পরীক্ষার্থীদের সাহায্যে এগিয়ে এল শহর
ট্রেন থেকে নেমে হন্তদন্ত হয়ে এক ব্যাঙ্ক কর্মী এগিয়ে গেলেন রিকশা স্ট্যান্ডের দিকে। রিকশা চালক কিন্তু তাঁকে এড়িয়ে এগিয়ে গেলেন এক ছাত্রী ও তাঁর অভিভাবকের দিকেই। বাসের কন্ডাক্টর দু’হাতে ভিড় আগলে আগে জায়গা করে দিচ্ছেন পরীক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের। ট্রেনেও নিত্যযাত্রীরা সহাস্যে জায়গা ছেড়ে দিচ্ছেন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের।
পরীক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে শহর।
শুধু উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরাই অবশ্য নয়, তাঁদের অভিভাবকদের স্বাচ্ছন্দ্যের দিকেও নজর রেখেছে সুপ্রাচীন জনপদ কৃষ্ণনগর। রিকশা চালক থেকে শুরু করে বাসচালক, স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে পুরসভা সকলেরই চিন্তা, পরীক্ষার্থীদের যেন কোনও সমস্যা না হয়। এক অভিভাবক শুভাশিস ঘোষ বলেন, “আগে পাড়ায় পাড়ায় এই ব্যাপারটা ছিল। কিশোর-কিশোরীদের অভিভাবক ছিল তাদের প্রতিবেশীরাও। ভেবেছিলাম সেটা কেটে গিয়েছে। কিন্তু এখন পরীক্ষার সময় দেখছি, সেই ছবিটাই আবার শহরে ফিরে এসেছে।”
শহরের দু’টি মূল কেন্দ্রের মোট ১৩টি স্কুলে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে। কৃষ্ণনগর পুরসভা এলাকার প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরীক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন। তাঁদের সিংহভাগই শহরের বাসিন্দা হলেও বহু পরীক্ষার্থী আসছেন দেপাড়া-বিষ্ণুপুর, জাহাঙ্গিরপুর, আমঘাটা, পালপাড়া এলাকা থেকে। অনেকে বাসে যাতায়াত করছেন। কেউ কেউ ট্রেনে। কৃষ্ণনগর শহরের পরীক্ষার্থীরা বেশিরভাগই রিকশায় যাতায়াত করেন। ট্রেন বা বাসে যাঁরা যান, তাঁদেরও ভরসা সেই রিকশাই। তাই পরীক্ষার ক’দিন রিকশার বিপুল চাহিদা তৈরি হয়েছে।
নিজস্ব চিত্র
কিন্তু সে তো প্রতি বছরই হয়। অন্য বছরের সঙ্গে এ বারের পরিবর্তনটা কী? অভিভাবকেরা জানাচ্ছেন, অন্য বছর এই ‘সুযোগ’ বুঝে রিকশাচালকেরা কেউ কেউ ন্যায্য ভাড়ার অনেক বেশি দাবি করতেন। কিন্তু এ বার ন্যায্য ভাড়াই যে চাওয়া হচ্ছে তাই নয়, অন্য যাত্রীদের তুলনায় পরীক্ষার্থীদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। পরিবেশের এই পরিবর্তনের নেপথ্যে অবশ্য পুরসভার ভূমিকা রয়েছে। পুরপ্রধান কংগ্রেসের অসীম সাহা বলেন, “পরীক্ষার্থীরা যাতে কোনও ভাবেই সমস্যায় না পড়েন, তাই আমরা দিন পনেরোর মধ্যে অন্তত দু’বার লিফলেট বিলি করে ও মাইকে প্রচার করে রিকশা ভাড়ার তালিকা প্রচার করেছি। লিফলেটে ভাড়ার তালিকা রয়েছে। আমার মোবাইল নম্বরও দেওয়া রয়েছে। যাতে কেউ সমস্যায় পড়লে সরাসরি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে।” তিনি বলেন, “এর মধ্যে ভাড়া বেশি নেওয়ার দু’টি অভিযোগ পেয়েছি। দু’টি রিকশাই আমরা আটক করেছি। পরীক্ষার সময় ভাড়া বেশি নেওয়ার তো প্রশ্নই নেই, কাউকে রিকশায় তুলতে অস্বীকারও করা যাবে না।”
শহরে প্রতিদিন কমবেশি সাড়ে চার হাজার রিকশা চলে। নদিয়া জেলা রিকশা ভ্যানচালক ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর জোনাল কমিটির সম্পাদক অভিজিৎ ফণি বলেন, “কেউ যদি বেশি ভাড়া চান, তা হলে সংগঠন যে তাঁর পাশে দাঁড়াবে না, সে কথা সব সদস্যকে পরিষ্কার করে বলে দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া, আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখছি, যাতে পরীক্ষার্থীদের কোনও অসুবিধা না হয়।”
বাস মালিকেরাও পরীক্ষার ক ’দিন বিভিন্ন রুটে অতিরিক্ত বাস চালানোর ব্যবস্থা করছে। নদিয়া জেলা বাসমালিক সংগঠনের সহ সম্পাদক অসীম দত্ত বলেন, “শুধু পরীক্ষার্থীদের জন্যই বাসের ব্যবস্থা হয়েছে পরীক্ষা শুরু ও শেষ হওয়ার সময়। বাসগুলি যাতে পরীক্ষাকেন্দ্রের কাছাকাছি পৌঁছে যায়, তার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। নজর রাখা হচ্ছে, যাতে বাসচালকেরা পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে হর্ন না বাজান।” অভিভাবকদের জন্য পুরসভা থেকে সব স্কুলের সামনেই বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। চৈত্রের রোদ থেকে বাঁচতে রয়েছে ছাউনি, রয়েছে জলের ব্যবস্থাও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.