দারিদ্রের সংজ্ঞা বদল নিয়ে
বিতর্কে উত্তাল সংসদ

দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমিয়ে দেখাতেই কেন্দ্র দারিদ্রের সংজ্ঞা বদলে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠল। যোজনা কমিশনের পরিসংখ্যানের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলির এই অভিযোগকে কেন্দ্র করেই মঙ্গলবার উত্তাল হল সংসদ।
প্রধান বিরোধী দল বিজেপি-র অভিযোগ, দারিদ্রসীমার প্রচলিত মাপকাঠি নয়। আয়ের অঙ্ক যার নীচে নামলে অনাহারে মৃত্যু হবে, তাকেই দারিদ্রের নতুন সীমারেখা করতে চাইছে মনমোহন সিংহের সরকার। একে সত্যের অপলাপ করার প্রচেষ্টা বলে দাবি করেছে সিপিএম। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের দিকে আক্রমণের তির শাণিয়েছে এডিএমকে, জনতা দল (ইউ) এবং বহুজন সমাজ পার্টি-ও। এই প্রবল চাপের মুখে হিসাবে গলতির কথা পক্ষান্তরে স্বীকার করে নিয়েছেন যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া। তবে এখনই দারিদ্রের এই বিতর্কিত মাপকাঠি বদলানোর কোনও ইঙ্গিত দেননি তিনি। প্রয়োজনে এ নিয়ে সংসদে আলোচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার পক্ষও।
সোমবার দেশের অর্থনীতির হাল-হকিকত নিয়ে এক পরিসংখ্যান প্রকাশ করে যোজনা কমিশন। পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৪-’০৫ অর্থবর্ষের তুলনায় ২০০৯-’১০ আর্থিক বছরে দেশে দারিদ্রসীমার নীচে থাকা মানুষের অনুপাত কমেছে প্রায় ৭৪ বেসিস পয়েন্ট। ২০০৪-’০৫ সালে দারিদ্রসীমার নীচে ছিলেন ৪০.৭২ কোটি মানুষ। যা মোট জনসংখ্যার ৩৭.২%। কিন্তু ২০০৯-’১০ সালে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৪.৪৭ কোটি (জনসংখ্যার ২৯.৮%)। অর্থাৎ, শুধু দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষের অনুপাত কমেছে তা-ই নয়। কমেছে তাদের সংখ্যাও।
বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমাতে নামিয়ে আনা হয়েছে দারিদ্রের মাপকাঠিকেই। নতুন পরিসংখ্যানে ধরা হয়েছে, শহরাঞ্চলে এক জনের দৈনিক আয় ২৮.৬৫ টাকা পর্যন্ত হলে, তবেই দারিদ্রসীমার অন্তর্ভুক্ত হবেন তিনি। আর গ্রামের ক্ষেত্রে এই অঙ্ক ২২.৪০ টাকা। বিরোধীদের প্রশ্ন তা হলে শহর ও গ্রামে কারও দৈনিক আয় যথাক্রমে ২৮.৬৬ টাকা (মাসে ৮৫৯) এবং ২২.৪১ টাকা (মাসে ৬৭২) হলে তাঁকে দরিদ্র বলে আর মনে করছে না কেন্দ্র?
রাজ্যসভায় বিজেপি-র এস এস অহলুওয়ালিয়ার অভিযোগ, “জানি না এর মাধ্যমে দারিদ্রের কোন সীমারেখা আঁকতে চাইছে কেন্দ্র। দারিদ্রসীমা বা ‘পভার্টি লাইন’ (যার নীচে থাকলে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলির সুবিধা মেলে) নাকি অনাহারসীমা বা ‘স্টারভেশন লাইন’ (আয়ের অঙ্ক যার নীচে নামলে অনাহারে মৃত্যু হবে মানুষের)। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, মনমোহন কিংবা মন্টেক জানেন না, এত কম টাকায় জীবনধারণ অসম্ভব।” আজকের চড়া দামের বাজারে অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসার মতো ন্যূনতম চাহিদার সংস্থান এই টাকায় সম্ভব কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তাঁর দল।
আগে দারিদ্রের মাপকাঠি হিসেবে তেন্ডুলকর কমিটির সুপারিশ সুপ্রিম কোর্টের সামনে পেশ করেছিল কেন্দ্র। তখন শহর ও গ্রামের ক্ষেত্রে ওই দৈনিক আয়ের অঙ্ক দেখানো হয়েছিল যথাক্রমে ৩২ ও ২৬ টাকা। অর্থাৎ, এখনকার তুলনায় সামান্য বেশি। তাতেই ন্যূনতম জীবনধারণের জন্য ওই অঙ্ক যথেষ্ট নয় বলে কেন্দ্রকে ভর্ৎসনা করেছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। তার পরেও দৈনিক আয়ের ওই পরিমাণ আরও কমানো নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি।
এমন বেশ কিছু সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প রয়েছে, যার সুবিধা বরাদ্দ শুধুমাত্র দারিদ্রসীমার নীচে থাকা মানুষদের জন্য। তাই সিপিএম-সহ বাম দলগুলির আশঙ্কা, এই নতুন দারিদ্রসীমা মেনে আর্থিক সুযোগ-সুবিধার বণ্টন হলে বঞ্চিত হবেন বহু মানুষ। যে কারণে এই মাপকাঠির ভিত্তিতে বিপিএল কার্ড বণ্টন না করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট বিবৃতি দাবি করেছে তারা। তুলে এনেছে এ নিয়ে একাধিক সরকারি পরিসংখ্যানের মধ্যে গরমিলের কথাও। পক্ষান্তরে এই অভিযোগ কিছুটা মেনে নিয়েও মন্টেকের দাবি, এই দারিদ্রসীমা নির্ধারিত হয়েছে মূলত ২০০৯-’১০ সালের ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভের ক্রেতা সমীক্ষা এবং জাতীয় আয়ের তথ্যের উপর ভিত্তি করে। দু’য়ের মধ্যে যে ফারাক রয়েছে, এ দিন তা মেনে নিয়েছেন তিনি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.