ফ্যাশনের টিন তিরেক্কে নয়
পৃথিবী থাকবে পায়ের তলায়, আমি হব রণবীর কপূর। হিটলারের মতো সবাই সেলাম ঠুকবে আমাকে, আমি যা বলব সেটাই ঠিক। আশেপাশের লোকজন, গুরুজন শুধু বাজে বকে যায় সারা দিন। এই জাঁহাপনা, খাঞ্জা খাঁ-দের ফ্যাশন সাজগোজ নিয়ে আলোচনা করা যাক।
এই দুরন্ত ‘হেপ’রা কী কী করবে আর কী কী করবে না, তার একটা তালিকা ঠিক করা হয়েছে।

প্রথমত, এই বয়সে অন্ধের মতো কোনও একটি বিশেষ ধারাকে মেনে কখনওই নিজের ফ্যাশনের মাপকাঠি ঠিক করা উচিত নয়। একটি বিশেষ ট্রেন্ড মেনে চলার জন্য সারা জীবন পড়ে আছে। যেটা তোমায় মানায় সেটাই করা উচিত। তোমার নিজস্ব চেহারার গঠন, আকৃতি সম্বন্ধে নিশ্চয়ই একটা পরিষ্কার ধারণা আছে। সেটিকে সব থেকে আগে মাথায় রাখবে। দেখবে, বাকি জিনিসগুলো বাছতে সময় লাগছে না। কলেজের ছেলেরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জিনস আর টি শার্ট বেশি পছন্দ করে। এক জন কলেজপড়ুয়া ছেলের জন্য এটাই শ্রেষ্ঠ আউটফিট। কিন্তু অনেক সময় একই পোশাকে বড্ড একঘেয়ে লাগে।

একঘেয়েমি কাটানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের হেয়ারস্টাইলকে মাথায় রেখে নিঃসন্দেহে পরীক্ষানিরীক্ষা চালাতে পারো। এতে কিছুটা বৈচিত্র্য আসবে। যাদের একটু লম্বা চুল আছে, তাদের সেটির ঠিকঠাক যত্ন করতে হবে। শুষ্ক ও প্রাণহীন চুল অগোছালো এবং বাজে দেখতে লাগে। মনে হয় এ এমন এক জন মানুষ, যে খুব নির্ভরযোগ্য নয়। যাদের হালকা দাড়ি থাকে (এক দিন আগের), তারা ‘লুক’ পরিবর্তনে এটির সাহায্য নিতে পারে। যাদের চোয়াল রেখা খুব স্পষ্ট, তাদের এটি খুব ভাল মানায় এবং তারা এই ধরনের ‘লুক’ দিয়ে অনায়াসেই একটি ট্রেন্ড সেট করে দিতে পারে। সাধারণ ভাবে ছেলেদের মেক-আপের খুব একটা সুযোগ থাকে না। সেই কারণে যারা স্টাইল-সচেতন, তারা বিভিন্ন রকম পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। যাদের মুখ গোলাকৃতি, তাদের বেশি দাড়ি না রাখাই ভাল। হালকা এক দিনের দাড়িতে তাদের মুখ একটু ছোট মনে হয়। এই বয়সে প্রতি দিন শেভ করা ঠিক নয়। হালকা ট্রিম করে নিও। যদি একটু বেশি সাহসী হতে চাও, সাইড-এর জুলপি নিয়ে কিছু নতুন ধরনের চেষ্টা করতে পারো। এখন এটি খুব ফ্যাশনের মধ্যে আছে এবং ঠিক মতো করতে পারলে মুখের আকৃতি ঠিক ভাবে পরিস্ফুট হয়।

চুলের বিভিন্ন স্টাইলের সঙ্গে সাজগোজের একটি ঘনিষ্ঠ যোগ আছে। ছেলেরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মেক-আপ করতে পারে না (বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া)। সুতরাং চুলের কাট-এর ওপর নজর দেওয়া উচিত। যদি খুব ঘন চুল হয়, তবে একটু লম্বা চুল রাখলেই ভাল। চুল পাতলা হলে লম্বা চুল মানানসই হবে না, সে ক্ষেত্রে ছোট ছিমছাম হেয়ারকাট মানানসই হবে। চুলে কালার করা এখন খুব একটা ইন-ফ্যাশন নয়। আর এই বয়সে কালারিংয়ের পরামর্শ একদমই দেওয়া যাবে না। সাধারণ চুলের রংই ভাল লাগে। যদি চুলে কোনও হেয়ারস্টাইল-এর জন্য কিছু ব্যবহার করো, তবে অবশ্যই রাতে শোওয়ার আগে শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে। কিন্তু প্রতি দিন কোনও স্টাইলিং প্রোডাক্ট ব্যবহার কোরো না।

ছেলেদের সাজের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ‘পিয়ার্সিং’। এখনকার স্টাইল-এর সঙ্গে এটি ভীষণ ভাবে জড়িত। একটু স্টাইল-সচেতন লোকজন প্রায় সবাই সর্বাঙ্গ ছেদন করিয়ে ফেলছে। কান, ভুরু, চোখের ধারে, গলায়, জিভে প্রায় সর্বত্র। কিন্তু এখানে একটা কথা অবশ্যই বলব, তোমরা শরীর এবং ত্বকের যন্ত্রণা সহ্য করে যখন এটি করাচ্ছ, সে ক্ষেত্রে খাঁটি কিছু পরার চেষ্টা করো। কারণ নকল থেকে অনেক রকম ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।

ট্যাটু’র দিকে এখন সবাই ঝুঁকছে। ট্যাটু’র ব্যাপারটা যেন ছেলেদের জন্যই বরাদ্দ। হাতের বিভিন্ন জায়গায়, গলায়, কবজিতে, গলার টুঁটি, অর্থাৎ অ্যাডামস্ অ্যাপল-এর নীচে সর্বত্র ট্যাটু হচ্ছে। বিভিন্ন রঙের বা শুধু কালো সবই ভাল।

কিছু হালকা জুয়েলারি ব্যবহার করতে পারো, যেমন বিভিন্ন ধরনের রুপোর কড়া (হাতের বালা), ব্রেসলেট, হেভিলি ডেকরেটেড ঘড়ি (চাঙ্কি ওয়াচ), সানগ্লাস পরে দেখতে পারো মুখের শেপ অনুযায়ী। মুখ যদি চওড়া হয়, বড় ফ্রেম-এর সানগ্লাস পরলে ভাল লাগবে। ছোট আকৃতির মুখে বড় ফ্রেম লাগালে কিন্তু মুখ ঢেকে যাবে।

শেষে আমি বলব, এখন ছেলেদের পাশ্চাত্য পোশাকের দিকে ঝোঁক বেশি। কিন্তু প্রাচ্যের পোশাককে বাদ দিলে চলবে না। যে কোনও অনুষ্ঠানে ধুতি-পাঞ্জাবি বা কুর্তা-পাজামা সবচেয়ে নজর কাড়ে।
ফ্যাশন, নিজস্ব স্টাইল, ব্যক্তিত্ব ও চেহারা এই সব কিছুর মেলবন্ধনে গড়ে উঠবে তোমার নিজস্ব ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’।

শুরু হওয়ার আগে থেকেই হরমোনের বিভিন্ন পরিবর্তন হয়। তারই সঙ্গে বহু ধরনের মানসিক দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে যায় এই বয়সের ছেলেরা। ছেলেদের ক্ষেত্রে আগ্রাসী মনোভাবটা বেশি প্রকাশ পায়। আয়নার সামনে বেশি ক্ষণ চুল আঁচড়াচ্ছে, মা বকল, অমনি তখনই চুলগুলোকে অদ্ভুত ভাবে দাঁড় করিয়ে দেবে। অথবা বিকেলের মধ্যে চুল সবুজ করে ফেলবে। সুতরাং, মা-বাবাকে বুঝে শুনে কথা বলতে হবে। আর একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এই বয়সের ছেলেরা মেয়েদের বন্ধুত্ব পাওয়ার জন্য পাগল হয়ে ওঠে। ইচ্ছে থাকে, সে-ই হবে ক্লাসের সমস্ত মেয়ের একমাত্র আকর্ষণ। এই ভাল লাগার সম্মতি পেতে তারা মরিয়া হয়ে ওঠে। এই কারণটি তাদের ফ্যাশনের মধ্যেও প্রতিফলিত হয়। অর্থাৎ, সে যাতে একটি দল বা গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, তার চেষ্টা করে। সাজগোজও সেই রকমই হয়। এ ছাড়া যে ধরনের গান শোনে এবং যে নায়ককে সব থেকে বেশি পছন্দ করে, তার মতো ফ্যাশন করার চেষ্টা করে। প্রধান লক্ষ্য থাকে, একটি মেয়েকে কবে বাইকের পেছনে বসিয়ে ঘোরাব? তার সমস্ত ক্লাস নোট আমিই তৈরি করে দেব, জন্মদিনে একমাত্র আমিই নিমন্ত্রিত থাকব, এ রকম কত কী! সেই হিসেবেই ফ্যাশন স্টেটমেন্ট তৈরি করতে পছন্দ করে।

সাক্ষাৎকার: কস্তুরী মুখোপাধ্যায় ভারভাদা
ছবি: আশিস সাহা
মডেল: সোহম জর্জ সেনগুপ্ত



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.