সম্পাদকীয় ২...
রাজনীতির কেতাব
র্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় বাজেট পেশ করিবার পর অর্থনীতির ছাত্ররা সম্ভবত বিভ্রান্ত বোধ করিয়াছেন। তাঁহারা জানেন, এই সরকারের আরাধ্য দেবতার নাম ‘আম আদমি’। বাজেটের দ্বিপ্রহরে তাঁহারা শুনিলেন, আয়করে ছাড়ের মাত্রা খানিক বাড়িয়াছে। তাহাতে সরকারের ৪,০০০ কোটি টাকার কাছাকাছি রাজস্ব ক্ষতি হইবে। অন্য দিকে, উৎপাদন শুল্কের হার বাড়াইয়া ও বহু নূতন পরিষেবাকে করের আওতায় আনিয়া অর্থমন্ত্রী প্রায় ৪১,০০০ কোটি টাকা বাড়তি রাজস্বের ব্যবস্থা করিয়াছেন। অর্থনীতির ছাত্র পাঠ্যপুস্তকে পড়িয়াছেন, পরোক্ষ কর চরিত্রে রিগ্রেসিভ বা প্রত্যাবর্তী। অর্থাৎ যাঁহাদের আয় কম, পরোক্ষ কর তাঁহাদের উপর আয়ের অনুপাতে অধিকতর করের বোঝা চাপায়। আয়কর সচরাচর চরিত্রে ইহার বিপ্রতীপ, আয় বাড়িলে করের হারও বাড়ে। অর্থনীতির ছাত্র ভাবিতে বসিলেন, যাঁহার বার্ষিক আয় কমপক্ষে এক লক্ষ আশি হাজার টাকা, তাঁহাকে কি আম আদমি বলা চলে? তাহার কম আয়ের মানুষদের জন্য তো আয়কর ছাড়ের পরিমাণ বৃদ্ধির কোনও অর্থ নাই। যাঁহার বাৎসরিক আয় ৫০,০০০ টাকার কাছাকাছি, সম্ভবত তিনি আম আদমি। তিনি বাজারে যে পণ্যই কিনিবেন, তাহার মূল্যের সহিত পরোক্ষ করটিও তিনি ধরিয়া দিতে বাধ্য। এবং, যাঁহার মাসিক আয় তাঁহার বাৎসরিক আয়েরও কয়েক গুণ, তিনি যে হারে পরোক্ষ কর দিবেন, এই দিনমজুরের করের হার তাহার সমান। ‘আম আদমি’-র সেই করের বোঝা তো তবে বাড়িল।
অর্থনীতির ছাত্রটির বিভ্রান্তি দূর করিবার উপায় পাঠ্যপুস্তকে নাই। অর্থমন্ত্রীর সিদ্ধান্তটির ব্যাখ্যা মিলিবে অন্য কেতাবে, তাহা রাজনীতির কেতাব। প্রত্যক্ষ কর বাড়াইয়া পরোক্ষ কর কমাইবার সিদ্ধান্ত অর্থনীতিসম্মত হইতে পারে, কিন্তু তাহা রাজনীতির কেতাবে নিষিদ্ধ। পরোক্ষ করের মাধ্যমে প্রতি বৎসর কত কর সরকারকে দিতে হইবে, তাহা জানা এক জন সাধারণ মানুষের পক্ষে কার্যত অসম্ভব। কিন্তু, প্রত্যক্ষ করে কোনও লুকাচুরি নাই। ফলে, প্রত্যক্ষ কর এবং পরোক্ষ কর জনমানসে পৃথক প্রভাব ফেলে, পৃথক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। রাজনীতির গ্রন্থে এই প্রতিক্রিয়াই ধ্রুব। অর্থমন্ত্রী রাজনীতির সহজপাঠকে অস্বীকার করিতে সাহস করেন নাই।
চিন্তার কেন্দ্রে অর্থনীতি থাকিলে অর্থমন্ত্রী আরও একটি বিষয় লইয়া ভাবিতেন। তাহার নাম মূল্যস্ফীতি। গত দুই বৎসরে ভারতে সম্ভবত সর্বাধিক উচ্চারিত শব্দ। মূল্যস্ফীতির সহিত যুদ্ধ করিতে গিয়া রিজার্ভ ব্যাঙ্ক শিল্প-উৎপাদনকে ঘোরতর জখম করিয়াছে। এবং, তাহার পরেও যুদ্ধ থামাইতে সম্মত হয় নাই। অতএব অনুমান করা চলে, মূল্যস্ফীতির সমস্যা লইয়া সরকার যথেষ্ট বিচলিত। পরোক্ষ করের হার বাড়িলে মূল্যস্ফীতি অনিবার্য। দ্বাদশ পরিকল্পনায় যে আর্থিক বৃদ্ধির হার অনুমান করা হইয়াছে, তাহার ধারেকাছে পৌঁছাইতে হইলেও এখনই শিল্প-উৎপাদনকে চাঙ্গা করিতে হইবে। তাহার জন্য দেশে ভোগব্যয় বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। পরোক্ষ কর বাড়াইয়া সরকার যদি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমাইয়া দেয়, তবে ভোগব্যয়ের মাধ্যমে শিল্প-উৎপাদনকে চাঙ্গা করিবার পরিকল্পনাটি বিশ বাঁও জলে তলাইয়া যাওয়াই স্বাভাবিক। দুঃখের বিষয়, জনমোহিনী রাজনীতির চিরাচরিত পথে হাঁটিতে গিয়া প্রণব মুখোপাধ্যায় অর্থনীতির যুক্তিকে সেই জলেই বিসর্জন দিলেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.