শহর-শহরতলির নার্সিংহোম
বেড়েছে শুধুই অগ্নি-নির্বাপক সিলিন্ডার, বাকি যে-কে-সেই
মরি-র পরেও টনক নড়েনি। স্বাস্থ্য দফতর ও দমকলের যৌথ পরিদর্শনের পর যে সব নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তার বেশিরভাগই মানেনি মেদিনীপুর-খড়্গপুর শহর ও শহরতলির অধিকাংশ নার্সিংহোম। রবীন্দ্রনগরের বেসরকারি হাসপাতালে বুধবারের অগ্নিকাণ্ডের পর আরও বেশি করেই আতঙ্কিত রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা।
মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শহরের বেশ কয়েকটি নার্সিংহোম পরিদর্শনে গিয়ে আলাদা জায়গায় রান্নাঘর তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল পরিদর্শক-দল। দোতলা-তেতলা থেকে নামার জন্য বিকল্প সিঁড়ি তৈরির কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু, কোথায় কী! দুই শহর ও শহরতলির নার্সিংহোমগুলি শুধু ফায়ার এক্সটিংগুইশার সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়িয়েই দায় সেরেছে। ব্যাপারটা মানছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতরও। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্রের বক্তব্য, “নার্সিংহোমগুলি কী কী করেছে, তা খতিয়ে দেখতে ফের পরিদর্শন হবে।”
সরকারি চিকিৎসা পরিবেষায় ‘ভরসা’ রাখতে না পেরেই একাংশ সাধারণ মানুষ বেসরকারি চিকিৎসা পরিষেবার দিকে ঝুঁকেছেন। এই সুযোগে জেলার যত্রতত্র নার্সিংহোম গড়ে উঠেছে। এমন জায়গায় নার্সিংহোম তৈরি হয়েছে, যেখানে সহজে বড় গাড়ি ঢুকতে-বেরোতেই পারে না। দমকলের ইঞ্জিন ঢোকার ক্ষেত্রেও সমস্যা। মেদিনীপুর-খড়্গপুরের মতো শহরের ঘিঞ্জি এলাকায় নার্সিংহোম গজিয়ে উঠেছে। পুরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স আর স্বাস্থ্য দফতরের সার্টিফিকেট জোগাড় করেই ‘ব্যবসা’ চালাচ্ছেন একাংশ নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। পরিষেবা বা সুরক্ষার প্রশ্ন সেখানে গৌন। আমরি-র পর স্বাস্থ্য দফতর ও দমকলের পরিদর্শনের পরেও অবস্থার তেমন হেরফের হয়নি। নার্সিংহোমগুলির কর্তৃপক্ষের অবশ্য বক্তব্য, পরিদর্শক-দলের সব সুপারিশ মানতে আরও সময় দরকার।
বুধবার রবীন্দ্রনগরের যে বেসরকারি হাসপাতালে আগুন লেগেছিল, তার অদূরেই রয়েছে আরও কয়েকটি নার্সিংহোম। সেগুলির একটি ২০ শয্যা-বিশিষ্ট। আগে সেখানে ৪টি ফায়ার এক্সটিংগুইশার সিলিন্ডার ছিল। এখন রয়েছে ৬টি। এই নার্সিংহোমটির এক-তলাতেই রয়েছে রান্নাঘর। পরিদর্শক-দল নির্দেশ দিয়েছিল, দ্রুত অন্যত্র রান্নাঘর সরাতে হবে। সেই নির্দেশ এখনও মানা হয়নি। সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমটির কর্তা দেবলরঞ্জন দত্ত বলেন, “পরিদর্শক-দল যা বলেছে, তাই করা হবে। কিছুটা সময় দরকার।” ওই এলাকারই আরেকটি নার্সিংহোমে আগে ২টি ফায়ার এক্সটিংগুইশার সিলিন্ডার থাকত। এখন ৫টি সিলিন্ডারের ব্যবস্থা হয়েছে। এই নার্সিংহোমটিও ২০ শয্যার। সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমের কর্তা গুরুচরণ রায় নিজেই জানান, “পরিদর্শক-দল একটি জলাধার তৈরির কথা বলেছে। এখনও না হলেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শহরের রাজাবাজার এলাকায় একটি নার্সিংহোম রয়েছে। সেখানেও আগে ২টি ফায়ার এক্সটিংগুইশার সিলিন্ডার থাকত। এখন ৫টি সিলিন্ডার হয়েছে। সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমের কর্তা দেবব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অন্য জায়গায় রান্নাঘর তৈরির কথা বলা হয়েছে। সে জন্য আরও কিছু সময় লাগবে।”
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরে নার্সিংহোম ও বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে প্রায় ১৩০টি। এর মধ্যে মেদিনীপুর মহকুমায় রয়েছে ২৪টি, খড়্গপুরে ৫৩টি, ঝাড়গ্রামে ১০টি এবং ঘাটালে প্রায় ৪০টি। ঘিঞ্জি এলাকাতেও বহু নার্সিংহোম গড়ে উঠেছে। যেমন, ঘাটালের কুশপাতা এলাকায় ২৫টিরও বেশি নার্সিংহোম রয়েছে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে। মেদিনীপুরের রবীন্দ্রনগর ও লাগোয়া কেরানিতলা এলাকায় ১৩টি নার্সিংহোম এবং বেসরকারি হাসপতাল রয়েছে। অধিকাংশ নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষই অবশ্য রোগীর স্বাচ্ছন্দ্যের থেকে মুনাফা বাড়ানোর দিকেই বেশি ‘নজর’ দেন বলে অভিযোগ। সেখানে না আছে আইসিসিইউ, ডায়ালিসিস ইউনিট, এনআইসিইউ। না পাওয়া যায় এক্স-রে, এমআরআই, ইউএসজি পরিষেবা। এমনকী মাত্র ২ শয্যার নার্সিংহোমও খোলা হয়েছে স্রেফ মুনাফার খাতিরে! জেলায় ২ শয্যার নার্সিংহোম রয়েছে একটি। ৪ শয্যার ২টি, ৫ শয্যার ৫০টি, ৮ শয্যার ২টি, ১০ শয্যার ৫৩টি নার্সিংহোম রয়েছে। জেলার মাত্র ২টি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিসিইউ ও ডায়ালিসিস রয়েছে। শতাধিক শয্যার বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে একটিই। সেখানেই গত বুধবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
আমরি-র পর খড়্গপুর শহরের নার্সিংহোমগুলি পরিদর্শন করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন স্বাস্থ্যকর্তারাও। কারণ, অধিকাংশ নার্সিংহোমেই অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। পরিস্থিতি দেখে শহরের ১৩টি নার্সিংহোমকে নোটিসও দেওয়া হয়। কী কী কাজ করতে হবে, জানানো হয়। কিন্তু, এর পর আর পরিদর্শন হয়নি। মেদিনীপুরের ঘটনার পর অবশ্য ফের নড়েচড়ে বসেছেন সংশ্লিষ্ট সকলে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, “খড়্গপুর শহরের নার্সিংহোমগুলি নির্দেশ মতো কাজ করেছে কি না, তা দেখতে ফের পরিদর্শন হবে।” রেলশহরের বিভিন্ন প্রান্তেই নার্সিংহোম রয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের ওই কর্তার বক্তব্য, “নার্সিংহোমের মধ্যে রান্নাঘর থাকলে যে কোনও সময়ে বিপদ হতে পারে। এখন তো অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্যাস সিলিন্ডারই ব্যবহৃত হয়। ফলে বিপদের আশঙ্কা থাকেই। পাশাপাশি, অনেক নার্সিংহোমে বেসমেন্টে দাহ্যবস্তু মজুত করেও রাখা হয়। দমকল কর্তাদের সঙ্গে যৌথ পরিদর্শনে গিয়েও বিষয়টি নজরে এসেছে।” জানা গিয়েছে, পরিদর্শক-দলের নির্দেশ মতো কোন নার্সিংহোম কী কী কাজ করল, তা খতিয়ে দেখতে ফের পরিদর্শন হবে। কোনও গাফিলতি নজরে এলে নার্সিংহোমের লাইসেন্স বাতিল করাও হতে পারে।
মেদিনীপুরের ঘটনার পর শহর ও শহরতলির নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ সতর্ক হন কি না, এখন সেটাই দেখার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.