অনিয়ম হয়েছিল সংখ্যালঘু নিগমে, দাবি তদন্ত রিপোর্টে
রকার পরিবর্তনের পরেই সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে। তার সত্যতা যাচাই করতে প্রথমে ‘অভ্যন্তরীণ অডিট’ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা। পরে সচিব পর্যায়ের তদন্ত কমিটিও গড়া হয়। দু’টি রিপোর্টই জানিয়েছে, বাম জমানায় রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের একাধিক কাজ নিয়ম মেনে হয়নি।
রিপোর্টে উল্লেখ না থাকলেও যে সময় কালের অভিযোগ নিয়ে তদন্তটি হয়েছে, তখন নিগমের চেয়ারম্যান ছিলেন সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম। তাঁর অবশ্য সাফ জবাব, “কোথাও অনিয়ম হয়নি। যা করা হয়েছে, তাতে সংখ্যালঘু মানুষ ও নিগমের লাভই হয়েছে।” রাজ্যের সংখ্যালঘু মানুষদের স্বনির্ভর প্রকল্পের জন্য ঋণ এবং সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি দেওয়াই মূলত নিগমের কাজ। এ জন্য রাজ্যকে স্বল্প সুদে বিপুল পরিমাণ ঋণ দেয় কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা। বাকি টাকা দেয় রাজ্য।
তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান রাজ্যের শিল্প পুনর্গঠন সচিব সুব্রত গুপ্ত রিপোর্ট নিয়ে কোনও মন্তব্য না করে শুধু বলেছেন, “মুখ্যসচিবের কাছে রিপোর্ট দিয়েছি। যা বলার তিনি বলবেন।” মুখ্যসচিব সমর ঘোষ বলেন, “আগে অর্থ দফতরের অভ্যন্তরীণ অডিট শাখার অনুসন্ধানে নিগমের কাজে অনিয়ম ধরা পড়েছিল। তার জন্য দায়ী কারা, তা চিহ্নিত করতে তদন্ত কমিটি গড়া হয়। কমিটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে। রিপোর্ট খতিয়ে দেখে সরকার পরবর্তী পদক্ষেপ করবে।”
প্রাথমিক ভাবে অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখে নিগমের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর মূলত বেসরকারি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েই প্রশ্ন তোলে। ২০০৮-০৯-এর অর্থবর্ষে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি আর্থিক সংস্থার মিউচুয়াল ফান্ডে নিগম রেখেছে ৯৫ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। পরের বছরে ১২৯ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে কয়েকটি বেসরকারি ব্যাঙ্কও রয়েছে। অভিযোগ, এখানে টাকা রাখায় নিগম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেমন, ২০০৮-০৯-এ সরকারি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের স্থায়ী আমানতে ওই অর্থ রাখলে ৮% হারে সুদ পাওয়া যেত ৭ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা। কিন্তু বেসরকারি মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা রাখায় সুদ পাওয়া গিয়েছে ৪ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা।
যাবতীয় অভিযোগ ও প্রশ্নের তদন্ত করে কমিটি মন্তব্য করেছে, অনিয়মের জন্য নিগমের তৎকালীন ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং চিফ অ্যাকাউন্টস অফিসার দায় এড়াতে পারেন না। বলা হয়েছে, নিগম প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল মিউচ্যুয়াল ফান্ডে। এতে পরিচালন পর্ষদের সায় থাকলেও যে পদ্ধতিতে লগ্নি করা হয়েছে, তা বিতর্কিত। উপরন্তু, বিনিয়োগের ৮০% করা হয়েছিল নিগমেরই এক পদস্থ কর্তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের মাধ্যমে।
নিগমের বিরুদ্ধে আরও যে অভিযোগগুলি উঠেছে, তা হল ১) অফিস-ভবন ও সংখ্যালঘু মানুষের আবাসন নির্মাণের বরাত দেওয়ার সময় টেন্ডার-সহ যে-সব পদ্ধতি মানা উচিত ছিল, কর্তৃপক্ষ অনেক ক্ষেত্রেই তা মানেননি। চালু সরকারি বিধিগুলিও লঙ্ঘন করা হয়েছে। ২) আবাসন বিলি করার জন্য নিগম প্রথমে যে নীতি নিয়েছিল, পরে নিজেরাই তার পরিবর্তন করে। অন্তত, ১৫ থেকে ২০টি আবাসন বিলির ক্ষেত্রে ওই অনিয়ম হয়েছে। নিয়ম ভেঙে ফ্ল্যাট বরাদ্দ হয়েছে নিগমের এক কর্তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের নামেও। ৩) এ ছাড়া অন্তত ১৫ জন ঠিকাকর্মীর জন্য পদ তৈরি করে তাঁদের স্থায়ী করা হয়েছে।
১৯৯৬-এর সেপ্টেম্বর থেকে ২০১১-র ১৬ মে পর্যন্ত পাঁচ দফায় মোট ১৫ বছর নিগমের চেয়ারম্যানের ছিলেন সেলিম। তদন্ত রিপোর্টে যদিও সরাসরি তাঁকে দায়ী করা হয়নি, তবু অভিযোগগুলি তাঁরই আমলের। সেলিম বলেন, “রিপোর্ট আমি দেখিনি। তাই এই নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। তবে সব গুরুত্বপূর্ণ কাজই পরিচালন পর্ষদের অনুমোদন এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরগুলির অনুমতি নিয়ে করা হয়েছে। অডিট যখন যে প্রশ্ন তুলেছে, তার উত্তর দেওয়া হয়েছে।” সেলিমের পাল্টা অভিযোগ, “এ সবই করা হচ্ছে পুরনো পরিচালন পর্ষদ এবং আমাকে হেয় করার জন্য। ক্ষমতায় এসে মমতা বলেছিলেন, নিগমের টাকা শেয়ার বাজারে খাটানো হয়েছে। স্বজনপোষণ হয়েছে। কিন্তু, একটি অভিযোগও প্রমাণ হয়নি। আমি এখনও বলছি, প্রতিটি অভিযোগ ভিত্তিহীন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.