বহরমপুরের বাজার যেন জতুগৃহ
লকাতার স্টিফেন কোর্ট থেকে আমরি কাণ্ড। ফের গত বৃহস্পতিবারের অগ্নিকাণ্ডে হাতিবাগান মার্কেট ভস্মীভূত হয়ে যাওয়ার ঘটনা। তার পরও হুঁশ ফেরেনি বহরমপুরের। শহরের প্রাণকেন্দ্র মোহনা বাস টার্মিনাস লাগোয়া চত্বরের চারটে মার্কেট কমপ্লেক্স, কাদাই মোড়ের শপিং প্লাজা, নতুনবাজারের ওষুধ কেনাবেচার মার্কেট-সহ সব ক’টি ব্যবসাকেন্দ্র যেন বসে রয়েছে আগ্নেয়গিরির উপর। বহরমপুর মহকুমাশাসক অধীর বিশ্বাস নিজেই বলেন, “বহরমপুরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা ঠিকঠাক নেই। আমরি কাণ্ডের পরে বহরমপুর শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আগুন নেভানোর জন্য বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা মজুত রাখতে বলে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল। তার পরও অবস্থার বিশেষ পরির্বতন হয়নি। কয়েক দিনের মধ্যেই পুরসভার সঙ্গে যৌথ ভাবে ওই বিষয়ে অভিযান চালানো হবে।”
বহরমপুর পুরসভা কিন্তু অন্য কথা বলছে। পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য বলেন, “বহু পুরনো শহর। রাস্তাঘাটও সংকীর্ণ। ফলে ২০-২৫ বছর আগের তৈরি বাজার ও বাড়িতে আগুন নেভানোর অত্যাধুনিক ব্যবস্থার সবটা লাগু করা সম্ভব হয়নি ঠিকই, কিন্তু বর্তমানে যে সব বহুতল বাড়ি ও বাজার তৈরি হয়েছে ও হচ্ছে তার সবগুলিতেই আগুন নেভানোর সব রকম ব্যবস্থা রয়েছে। বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রে দমকলের ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক। ওই ছাড়পত্র না থাকলে পুরসভাও অনুমতি দেবে না।” বাস্তব কিন্তু অন্য কথা বলছে।
চেম্বার অব কমার্সের মুর্শিদাবাদ জেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক প্রদ্যুৎ দে বলেন, “বহরমপুর শহরে জীবন বিমা নিগমের জেলা কার্যালয় লাগোয়া পেট্রোল পাম্প ও কিছুটা দূরে রানিবাগান মোড়ে রয়েছে আরও একটি পেট্রোল পাম্প। ওই চত্বর জুড়ে রয়েছে অনেকগুলি বহুতল আবাসন ও নার্সিংহোম। কিছুটা দূরেই ‘মোহনা’র উপরে রয়েছে বহুতল মার্কেট কমপ্লেক্স। তার পাশেই রয়েছে আরও তিনটি মার্কেট কমপ্লেক্স। সব মিলিয়ে বহরমপুরের প্রাণকেন্দ্র জুড়ে বিশাল ওই এলাকাটি জতুগৃহের আকার নিয়েছে।”
‘মোহনা’ ও ‘ইন্দিরা সুপার মার্কেট’ দু’টির মালিক পুরসভা। পাশের নেতাজি মার্কেট কমপ্লেক্সটি রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প নিগমের। ইন্দিরা সুপার মার্কেট কমপ্লেক্সের মালিক হকার সমবায় সমিতি। পুরসভা মালিক হলেও ‘ইন্দিরা সুপার মার্কেট’ পরিচালনা করে ওই বাজার কমিটি। তার সভাপতি গৌরচন্দ্র বসাক বলেন, “১৭৪টি দোকানঘর নিয়ে একতলা মার্কেট কমপ্লেক্সটি যেন জতুগৃহ। পুরসভার কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে ১৯৮৯ সাল থেকে আমরা ব্যবসা করছি। কিন্তু বিগত ৭ বছর ধরে জল ও বিদ্যুৎ সরবরাহের শর্ত লঙ্ঘন করছে পুরসভা। যেখানে সেখানে বিদ্যুতের তার ঝুলছে, প্যাসেজ অন্ধকার। কয়েক বছর ধরে লিখিত আবেদন করা সত্ত্বেও পুরসভার হুঁশ ফেরেনি।” আবার একই সুরে বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যসোসিয়েশানের অন্যতম কর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, “বহরমপুরের ওষুধ মার্কেটের জায়গাটা এতটাই অপরিসর যে, দমকলের গাড়িই ঢুকতে পারবে না। তাই স্থানান্তরের জন্য আমরা সুবিধাজনক এলাকায় জায়গা খুঁজছি।”
ওই সঙ্গীন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মতো লোকবলই নেই বহরমপুরের দমকল বাহিনীর। ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ে কান্দিতে ও ধুলিয়ানে এবং পূর্বপাড়ে কেবল বহরমপুরে রয়েছে দমকল কেন্দ্র। সব মিলিয়ে মুর্শিদাবাদে রয়েছে মাত্র ৩টি দমকল কেন্দ্র। লালবাগ ও ডোমকলে আরও দু’টি দমকল কেন্দ্র করার প্রস্তাব দীর্ঘ দিন ধরে ঝুলে রয়েছে। ফলে বহরমপুর কেন্দ্র থেকে ওই দু’টি মহকুমার আগুন নেভানোর কাজ করা হয়। অথচ সেই বহরমপুরের দমকল বাহিনী প্রয়োজনীয় কর্মীর অভাবে ধুঁকছে। এখানে ৪টি গাড়ি থাকলেও কর্মীর অভাবে মাত্র দু’টি গাড়ি এক সঙ্গে কাজে লাগানো যায়। দু’টি গাড়ির জন্যও প্রয়োজনীয় কর্মীর অভাব রয়েছে। ৩৬ জন অপারেটরের বদলে রয়েছে ৩১ জন। দরকার ৯ জন চালক। রয়েছেন ৮ জন। ৯ জন লিডারের জায়গায় রয়েছেন মাত্র ৬ জন। নদিয়া, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমের দায়িত্বপ্রাপ্ত দমকলের ডেপুটি ডিরেক্টর গৌরপ্রসাদ ঘোষ বলেন, “জায়গার অভাবে লালবাগ ও ডোমকলের দমকল কেন্দ্র দু’টি এখনও করা যায়নি। প্রয়োজনের তুলনায় কম কর্মী দিয়ে কাজ কেবল বহরমপুর নয়, রাজ্যের প্রায় সব দমকল কেন্দ্রেই করতে হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.