সরানো ‘পূর্বপরিকল্পিত’
ভাড়া বৃদ্ধির কথা মমতা জানতেন, বিশ্বাস দীনেশের
ঙ্গলবার সকাল দশটায় রাষ্ট্রপতি ভবনে রেলমন্ত্রীর পদে শপথ নিলেন মুকুল রায়। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আকস্মিক ভাবে ঘুরে দাঁড়ালেন সদ্যপ্রাক্তন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী। তাঁর অভিযোগ, ভাড়া যে বাড়ানো হবে, সে ব্যাপারে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবহিত ছিলেন বলেই তিনি জানতেন। তাঁকে সরানোটা পূর্ব পরিকল্পিত। নিছক ভাড়া বাড়ানোর কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
তৃণমূল নেতৃত্বের পক্ষ থেকে অবশ্য দীনেশের এই অভিযোগকে ‘অসত্য’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। সংসদীয় দলের মুখ্য সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “বাজেট পেশ করার ঠিক পরই আমাকে এবং সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দীনেশ ত্রিবেদী স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, ভাড়া বাড়ানোর বিষয় নিয়ে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কোনও কথাই বলেননি। এর পর সাংবাদিক সম্মেলন করেও তিনি বলেছিলেন, রেল মন্ত্রক রাইটার্স বিল্ডিং থেকে চলে না।”
এহেন পরিস্থিতিতে অনেক রাজনীতিক মনে করছেন, মমতা দিল্লি আসার পর থেকে মুকুলের শপথ পর্যন্ত সব কিছু ‘ভালয় ভালয়’ মিটে যাওয়ার পর, দীনেশের এই রুখে দাড়ানো যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। গত কাল প্রায় গোটা দিনই মমতার সঙ্গে ছিলেন দীনেশ। সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে তৃণমূল সংসদীয় দলের বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন তিনি। সেখানে দলের কিছু সদস্য দীনেশের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানালে মমতা বলেন, যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। এ নিয়ে আর কাটাছেঁড়া করা হবে না।
কিন্তু আজ সন্ধ্যায় মমতা কলকাতা ফেরার বিমান ধরার ঠিক পরেই একটি বৈদ্যুতিন চ্যানেলে দীনেশ বলেন, “বাজেটে যে রেল ভাড়া বাড়ানো হবে, তা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এক শীর্ষ আমলা জানতেন। এমনকী তিনিই আমাকে বলেছিলেন, রেলের আর্থিক স্বাস্থ্যের যা হাল তাতে ভাড়া না-বাড়ালে রেল ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। এই আমলা তৃণমূল নেত্রীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। তাই আমিও ভেবেছি যে নেত্রী সবটাই জানতেন।” এই ‘শীর্ষ আমলাটির’ নাম নিজে না-করলেও, প্রশ্নকর্তা যখন মুখ্যমন্ত্রীর সচিব গৌতম সান্যালের নাম বলেন, তখন তাতে সায় দেন দীনেশ। কল্যাণের বক্তব্য, “কোনও আমলা জানলেন কি জানলেন না, সেটা কোনও বিষয়ই নয়। দীনেশ আমাদের দল এবং দলনেত্রীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনাই করেননি।” দলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ও দীনেশের বক্তব্যের প্রতিবাদ করে বলেন, “আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি আগে থেকে জানতেন, তা হলে অবশ্যই আপত্তি করতেন।”
দীনেশ অবশ্য তাঁর অভিযোগকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে বলেছেন, “সংসদে বাজেট পেশের অনেক আগে, দোলের দিন টেলিভিশন অনুষ্ঠানে এক সাংবাদিক স্পষ্টই বলে দিয়েছিলেন যে, বাজেট পেশ করার পর আমাকে সরতে হবে। সেই কথা শুনে আমি বিস্মিতই হয়ে গিয়েছিলাম। এ সবের থেকেই স্পষ্ট যে ভাড়া বৃদ্ধির কারণে আমাকে সরানো হয়নি।”
আজ সকালে মুকুলের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে তৃণমূলের সব মন্ত্রী এবং প্রায় সমস্ত সাংসদ উপস্থিত থাকলেও, দীনেশ আসেননি। অনুপস্থিতির তালিকায় ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী এবং সোমেন মিত্রও। শুভেন্দু দলীয় কাজে কলকাতা ফিরে গিয়েছেন। সোমেনবাবু গত কালই মুকুল রায়কে জানিয়ে দিয়েছিলেন, শারীরিক সমস্যার কারণে অত সকালে তাঁর পক্ষে রাষ্ট্রপতি ভবনে উপস্থিত থাকা সম্ভব হবে না। দুপুরে তিনি লোকসভায় আসেন। কিন্তু রেল বাজেট নিয়ে আলোচনার সময়েও গোটা দিন দীনেশকে দেখা যায়নি সংসদে। যদিও আজ রেল বাজেট নিয়ে আলোচনার সময় প্রায় সব দলের সাংসদই তাঁর বাজেটের প্রশংসা করে কংগ্রেসকে উত্ত্যক্ত করার চেষ্টা চালিয়েছেন। বিজেপি-র সুমিত্রা মহাজন, সিপিএমের রামচন্দ্র ডোম, সমাজবাদী পার্টির দারা সিংহ, বহুজন সমাজ পার্টির রেবতী রমণ প্রায় এক সুরে বলেন, ভাল বাজেট পেশ করেও দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সরে যেতে হল দীনেশকে।
মমতা কলকাতা ফিরে যাওয়ার আগেও তাঁর সঙ্গে দেখা করেননি দীনেশ। আজ তাঁর এই ‘অনুপস্থিতি’ নিয়ে ঘরোয়া স্তরে আলোচনাও হয় তৃণমূল সাংসদদের মধ্যে। তার পর সন্ধ্যায় দীনেশের এই ক্ষোভের বিস্ফোরণ। বাজেট বক্তৃতায় অজস্র শের-শায়েরি শুনিয়েছিলেন তিনি। আজও একটি শের উল্লেখ করে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী বলেন, “এটা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, আমার অপসারণের ঘটনার সঙ্গে ভাড়া বাড়ানো সম্পর্কিত নয়। এটাও জানি যে, যদি নীতির প্রশ্নে লড়াই হয়, তা হলে দুর্নীতিপরায়ণদের সমর্থন কিছুতেই পাওয়া যাবে না।” তবে আত্মপক্ষ সমর্থনের ভঙ্গিতে দীনেশ বলেন, “রেল আইসিইউ-তে চলে গিয়েছে, এ কথা বলে আমি আমার পূর্বসূরির কথা বোঝাতে চাইনি। বলতে চেয়েছিলাম রেলের ঘাটতির কথা। আমাকে ভুল বোঝা হয়েছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.