ব্যাঙ্ক-ঋণে স্বজনপোষণের অভিযোগ
কৃষক-মৃত্যু নিয়ে চাপানউতোর ত্রিপুরাতেও
হারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গের মতো ত্রিপুরাতেও এ বার কৃষকের অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ শুরু হল।
পশ্চিম ত্রিপুরার তেলিয়ামুড়ায় বাইশঘরিয়া গ্রামের কৃষক বছর পঁয়তাল্লিশের রতন দত্তকে কাল তাঁর বাড়ির পাশে বেগুন খেতে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন বাড়ির লোকজন। পাশে দু’টি কীটনাশকের বোতল। এখনও ময়নাতদম্তের রিপোর্ট না এলেও প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ একে আত্মহত্যা বলে মনে করছে। মৃত্যুর কারণ নিয়ে পুলিশ তদন্ত করলেও স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, ফসলের ন্যায্য দাম না পেয়ে ও মহাজনী ঋণের ফাঁসে জড়িয়ে পড়েই এই আত্মহত্যা। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা রতনলাল নাথেরও দাবি, ব্যাঙ্কের কাছে ঋণ না পেয়ে মহাজনের কাছ থেকে ‘চড়া সুদে’ ৪-৫ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে কৃষিকাজ চালাচ্ছিলেন ওই কৃষক। ব্যাঙ্ক থেকে কৃষিঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার স্বজনপোষণের নীতি নিয়ে চলছে বলেও তাঁর অভিযোগ। রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকারের কৃষিমন্ত্রী অঘোর দেববর্মা যাবতীয় অভিযোগ খারিজ করে বলেছেন, “খোঁজ নিয়ে দেখেছি, কৃষক রতন দত্তের আত্মহত্যা পারিবারিক কারণে। এ রাজ্যে কোনও কৃষক ঋণের দায়ে, বা ফসলের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে আত্মহত্যা করেছেন, এমন ঘটনা ঘটেনি।” তেলিয়ামুড়ার বাইশঘরিয়া অঞ্চলে ৯৫ শতাংশের বেশি, সংখ্যায় চারশোর মতো কৃষিজীবী পরিবার রয়েছে। স্থানীয়দের একাংশের ক্ষোভ, তার মধ্যে পাঁচ শতাংশের বেশি (১৫-২০ জন) ব্যাঙ্ক থেকে কৃষিঋণ পায়নি। তাঁদের দাবি, রতনবাবুও মহাজনী ঋণের বোঝা মেটাতে না পেরে গত কয়েক মাস ধরে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। ফসলের ‘ন্যায্য’ দাম না পেয়ে দেনা মেটাতে পারছিলেন না। এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী জানান, কৃষকের ধান ন্যায্য মূল্যে এফসিআই যাতে কিনে নেয়, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে রাজ্য সরকার বহু বার অনুরোধ করেছে। এখনও সে বিষয়ে কোনও অগ্রগতি হয়নি। কৃষকের কাছ থেকে ‘ন্যায্য মূল্যে’ ফসল কিনে বাজারজাত করার মতো আর্থিক ক্ষমতা বা পরিকাঠামো যে রাজ্য সরকারের নেই, সে কথাও স্বীকার করেছেন কৃষিমন্ত্রী।
ত্রিপুরায় বামফ্রন্টের মন্ত্রীরা নানা সভায় বলে থাকেন পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র বা অন্ধ্রপ্রদেশের মতো এ রাজ্যে ‘কৃষক আত্মহত্যা’ ঘটে না। তাঁদের এই দাবিকে কটাক্ষ করে রতনলাল বলেন, “২০১১ সালে এ রাজ্যে ২৫-৩০ জন কৃষক দেনার দায়ে ও ফলের ন্যায্য দাম না পেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ‘পারিবারিক অশান্তি’ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে বলে রাজ্য সরকার দাবি করে।”
বিরোধী দলনেতা আজ সকালে ওই কৃষক পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী প্রকাশ দাস, কংগ্রেস নেতা শঙ্করকুমার জামাতিয়া। শঙ্করবাবুর অভিযোগ, বামফ্রন্টের আমলে এ রাজ্যে প্রকৃত কৃষকরা কেন্দ্রীয় কৃষি প্রকল্পের উপযুক্ত সুযোগসুবিধা পাচ্ছেন না। তাই তাঁদের একাংশ ঋণে জর্জরিত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। বিরোধী দলনেতার দাবি, কেন্দ্র গত বাজেটে ৪৭৫ কোটি টাকা কৃষিঋণ মঞ্জুর করেছিল, এ বছর তা আরও ১০০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু ত্রিপুরায় ব্যাঙ্কের মাধ্যমে কে ঋণ পাবে সেটা ঠিক করে দিচ্ছেন স্থানীয় সিপিএম নেতারা। ব্যাঙ্কের ফর্ম বিলিই করা হয় সে ভাবে। ফলে সিংহভাগ চাষিকেই ‘মহাজনী ঋণ’-এর উপর নির্ভর করে চাষবাস চালাতে হয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.