বাগনানে জৈব চাষ
ফসলের গুণমান, পরিমাণ বাড়লেও
বিপণনের অভাবে মুনাফা ফড়েদেরই
জৈব পদ্ধতিতে চাষ করে উন্নত মানের ফসল ফলছে। পরিমাণেও তা অনেকটাই বেশি। কিন্তু প্রয়োজনীয় বিপণন কোথায়? হাওড়ার বাগনানের গোপালপুর গ্রামের চাষিদের খেতের ফসল তাই যথারীতি ফড়েদের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে স্থানীয় বাজারে। বাড়তি দামও মিলছে না। চাষিদের বক্তব্য, বহুজাতিক সংস্থাগুলি এগিয়ে এসে সরাসরি ফসল কিনলে তাঁদের লাভের হার বাড়ত।
এই গ্রামই শুধু নয়, পাশাপাশি হিজলক এবং বাগনানের বেশ কিছু এলাকায় জৈব সার প্রয়োগ করেই টম্যাটো, ঢেঁড়শ, সূর্যমুখী চাষ হচ্ছে। বছর তিনেক আগে গুটিকয়েক চাষি ১৬ সপ্তাহের প্রশিক্ষণ নিয়ে জৈব চাষ শুরু করেন। প্রশিক্ষণ দিয়েছিল বাগনান ১ ব্লক কৃষি দফতর। সেই মতো প্রশিক্ষিত চাষিরা কিছু জমিতে জৈব চাষ করেন। ভাল ফলও মেলে। যা দেখে পরবর্তী বছরগুলিতে জৈব চাষের এলাকা বাড়িয়েছেন তাঁরা।
গোপালপুরের সোমনাথ বেজ বলেন, “প্রথম বছর দু’বিঘা জমিতে জৈব পদ্ধতিতে টম্যাটো চাষ করেছিলাম। এ বছর ৯ বিঘা জমিতেই টম্যাটো চাষ করেছি।” এই গ্রামেরই মানিক দেশমুখ বলেন, “প্রথমে এক বিঘা জমিতে শুরু করলেও এ বছর চার বিঘা জমিতেই জৈব পদ্ধতিতে টম্যাটো ও ঢেঁড়শ চাষ করেছি।” বছর তিনেক আগেও ওই এলাকায় মাত্র ৫০ বিঘা জমিতে জৈব চাষ শুরু হয়েছিল। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০০ বিঘায়। চাষিদের অভিজ্ঞতায়, জৈব পদ্ধতিতে চাষের সুফলগুলি হল ১) ফসলের গুণগত মান উন্নত। ২) গাছের আয়ু বেড়েছে। ৩) মাটির উর্বরতাও বেড়েছে।
জৈব পদ্ধতিতে চাষের জনপ্রিয়তা বাড়ায় স্থানীয় বাসিন্দা গোপাল বর্মন জৈব সারের দোকান পর্যন্ত খুলে ফেলেছেন। জৈব সার কিনে চাষ করতে যে বাড়তি খরচ হয়, তা কমাতে বেশ কয়েক জন চাষি বাড়িতেই জৈব সার ও কেঁচো সার তৈরি করছেন। এ রকমই এক জন অরূপ শাসমল নিজের বাড়ির জৈব সার কারখানা দেখিয়ে বললেন, “চাষের খরচ আরও কমাতেই এটা করেছি।”
কিন্তু উন্নত মানের বেশি ফলন ফলিয়ে বাড়তি লাভ হচ্ছে কি? সোমনাথ বেজ, মানিক দেশমুখ, অরূপ শাসমলদের কথায়, “উন্নত মানের এই ফসল বেশি দামে বিক্রি হওয়া উচিত। কিন্তু সেটা হচ্ছে কোথায়? ধুলাগড়ি পাইকারি বাজার থেকে ফড়েরা এসে যে দামে টম্যাটো কিনছে, রাসায়নিক সার দিয়ে উৎপাদিত টম্যাটোরও সেই দাম। লাভের গুড় খাচ্ছে ফড়েরা।” চাষিদের আরও অভিযোগ, “জৈব চাষে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময়ে বলা হয়েছিল, এই ফসল যোগ্য বিপণনের ব্যবস্থা করা হবে। তা হয়নি।”
কৃষি দফতর সূত্রের খবর, জৈব চাষের ক্ষেত্রে ফসলের গুণগত মান পরীক্ষা করে তবেই তা বাজারে বিক্রি করার কথা। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া দ্রুত ও নিয়মিত চালানোর মতো পরিকাঠামো নেই বলে জানালেন ব্লক কৃষি আধিকারিক নবারুণ চক্রবর্তী। চাষিদের পাল্টা বক্তব্য, বহুজাতিক সংস্থার নিজস্ব পরিকাঠামোর মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া সম্ভব হতে পারে। তাঁদের আক্ষেপ, এখনও কোনও বহুজাতিক সংস্থাকে আনতেই পারল না সরকার।
বহুজাতিক সংস্থা যত ক্ষণ না ফসল কিনতে নামছে, তত ক্ষণ সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে বলে দাবি জৈব চাষিদের। কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “চাষিরা ভাল কাজ করছেন। আমাদের কাছে বিপণন-সংক্রান্ত সমস্যা লিখিত ভাবে জানালে তাঁদের পণ্য বিপণনের ব্যবস্থা অবশ্যই করব।”
কী সেই ব্যবস্থা? মন্ত্রী জানান, সম্প্রতি মাদার ডেয়ারির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি পণ্য কিনে এনে ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্রের মাধ্যমে বিপণনের পরিকল্পনা হয়েছে। ওই চাষিদের ক্ষেত্রেও তা করা যেতে পারে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.