধরে কখনও ১৮ লক্ষ, কখনও ২৫ লক্ষ টাকা পাওয়া গিয়েছে। এই ভাবে ৩ কোটি টাকারও বেশি পাওনা রয়েছে কিংফিশারের কাছে। এ কারণে ২৩ মার্চ মুম্বই ছুটেছিলেন পার্থবাবু। তাঁর কথায়, “ঋণ করে ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মীদের বেতন দিয়েছি। কিন্তু, জানুয়ারির পর থেকে তা সম্ভব হয়নি। গত দু’মাস ধরে বেতন না পেয়েও কর্মীরা কাজ করে গিয়েছেন। মার্চ মাসে প্রত্যেককে ২ হাজার টাকা করে দিতে পেরেছি। গড়ে এক একজন ৬৮০০ থেকে ৭৫০০ টাকা করে বেতন পান।”
তাঁদের বন্ধ করে দেওয়া ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এপ্রিল মাসেই খুলবে এবং স্টারকে বকেয়া টাকার কিছুটা মিটিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে বলে সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট (ফিনান্স) টোরাঞ্জ ডেভার পার্থবাবুকে জানিয়েছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.