|
|
|
|
|
|
|
ভারতীয় জাদুঘরের উদ্যোগ |
চিত্রকথা |
ডমরু চরিত ও কঙ্কাবতীর লেখক ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় এক সময় হস্তকলা ও বস্ত্রশিল্পের বিপুল নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন ভারতীয় সংগ্রহশালার জন্য। তবে শুধু তিনি একাই নন, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পার্সি ব্রাউন, ই বি হ্যাভেল এঁদের অনুচিত্র সংগ্রহও যথেষ্ট মূল্যবান। ভারতীয় সংগ্রহালয়ে রয়েছে এমন বহু বিচিত্র উপাদান, যার বেশিরভাগই এত দিন সাধারণের কাছে অধরা ছিল। সংগ্রহালয়ের দ্বিশতবর্ষকে মনে রেখে নানা কাজ হচ্ছে। এর মধ্যে যেমন রয়েছে নিয়মিত বিষয়ভিত্তিক প্রদর্শনী, আলোচনা এবং বই-পুস্তিকা প্রকাশ, তেমনই ওরা উদ্যোগী চিত্র, কারু ও বস্ত্রশিল্পের বাছাই করা প্রদর্শ নিয়ে নতুন গ্যালারি তৈরিতে। শুরু হচ্ছে সংগ্রহশালা বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত পাঠ্যক্রম। থাকছে বিনিময় বা আমন্ত্রণমূলক কার্যক্রম ও ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শশালা নতুন করে শুরুর চেষ্টা। |
|
এ দিকে জার্মান গবেষক-সংগ্রাহক ভোলফ্রাম ফ্রয়ের ২০০৩ থেকে মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এমনকী সিংভূম, ঝাড়খণ্ড ঘুরে কাজ করে চলেছেন জাদুপটুয়াদের নিয়ে। ওঁর সংগ্রহে এখন পট ও জড়ানো পটের সংখ্যা সাতশোর বেশি। গবেষণার পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখিও করছেন এ নিয়ে। ক্ষয়িষ্ণু এই জনজাতীয় শিল্প ক্রমশ যেন টুরিস্ট আর্ট না হয়ে ওঠে সে আবেদন নিয়ে এ শহরে এই প্রথম বার বলবেন তিনি। সঙ্গে দেখাবেন ওঁর সংগ্রহ থেকে পটের ছবি (বাঁদিকে তারই একটি)। ইচ্ছে অচিরেই জাদুপটুয়াদের নিয়ে একটি বই প্রকাশের। ফ্রয়েরের এই অনুষ্ঠান আজ বিকেল চারটেয়, আশুতোষ শতবার্ষিকী হলে। আগামী কাল একই সময়ে থাকবে জাদুঘরের সংগ্রহ থেকে উল্লেখযোগ্য মুঘল চিত্রশিল্প নিয়ে সচিত্র আলোচনা (ডান দিকে তারই একটি)। বলবেন এই সংগ্রহশালায় গবেষণারত টেগোর ন্যাশনাল ফেলো অশোককুমার দাস। পাশাপাশি শিল্পবস্তু সংরক্ষণের প্রশ্নে আমরা এখন কোথায় দাঁড়িয়ে এ নিয়েই হবে একটি আলোচনাচক্র। ২৮-২৯ মার্চ আশুতোষ শতবার্ষিকী হলে ‘রিসেন্ট ট্রেন্ডস ইন হেরিটেজ কনজারভেশন’ শীর্ষক আলোচনায় বলবেন দিল্লির ন্যাশনাল মিউজিয়াম ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এম ভি নায়ার।
|
দুশো বছরে |
‘সেদিন পাঁচ সন্তানের মা স্যান্ডউইচ খেতে খেতে যাচ্ছিল, হঠাৎ মায়ের মাথাটা খসে গেল, হাতে স্যান্ডউইচ, কিন্তু খাবার জন্য মুখটাই নেই!’ লিখেছেন দীপেন্দু চক্রবর্তী, চার্লস ডিকেন্স-এর প্রথম উপন্যাস দ্য পিকউইক পেপাসর্ (১৮৩৭) প্রসঙ্গে। কেমন অদ্ভুত বাচনভঙ্গি দিয়ে ডিকেন্স একটি ঠগবাজ চরিত্র তৈরি করেছিলেন উপন্যাসটিতে, আলোচনা করেছেন তিনি। জন্মের দ্বিশতবার্ষিকীতে ‘চার্লস ডিকেন্স’ সংখ্যা বের করেছে এবং মুশায়েরা (সম্পা: সুবল সামন্ত), সঙ্গে ডিকেন্স-এর ছবিটিও সে-সংখ্যার প্রচ্ছদ থেকেই। ডিকেন্স-এর সৃষ্টি নিয়ে আলোচনা ছাড়াও এতে রয়েছে তাঁর জীবন ও গ্রন্থপঞ্জি, চিত্রমালা, অনূদিত রচনা, এবং তাঁকে নিয়ে বাংলায় চর্চার খতিয়ান। অন্য দিকে ওই উপন্যাসটি-সহ অলিভার টুইস্ট, নিকোলাস নিকোলবি আর আ টেল অব টু সিটিজ-এর চিত্ররূপ নিয়ে এক চলচ্চিত্রোৎসব ‘পিকচারিং ডিকেন্স’-এর আয়োজন করেছে ব্রিটিশ কাউন্সিল, নন্দন-এর সঙ্গে, ৩০-৩১ মার্চ। প্রথম দিন নন্দন-এ বিকেল ৪টেয় উদ্বোধন করবেন বিশিষ্ট অভিনেতা ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত।
|
|
স্মৃতির আদালত |
দীর্ঘ পথ পেরিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট পৌঁছল সার্ধশতবর্ষে। শুরুটা ১৮৬২-তে। ১৮৬১-তে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে গৃহীত ‘দি ইন্ডিয়ান হাইকোর্টস অ্যাক্ট’-এ বলা হল বম্বে, মাদ্রাজ ও কলকাতায় হাইকোর্ট চালুর কথা। প্রধান বিচারপতি বার্নেস পিকক আর তেরো জন বিচারপতিকে নিয়ে পরের বছর কাজ শুরু করল কলকাতা হাইকোর্ট। একমাত্র ভারতীয় ছিলেন শম্ভুনাথ পণ্ডিত। এখানেই সওয়াল করেছেন মাইকেল মধুসূদন, সুরাবর্দি, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, আশুতোষ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। দি ইন্ডিয়ান ল ইনস্টিটিউট (পশ্চিমবঙ্গ শাখা) ও কলকাতা হাইকোর্ট সার্ধশতবর্ষ উদ্যাপন কমিটির উদ্যোগে প্রকাশিত হচ্ছে দ্য হাইকোর্ট অ্যাট ক্যালকাটা/ ১৫০ ইয়ার্স: অ্যান ওভারভিউ। ৪৫টি সচিত্র লেখায় থাকবে হাইকোর্টকে ঘিরে ঐতিহাসিক কাহিনি, বহু মূল্যবান নথির প্রতিলিপি, বাড়িটির স্থাপত্য, ভূতের গল্প, স্মৃতিকথা ইত্যাদি। লিখেছেন চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, অম্লান দাশগুপ্ত প্রমুখ। ৩০ মার্চ বিকেল পাঁচটায় হাইকোর্ট সার্ধশতবর্ষ ভবন প্রেক্ষাগৃহে বইটি প্রকাশ করবেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এম এন বেঙ্কটচালিহা।
|
প্রথম কাজ |
একটি গল্প এবং তার নাট্যরূপ এই নিয়েই একটি বই। আশাপূর্ণা দেবীর গল্প ‘কী করে বুঝব’, আর তার অনমিত্র খান-কৃত একই নামের নাট্যরূপ নিয়ে বইটি প্রকাশ করেছে সপ্তর্ষি প্রকাশন। একাদশ শ্রেণির ছাত্র অনমিত্র মাত্র তিন বছর বয়সে নাট্যচর্চা শুরু করে বিডন স্ট্রিট শুভম্ নাট্যদলে। কচিকাঁচাদের নিয়ে প্রায় তিন দশক এই নাট্যদলের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন আশিস খান। তাদেরই সাম্প্রতিক নাটক ‘কী করে বুঝব’-র অভিনয় হল সম্প্রতি, মিনার্ভা থিয়েটারে। অনুষ্ঠানে বইটি প্রকাশ করলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। গল্প থেকে এই প্রথম নাট্যরূপ দিল অনমিত্র, নির্দেশক হিসেবেও এটি তার প্রথম কাজ।
|
আজও ঐতিহ্যে |
একের পরে এক শহর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে স্মৃতিমাখা ছবি-ঘরগুলি। নতুন নতুন মাল্টিপ্লেক্সে শহরের সিনেমা দেখার পরিবেশটাই বদলে গিয়েছে। তবু সেই পরিবর্তনের মাঝেও দু-একটি সিনেমাহল এখনও বজায় রেখেছে ঐতিহ্য, সঙ্গে আধুনিকতাও। যেমন, প্রাচী। সেই ১৯৪৮-এ প্রয়াত জিতেন্দ্রনাথ বসু প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হলটির। Sl বছর পরেও প্রাচী বজায় রেখেছে তার আদ্যন্ত বাংলা ভাষার ঐতিহ্য। হিন্দি ছবি এখনও দেখানো হয় না এখানে। স্তর বোঝাতে প্রথমা, শীর্ষভিত-এর মতো খটমটো নামও চলছে দিব্য। পাশাপাশি, চালু হয়েছে নিজস্ব ওয়েবসাইট, www.prachicinema.com। সেখানে অনলাইনে বুক করা যাচ্ছে টিকিটও! হলের বর্তমান কর্ণধার বিদিশা বসু বলছিলেন, “আমাদের কম্পিউটারাইজড টিকেটিং সিস্টেমটাও বাংলায়। ঐতিহ্য আর আধুনিকতা পাশাপাশি নিয়ে চলতে চাই বলেই এই উদ্যোগ।”
|
একটি গৃহের কথা |
শুধু মাথা গোঁজার জন্যই কি বাড়ি? অবসরের পর বাড়ি বানাতে গিয়ে এই কথাই ভেবেছিলেন নিঃসন্তান অধ্যাপক দম্পতি কায়কোবাদ ও মুক্তি মজুমদার। শেষমেশ তাঁরা বাড়িকে দিলেন গৃহের রূপ। সেটি নিছক আশ্রয় নয়, আনন্দ। বাংলাদেশের খুলনা জেলায় কুলতলা গ্রামে সবুজে ঘেরা তাঁদের ‘আরণ্যক’-এ সবার সমান অধিকার। এক তলা বাড়ির ঘর বোঝাই বই, বাজনা। কেউ অবাঞ্ছিত নয়। সবার জন্য দুয়ার খোলা। নাচ-গানে জমজমাট। কুশীলব গ্রামের শিশু কিশোররাই। নেই প্রতিযোগিতা, পুরস্কার, প্রতিদ্বন্দ্বিতা। সবই আনন্দের খাতিরে। ‘আরণ্যক’কে ঘিরে সুশীল সাহা তৈরি করেছেন তথ্যচিত্র ‘একটি গৃহের কথা’। ধারাভাষ্য রচনা ও পাঠে হাসান আজিজুল হক। সম্প্রতি ছবিটি দেখানো হল গোর্কি সদনে।
|
গানের ভিতরে |
জীবনের শেষ দশকে (১৯৩৫-এর ৭ জানুয়ারি) রবীন্দ্রনাথ ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশে আমার নামে অনেক প্রবাদ প্রচলিত, তারই অন্তর্গত একটি জনশ্রুতি আছে যে, আমি হিন্দুস্থানী গান জানি নে, বুঝিনে। আমার আদিযুগের রচিত গানে হিন্দুস্থানী ধ্রুবপদ্ধতির রাগরাগিণীর সাক্ষী-দল অতি বিশুদ্ধ প্রমাণ-সহ দূর ভাবীশতাব্দীর প্রত্নতাত্ত্বিকদের নিদারুণ বাদবিতণ্ডার জন্য অপেক্ষা করে আছে।’ কবির প্রথম ও শেষ জীবনে এই ভাবনাটি কী ভাবে তাঁর সঙ্গীত রচনায় স্পষ্ট হয়েছে তা নিয়ে ‘পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্র’ ও ‘সুনন্দন’ নিবেদন করছে গীতিআলেখ্য ‘ভারতীয় মার্গসংগীত ও রবীন্দ্রনাথ: কয়েকটি রাগরাগিণীর প্রেক্ষিতে’, ৩০ মার্চ জি ডি বিড়লা সভাঘরে সন্ধে ছ’টায়। থাকছেন আচার্য নীহাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় ও এণাক্ষী চট্টোপাধ্যায়। এ ছাড়াও পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্র ২৮ মার্চ সন্ধে ছ’টায় মোহরকুঞ্জে নিবেদন করছে উত্তর পূর্ব ভারতের সমৃদ্ধ লোকনৃত্য উৎসব ‘কল অব দ্য নর্থ ইস্ট’।
|
অকালে |
অকালে চলে গেলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতের প্রাক্তন অধ্যাপক নন্দিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাঁরা ছাত্রজীবনে ও শিক্ষক হিসেবে, দুই ভূমিকাতেই সমান সফল, সেই বিরল ব্যক্তিত্বদের অন্যতম ছিলেন তিনি। ছোট থেকেই মেধাবী নন্দিতা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঈশান স্কলার। মাত্র ২১ বছর বয়সে যোগ দেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার পর অবসর পর্যন্ত ওই সংস্কৃত বিভাগেই তৈরি করেছেন অগণিত ছাত্রছাত্রী। ন্যায়শাস্ত্রে তাঁর লেখা নানা বই সারা বিশ্বের বিদ্বৎসমাজে প্রশংসিত। তাঁর অনেক প্রবন্ধ ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। সংস্কৃত পুস্তক ভাণ্ডারের সৌজন্যে সেগুলি প্রকাশ করার একটি প্রয়াস শুরু হয়েছে। ন্যায়শাস্ত্রেরই কৃতী অধ্যাপক হেমন্ত গঙ্গোপাধ্যায়ের কন্যা নন্দিতার মাত্র ৬৩ বছর বয়সে এই চলে যাওয়া নিঃসন্দেহে অপূরণীয় ক্ষতি।
|
চিন্তার খোরাক |
‘অনেক শিল্পী যদি সেদিন তত্ত্ব বা নির্দেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গণনাট্য সংঘ ছেড়ে বেরিয়ে না যেতেন রবিশঙ্কর বা সলিল, শম্ভু মিত্র বা বিজন ভট্টাচার্য বা ঋত্বিক ঘটক, তাহলে অনেক মহৎ শিল্পসৃষ্টি হতে পারত না।’ লিখেছেন অশ্রুকুমার সিকদার, তাঁর দীর্ঘ রচনাটি কমিউনিস্ট সংস্কৃতির আমলাতন্ত্র নিয়ে। আর অরিন্দম চক্রবর্তী তাঁর ‘মরিবার হ’ল তার সাধ’ রচনাটিতে লিখছেন ‘যারা আত্মঘাতী তারা নিজের ইচ্ছায় স্বাধীনভাবে মরতে চায় তাই মরে। এই বহুপ্রচলিত ধারণাটিকে আমি বিবিধ বিতর্কের দ্বারা নাড়িয়ে দিতে চেয়েছি।’ অনুষ্টুপ-এর (সম্পা: অনিল আচার্য) শীত সংখ্যা-য় এ রকমই আরও কিছু প্রবন্ধে বাঙালির চিন্তার খোরাক। সঙ্গে একাধিক ক্রোড়পত্রেও জরুরি বিষয় ‘সন্ত্রাসবাদ’, ‘আবারও রবীন্দ্রনাথ’ ‘পুণে ও বাঙালি’ এবং প্রয়াত সমীর সেনগুপ্তের লেখা ‘একজন অখ্যাত বাঙালির জীবনচরিত’।
|
পুরোধা |
উনিশশো সত্তর দশকের ঘটনা। উত্তরবঙ্গের সোনালি ও রূপালি চা-বাগান লোকসানের অজুহাতে বন্ধ। বাগানের শ্রমিকদের উদ্যোগে গড়া সমবায় মাধ্যমে নতুন প্রাণসঞ্চার হল। আগেকার মালিকপক্ষ আইন-আদালত, প্রশাসন হাতিয়ার করে ঝাঁপিয়ে পড়লেন শ্রমিক-সমবায় ভাঙতে। এই সমবায় গড়তে যিনি নেপথ্যে কোমর বেঁধেছিলেন, তিনি ছিলেন এক জন কমিউনিস্ট। চা-শ্রমিকদের নিয়ে সমবায় গঠনে চিন্ময় ঘোষ ছিলেন পুরোধা। আবার ১৯৯৮-এ মালদহে ভাঙন ও বন্যায় বিধ্বস্ত বাস্তুচ্যুত মানুষদের পাশে দেখা গেল তাঁকে। এই সময় মালদহের পঞ্চানন্দপুর গ্রাম বা ভুতনির চর ছিল ওঁর ঠিকানা। আদিবাসীদের নিয়ে গবেষণাধর্মী কাজও করেছেন। ১৯৩৩-এ নড়াইলে জন্ম, প্রয়াত হন ২০০৬-এ। তাঁর কয়েকশো লেখা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ছড়িয়ে রয়েছে। তার থেকে বেশ কিছু লেখা নিয়ে প্রকাশ পেল চিন্ময় ঘোষ রচনাসংগ্রহ (সপ্তাহ পাবলিকেশনস)।
|
বাংলার মুখোশ |
‘শিল্পটা ঠিকমতো বেঁচে নাই, রূপক হয়ে গেছে।’ পুরুলিয়ার চড়িদা গ্রামের প্রবীণতম মুখোশশিল্পী নকুলচন্দ্র দত্তের খেদোক্তি। শিল্পের পরিবর্তন ঘটতেই থাকে, তার ভালমন্দ নিয়ে তর্ক চলতেই পারে। কিন্তু কোথায় দাঁড়িয়ে আছে বাংলার মুখোশ, তার হালহদিশ কোথায় মিলবে! পশ্চিমবঙ্গে মুখোশশিল্পের সব থেকে বড় কেন্দ্র চড়িদা, কিন্তু উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গ পর্যন্ত এই শিল্প-আঙ্গিকের বিস্তার, আর বিশ্ববিচারে কালের নিরিখে তো শুরু সেই প্রাগৈতিহাসিকে! ঝাড়খণ্ডের সেরাইকেলা থেকে আজকের বঙ্গ-ভূখণ্ডে ছো এল, নাচ থেকে এল মুখোশ। আবার উত্তরবঙ্গে গম্ভীরা নাচের মুখোশ, পুজোর মুখোশ। কাঠ-শোলা-মাটি-কাপড়-কাগজ-ধাতু, কত না মাধ্যম। বাংলার কোথায় কেমন মুখোশ হত বা হয়, এই শিল্পের কৃৎকৌশল, শিল্পীরাই বা কেমন আছেন, নানা প্রান্তের সংগ্রহশালায় কতটুকু ধরে রাখা গিয়েছে এই শিল্পনিদর্শন, খুঁজে খুঁজে সেই সব তথ্যই দীর্ঘ দিন ধরে সংগ্রহ করেছেন দীপঙ্কর ঘোষ। এ বার প্রকাশ পেল তাঁর বাংলার মুখোশ (আনন্দ, ৩০০.০০)। বহু দুর্লভ মুখোশের রঙিন ছবি এই বইয়ের সম্পদ।
|
সহজিয়া |
বাংলার বাউল গানের ভাণ্ডারকে আন্তর্জাতিক স্তরে যে ক’জন নিয়ে গেছেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পবন দাস বাউল। জন্ম মুর্শিদাবাদের মহম্মদপুরে। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে যে-গান গাওয়া শুরু হয়, আশির দশকে তা ছড়িয়ে যায় ইয়োরোপ থেকে বিশ্বের অন্যত্র। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পীদের সঙ্গে ওঁর গানের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রকাশ ঘটে এক নতুন ঘরানার ফোক-ফিউশন। প্রকাশিত হয় ‘রিয়াল সুগার’, ‘ইনার নলেজ’, টানাটানি-র মতো অসাধারণ গানের অ্যালবাম। ওঁর জীবন আর বাংলার বাউল গান নিয়ে একটি তথ্যচিত্র Le Chants Des Fou (সঙ্গস অব দ্য ম্যাড পিপল) নির্মাণ করে ওঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে ফরাসি সরকার। পবন বেশির ভাগ সময়ই ফ্রান্সে কাটান, তবে নিয়ম করে আসেন কেঁদুলির মেলায়। এ বছর তিনি হাজির ছিলেন সহজিয়া ফাউন্ডেশন আয়োজিত সহজিয়া উৎসবে। ছিলেন সহজিয়া গানের দল নিয়ে দেব চৌধুরি। |
|
|
|
স্ব-তন্ত্র |
এক কথায় বলতে গেলে আমার কোনো আদর্শ নেই, আমি সমস্ত আদর্শ থেকেই দূরে থাকার চেষ্টা করি। ধর্মও তাই কোনও ধর্মের কাছাকাছিও যেতে চাই না।... আমি অলৌকিকত্বে মাঝে মাঝেই বিশ্বাস করি। একটি আধুনিকতম ল্যাপটপ অলৌকিক। যে সাধু আসন থেকে অনেক কসরত করে আধ ইঞ্চি শূন্যে উঠতে পারেন সেটি আমার কাছে লৌকিক বলেই মনে হয়।’ ২০০৬ সালে লিখেছিলেন হিমানীশ গোস্বামী, তখন তিনি আশি। তাঁর যাবতীয় লেখালিখিতে এবং দৈনন্দিন আলাপে এই নির্মোহ, যুক্তিবাদী, স্বচ্ছদৃষ্টি মানুষটিকে খুঁজে পাওয়া যেত। নিজেকে তিনি স্বভাবসিদ্ধ কৌতুকের ছলে তুলনা করেছিলেন ‘ঝরাপাতা’র সঙ্গে, যে ঝরাপাতা ‘একা, বড়োই একা...’। হিমানীশদা আট থেকে আশি, সকলের হিমানীশদা জাগতিক অর্থে একা ছিলেন না মোটেও, তাঁর বন্ধুত্বের খ্যাতি লন্ডন তক বিস্তৃত বন্ধুর সঙ্গী হয়েই সেখানে চলে গিয়েছিলেন তরুণ বয়সে। হিমানীশদা একা, কারণ তিনি নিজের মতো, কোনও দল বা মত তাঁকে কব্জা করতে পারেনি কোনও দিন। এমন স্ব-তন্ত্র মানুষরা অনেক সময়েই খুব তীব্র, তিক্ত, বিশ্বনিন্দুক গোছের হয়ে থাকেন। হিমানীশ গোস্বামীর সে বালাই ছিল না, কারণ তিনি ছিলেন আদ্যোপান্ত কৌতুকে টইটম্বুর, যে কৌতুক দুনিয়ার সব কিছু নিয়ে সতত উৎসারিত। নিজেকে নিয়েও। পক্ষকাল আগে মানুষটি বিদায় নিলেন, পৃথিবী কিঞ্চিৎ বিষণ্ণ হল। তবে, হিমানীশদার অফুরান গল্পের ঝাঁপি খুলে দু’চারখানা শুনলে আর শোনালেই সে বিষাদ ভ্যানিশ করে যাবে। যাবেই। |
|
|
|
|
|
|
|