পঙ্গু পরিষেবা
নার্সের অভাবে ধুঁকছে সরকারি বহু হাসপাতাল
স্তন ক্যানসার নির্ণয়ের জন্য ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ম্যামোগ্রাফি যন্ত্র এসে পড়ে রয়েছে। কিন্তু কবে তা চালু করা যাবে, কেউ জানে না। কারণ, নার্স নেই।
ন্যাশনাল মেডিক্যালের স্ত্রী-রোগ বিভাগে নিজস্ব ‘হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট’ খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশঙ্কাজনক বহু প্রসূতির প্রাণ বাঁচবে, সেই আশায়। কিন্তু সেখানে তিন শিফ্টে ডিউটি করার মতো নার্স নেই।
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেডিওথেরাপি বিভাগের ইন্ডোর চালু করার ঘোষণা হয়ে গিয়েছে বহু দিন আগেই। কিন্তু নার্স না-থাকায় বিভাগ খোলা যাচ্ছে না। দু’বছর আগে ১০ জন নার্স নিয়োগের বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু তার পরে এক জনকেও পাওয়া যায়নি। একই কারণে ওই এনআরএসেই নিউরোলজি বিভাগের ‘ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট’ খোলা যাচ্ছে না। বন্ধ পড়ে রয়েছে মনোরোগ বিভাগের ইন্ডোরও।
গ্রামগঞ্জ নয়, খাস কলকাতা শহরেই প্রায় সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নার্সের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে পরিষেবা। একাধিক বিভাগ বন্ধ। ঘোষণা করে দেওয়ার পরেও নতুন বিভাগ চালু করা যাচ্ছে না। নতুন মূল্যবান যন্ত্র বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে। স্বাস্থ্যকর্তারা নিজেরাও জানেন না, কবে কাটবে এই অচলাবস্থা। সব মিলিয়ে নার্সের অভাবে ত্রাহি-ত্রাহি রব সর্বত্রই।
এসএসকেএম, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং আরজিকর কর্তৃপক্ষও জানিয়েছেন, নার্সের অভাবে তাঁদের একাধিক বিভাগে পরিষেবা বেহাল। শিশু-বিভাগ, যেখানে নার্সের প্রয়োজন খুব বেশি, সেখানেও নার্সের সংখ্যা খুবই কম। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, সব বিভাগের ইন্ডোরেই উপচে পড়া রোগী। বহু ওয়ার্ডেই জোড়াতালি দিয়ে তিনটি শিফ্ট চালাতে হচ্ছে। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর জায়গায় কাজ করার মতো কেউ নেই। ১৩-১৪টি আউটডোর পিছু এক জন করে নার্স ডিউটি করছেন।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে রাজ্যে নার্সের প্রায় আড়াই হাজার পদ শূন্য রয়েছে। তার একটি বড় অংশই কলকাতায়। কী ভাবে সামলানো হবে এই পরিস্থিতি? স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারি নার্সিং স্কুল-কলেজের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকেও নার্স নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাসের দাবি, অচিরেই তাঁরা সমস্যা অনেকটাই মেটাতে পারবেন। তিনি বলেন, “প্রায় ১২০০ নার্স চাওয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যেই ৮৮০ জনকে আমরা মনোনীত করেছি। চলতি মাসেই তাঁদের নিয়োগের ব্যবস্থা হবে।” আর বাকিটা? সেই প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি তিনি।
বিভিন্ন হাসপাতালের কর্তারা অবশ্য স্বাস্থ্য দফতরের আশ্বাসে তেমন ভরসা রাখতে পারছেন না। তাঁদের অভিযোগ, কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই গত কয়েক বছরে ধাপে ধাপে শয্যা-সংখ্যা বেড়েছে। চালু হয়েছে নতুন বিভাগ। কিন্তু নার্সের সংখ্যা বাড়েনি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নতুন পদও সৃষ্টি হয়নি। তাই পরিষেবার মানের সঙ্গে আপস করতে হয়েছে। এ রাজ্য থেকে নার্সিং পাশ করে বহু মেয়েই এখন বিদেশে কাজ করতে যাচ্ছেন। পাশাপাশি, এ রাজ্যেও পরপর বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম চালু হওয়ায় নার্সের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী নার্স তৈরি না হওয়াতেই চাহিদা-জোগানের ফারাকটা বিপুল হচ্ছে।
সরকারি হাসপাতালে নার্সের ঘাটতি মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই অবসরপ্রাপ্ত নার্সদের ফের নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। সরকারি হাসপাতালে নার্সদের অবসরের বয়স এখন ৬০ বছর। এমনিতেই কাজের চাপে জেরবার হয়ে নার্সরা রোগীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন, এমন অভিযোগ প্রায়ই ওঠে। স্বাস্থ্য দফতর ঘোষণা করেছে, ৬২ বছরের কম বয়সীরা আবেদন করতে পারবেন। নিয়োগ হবে ছ’মাসের জন্য। অর্থাৎ, পেশা ছাড়ার পরে এক বা দেড় বছর পেরিয়ে গিয়েছে, এমন মহিলারাও চাকরি পাওয়ার আশায় যোগাযোগ করতে পারবেন। কয়েক জন ইতিমধ্যে কাজে যোগও দিয়েছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু ‘সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ)-এ এঁদের নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু এসএনসিইউ-এর মতো গভীর মনোযোগের জায়গায় ষাটোর্ধ্ব মহিলারা কতটা উপযুক্ত, ইতিমধ্যেই সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রশ্ন উঠছে, নার্সিংয়ের কাজে যে দক্ষতা, ধৈর্য্য এবং শারীরিক সক্ষমতা লাগে, অবসর নেওয়ার পরে সেটা কতটা থাকবে?
তা হলে সমাধানের পথটা কী? অসিতবাবু জানান, আগামী ১০ বছরে নার্সের সংখ্যা এবং নার্সিংয়ের গুণগত মানের উন্নতির জন্য স্বাস্থ্য দফতর একটি ‘মাস্টার প্ল্যান’ তৈরি করছে। এনআরএসের রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “নার্সের অভাব নিয়ে হা-হুতাশ না করে বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবা দরকার। ভারতের অন্যান্য রাজ্যে তো পুরুষদের নার্সিং প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগানো হয়। আমরাই বা তা ভাবতে পারব না কেন?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.