স্পষ্ট সর্বদল বৈঠকে
লোকায়ুক্ত বাদ দিলে পথ খুলবে লোকপালের
লোকপাল বিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ডাকা সর্বদল বৈঠকে আজ সার্বিক সর্বসম্মতি হল না ঠিকই। কিন্তু সংসদে বিশেষ করে রাজ্যসভায় বিলটি পাশ করানোর জন্য সরকারকে কোন পথে হাঁটতে হবে, তার দিশা স্পষ্ট হল। তা হল, বর্তমান লোকপাল বিল থেকে রাজ্যস্তরে লোকায়ুক্ত গঠনের বিষয়টিকে বাদ দিলেই রাজ্যসভায় বিলের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
সর্বদল বৈঠকে আজ যে সর্বসম্মতি হবে না, তা সরকারের শীর্ষ নেতাদের কাছে প্রত্যাশিতই ছিল। তবু এই বৈঠক ডাকার নেপথ্যে সরকারের মূল উদ্দেশ্য ছিল দু’টি। এক, রাজ্যসভায় বিলটি পাস করানোর পথ খোঁজা। দুই, অণ্ণা হজারে যখন ফের অনশনে বসার হুমকি দিচ্ছেন, তখন সর্বভারতীয় স্তরে এই বার্তা দেওয়া যে লোকপাল বিল নিয়ে কংগ্রেস হাত গুটিয়ে বসে নেই।
এমন একটা প্রেক্ষাপটে আজ ২১টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১৮টি দলের নেতারাই বৈঠকে দাবি করেন, কেন্দ্রে লোকপাল এবং রাজ্যস্তরে লোকায়ুক্ত গঠন একই বিলের মাধ্যমে করা যাবে না। রাজ্যস্তরে লোকায়ুক্ত গঠনের অধিকার রাজ্যের হাতেই ছেড়ে দিতে হবে। জাতীয় কনফারেন্স ছাড়া সরকারের সব শরিক দল তথা তৃণমূল, ডিএমকে, এনসিপি, সকলেই এই দাবি জানায়। সরকারের দুই সমর্থক সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজ পার্টিরও তাই দাবি। বিজেপি, সিপিএম-এর বক্তব্য, রাজ্যস্তরে লোকায়ুক্ত গঠনের জন্য কেন্দ্র আদর্শ আইন তৈরি করুক। তারপর রাজ্য সরকার স্থির করবে তা অনুসরণ করবে কি না। কিন্তু তৃণমূল, ডিএমকে, এডিএমকে, বিজু জনতা দল কেন্দ্রের তরফে কোনও আইন চায় না।
রাজ্যসভার সদস্যদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের
সর্বদলীয় বৈঠক। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পি টি আই
ফলে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে মধ্যাহ্নভোজ-বৈঠকের পর স্পষ্ট হয়ে যায়, বর্তমান বিল থেকে লোকায়ুক্ত গঠনের বিষয়টি বাদ দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। বৈঠকের পর রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলিও বলেন, “লোকায়ুক্ত গঠনের বিষয়টি রাজ্য সরকারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে বৃহত্তর সর্বসম্মতি হয়েছে। সরকারকে তা মানতেই হবে।” সরকার বা কংগ্রেসের তরফে আজকের বৈঠকে কোনও মত দেওয়া হয়নি। বরং মনমোহন সিংহ এবং প্রণব মুখোপাধ্যায় বৈঠকে জানিয়েছেন, সরকার বিলটি নিয়ে ঘরোয়া ভাবে সবার সঙ্গে আলোচনা করবে।
গোড়ায় লোকায়ুক্তসংক্রান্ত এই দাবির হোতা ছিল বিজু জনতা দল। পরে তৃণমূল তার শরিক হয়। লোকসভার গত অধিবেশনে লোকপাল এবং লোকায়ুক্ত বিলটি পাশ হলেও রাজ্যসভায় বিপাকে পড়ে সরকার। তৃণমূল এবং দুই সমর্থক দল সপা, বসপা আপত্তি করে। তাদের বক্তব্য ছিল, রাজ্যের অধিকারে কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করবে কেন? সে জন্য বিলে সংশোধন প্রস্তাব আনেন তাঁরা। রাজ্যসভায় সংখ্যালঘু সরকার আর ভোটাভুটির ঝুঁকি না নিয়ে মধ্যরাতে অধিবেশন মুলতুবি করে দেয়।
আজ সরকারের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, লোকায়ুক্ত সংক্রান্ত ধারা মূল বিল থেকে বাদ দিতে সরকার খুব একটা গররাজি নয়। মন্ত্রিসভার এক বর্ষীয়ান নেতা বলেন, সংসদে প্রথম যে লোকপাল বিলটি পেশ করেছিল সরকার, তাতে রাজ্যস্তরে লোকায়ুক্ত গঠনের প্রস্তাব ছিল না। পরবর্তী কালে অণ্ণা হজারেরা দাবি করেন, একই আইনের মাধ্যমে কেন্দ্রে লোকপাল এবং রাজ্যস্তরে লোকায়ুক্ত গঠন করতে হবে। বিজেপি, সিপিএম-সহ অনেক রাজনৈতিক দল তখন অণ্ণার সুরে সুর মেলায়। সরকার সেই কারণেই লোকায়ুক্ত গঠনের বিষয়টি মূল বিলে অন্তর্ভুক্ত করে। এখন সব রাজনৈতিক দল এতে আপত্তি জানালে কংগ্রেসও জবরদস্তি করবে না। রাতে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের প্রতিমন্ত্রী নারায়ণস্বামীও ইঙ্গিত দেন, লোকপাল বিলে কিছু পরিবর্তন করা হতে পারে।
বরং কংগ্রেসের একটি সূত্র বলছে, দু’দিন আগে সপা-বসপার সমর্থন নিয়ে রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার উপর সংশোধন প্রস্তাব সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে খারিজ হয়ে যাওয়ায় লোকপাল বিল নিয়ে এগোনোর জন্য উৎসাহ পায় সরকার। কংগ্রেস নেতারা বুঝতে পারছেন, লোকায়ুক্ত সংক্রান্ত ধারাটি মূল বিল থেকে বাদ দিলে রাজ্যসভায় সপা, বসপা, এবং তৃণমূল-সহ সব শরিক কংগ্রেসের পাশে থাকবে। কারণ বর্তমান বিলটি সংশোধনের প্রসঙ্গে তাঁদের আরও কোনও দাবি নেই। একই ভাবে পরে সেই সংশোধনী লোকসভায় বা যৌথসভায় পাশ করে ফেলা যাবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.