ইতালীয়রা মুক্ত কি, জল্পনা তুঙ্গে
ওড়িশায় এ বার অপহৃত বিধায়ক
মাওবাদীরা এ বার অপহরণ করল ওড়িশার এক আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত বিধায়ককে, যার জেরে মাওবাদীদের সঙ্গে মধ্যস্থতাকারীদের শান্তি আলোচনা এক রকম ভেস্তেই গেল। এই পরিস্থিতিতে যখন ১১ দিন আগে অপহৃত দুই ইতালীয়ের মুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল, তখনই শনিবার গভীর রাতে ওড়িশার স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তরফে দাবি করা হল, মাওবাদীরা মুক্তি দিয়েছে তাঁদের। যদিও রাজ্য প্রশাসনের তরফে এই ‘মুক্তি’র খবর মানতে চাওয়া হয়নি। দু’জনকে ‘চোখে না দেখা পর্যন্ত’ এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কোনও কথা বলতেই রাজি নয় স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন। রাতে কন্ধমালের পুলিশ সুপার জয় নারায়ণ পঙ্কজ জানান, এ ধরনের একটা কথা শোনা গেলেও তিনি নিশ্চিত নন।
ঝিনা হিকাকা
শুক্রবার রাত একটা নাগাদ কোরাপুট জেলায় লক্ষ্মীপুরের বিজেডি বিধায়ক ঝিনা হিকাকাকে অপহরণ করে মাওবাদীরা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তোয়াপুটের কাছে রাস্তা খোঁড়া দেখে থমকে দাঁড়ায় ঝিনার গাড়ি। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি ঘিরে ধরে ৫০ জন সশস্ত্র মাওবাদীর একটি দল। সকলকেই গাড়ি থেকে নেমে আসতে বলে মাওবাদীরা। মোবাইল কেড়ে নিয়ে ঝিনার গাড়ির চালক ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীদের ছেড়ে দেয় তারা। মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ঝিনাকে নিয়ে যাওয়া হয় জঙ্গলের ভিতরে।
আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত এই বিধায়ক অপহৃত হওয়ার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে যান মুখ্যমন্ত্রী বিজু পট্টনায়ক। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের রাজস্ব ও বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রী এস এন পাত্র এবং আদিবাসী উন্নয়ন মন্ত্রী লালবিহারী হিমিরিকা। বিষয়টি নিয়ে আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের সঙ্গে কথা বলেছেন নবীন। চিদম্বরম তাঁকে কেন্দ্রীয় সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছেন। তবে এই মুহূর্তে তার প্রয়োজন নেই বলে জানান নবীন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, দু’দিন আগেই গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওড়িশা সরকারকে সতর্ক করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এ বার কোনও রাজনীতিককে নিশানা করতে পারে মাওবাদীরা। তেমনটাই ঘটেছে। রাজ্যের গোয়েন্দাদের দাবি, অন্ধ্র-ওড়িশা সীমানায় মাওবাদীদের বিশেষ জোনাল কমিটির সদস্যরাই বিধায়ককে অপহরণ করেছে। কোরাপুট জেলায় এই কমিটির নেতৃত্বে
রয়েছে রামকৃষ্ণন ও দয়া। কিন্তু ইতালীয়দের অপহরণের নেতা সব্যসাচী পণ্ডার সঙ্গে এই দুই নেতার সম্পর্ক মোটেই ভাল নয়। জেলার পুলিশ সুপার অবিনাশ কুমার জানিয়েছেন, “অপহরণকারীরা মাওবাদীদের কোন গোষ্ঠীর এবং ঠিক কী দাবিতে অপহরণ করেছে, তা স্পষ্ট নয়।” ঘটনাস্থলে অপহরণকারীরা যে পোস্টার রেখে গিয়েছে, তাতে ‘অপারেশন গ্রিন হান্ট’ অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে।
ইতালীয়দের অপহরণের পর মাওবাদী নেতা সব্যসাচী পণ্ডা যুদ্ধবিরতির আশ্বাস দিলেও বৃহস্পতিবার মালকানগিরি জেলায় বাজার করতে গিয়ে মাওবাদীদের গুলিতে মারা যান এক সাব-ইন্সপেক্টর। তা সত্ত্বেও গত কাল সন্ধ্যায় মাওবাদীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন তাদের পছন্দের মধ্যস্থতাকারী প্রাক্তন কূটনীতিক তথা মানবাধিকার কর্মী বি ডি শর্মা এবং দণ্ডপাণি মহান্তি। কিন্তু বিধায়ক অপহরণের ঘটনার পর মাওবাদীদের সঙ্গে আর কথা বলতে রাজি নন মধ্যস্থতাকারীরা। দুই ইতালীয় এবং বিজেডি বিধায়ককে মানবিকতার খাতিরে মুক্তি দেওয়ার জন্য আজ এক সাংবাদিক বৈঠকে তাঁরা মাওবাদীদের কাছে আবেদন করেছেন।
বিধায়ক অপহরণের ঘটনায় তুমুল হই-হট্টগোল বেধে যায় বিধানসভাতেও। সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন বিজেপি ও কংগ্রেসের বিধায়করা। তাঁরা সমস্বরে বলেন, এই সরকারের আমলে রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে। এক সময়ে সরকার-বিরোধী স্লোগান দিতে দিতে ওয়েলের দিকে ধেয়ে যান তাঁরা। কয়েক জন বিধায়ক অধ্যক্ষের পোডিয়ামে উঠে পড়ার চেষ্টাও করেন। পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে সাড়ে বারোটার সময় সভা মুলতুবি করে দেওয়া হয়। পরে বিরোধী দলনেতা ভূপেন্দ্র সিংহ বলেন, “মাওবাদীদের ব্যাপারে রাজ্য সরকার হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে।” সম্প্রতি পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোরাপুট জেলায় বিজেডি প্রার্থীদের মাওবাদীরা সমর্থন করেছে বলেও অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.