ক্ষতিপূরণের দাবি, রাত থেকে অবরোধ সারেঙ্গায়
বিলম্বে দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে সরব হয়েছেন সারেঙ্গা থানার গাড়রা ও গোপালডাঙা গ্রামের বাসিন্দারা। শনিবার দুর্ঘটনার পরে যান নিয়ন্ত্রণের দাবিতে উত্তেজিত জনতা দুর্ঘটনাস্থলে দীর্ঘ ক্ষণ অবরোধ করেছিলেন। পুলিশের আশ্বাসে তখনকার মতো অবরোধ উঠে গেলেও রাতে ফের অবরোধ শুরু করেন বাসিন্দারা। রাত থেকে বড়গাড়রা মোড়ে ও গোপালডাঙায় রাস্তা শুরু হওয়া অবরোধ রবিবার দুপুর পর্যন্ত চলে। অবরোধের জেরে সারেঙ্গা-গোয়ালতোড় রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। রাস্তার দু’দিকেই শ’খানেক গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় ব্যাপক যানজট হয়। বন্ধ হয়ে যায় সমস্ত যান চলাচল। ভোগান্তির শিকার হন গাড়ি চালকেরা। এ দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ গ্রামবাসীদের তরফে ক্ষতিপূরণের দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি বিডিও-র কাছে তুলে দেওয়া হয়। বিডিও সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিলে তাঁরা অবরোধ তুলে নেন।
শনিবার দুপুরে বাঁকুড়ার সারেঙ্গা থানার বড়গাড়রা মোড়ের কাছে, সারেঙ্গা-গোয়ালতোড় রাস্তায় ট্রাকের সঙ্গে যাত্রী বোঝাই একটি ট্রেকারের মুখোমুখি সংঘর্ষে ট্রেকার চালক-সহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ছ’জন মহিলাও রয়েছেন। মৃত ও আহত সকলেই দিনমজুর পরিবারের। অধিকাংশ গরিব। স্বজন হারিয়ে গোপালডাঙার মল্ল পরিবার, গাড়রার আহির ও কর্মকারের পরিবার কার্যত ভেসে যেতে বসেছে। এই অবস্থায় গ্রামের মানুষ তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। দুর্ঘটনায় মৃত ও আহতদের পরিবারকে অবিলম্বে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ওই সব গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ। এই দাবিতেই তাঁরা রাস্তা অবরোধ করেছেন বলে জানিয়েছেন।

শোকার্ত মল্ল পরিবার। ছবি: উমাকান্ত ধর।
গাড়রা গ্রামের বাসিন্দা বিপ্লব দত্ত, দেবীপ্রসাদ হাজরা, অরূপ নন্দীরা বলেন, “মৃতেরা প্রত্যেকেই হতদরিদ্র পরিবারের। রাজ্য সরকার বিষমদ কাণ্ডে মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছে। একই ভাবে পথ দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারগুলিকে এককালীন ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার দাবিতে আমরা রাস্তা অবরোধ করেছি।” গোপালডাঙার বাসিন্দা তরুণ পাত্র, সন্দীপ মাহাতোদের দাবি, “দুর্ঘটনার কবলে পড়ে গ্রামের মল্ল পরিবার চরম বিপাকে পড়েছে। সরকারি সাহায্য না পেলে ওরা না খেতে পেয়ে মারা যাবে। তাই আমরা ওদের ক্ষতিপূরণের জন্য আন্দোলনে নেমেছি।” এ দিকে, একমাত্র ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতিকে হারিয়ে কার্যত বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন সত্তর বছরের বৃদ্ধা সিন্ধু মল্ল। টিনের ছাউনি দেওয়া মাটির এক চিলতে বাড়ির দাওয়ায় বসে কাঁদছেন গৌরবাবুর মা সিন্ধুদেবী। দুর্ঘটনায় বাবাকে হারিয়ে প্রায় পথে বসার মতো অবস্থা হয়েছে তাঁর দুই মেয়ে তিলোকা ও সীমার। সারেঙ্গা থানার গোপালডাঙার মল্ল পরিবার এই আকস্মিক দুর্ঘটনায় দিশেহারা। একই অবস্থা গাড়রার আহির পরিবারে। সংসারে একমাত্র রোজগেরে ছিলেন দুর্ঘটনায় মৃত সুমিত্রা আহির। স্বামী রবি আহির মানসিক প্রতিবন্ধী। তাঁদের তিন ও ছয় বছর বয়সের দুই ছেলে। স্ত্রীর মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন প্রতিবন্ধী রবি আহির।
রবিবার সকালে গোপালডাঙা গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, মৃত গৌরবাবুর বাড়ির সামনে রাস্তার উপরে জটলা করেছেন গ্রামবাসীরা। বিপর্যস্ত ঠাকুমার আক্ষেপ, “পেটের টানেই ছেলে-বৌমা ইটভাটায় কাজে গিয়েছিল। সঙ্গে নাতি তনুও ছিল। দুই নাতনিকে এখন কী করে মানুষ করব ভেবে পাচ্ছি না। আমার সব শেষ হয়ে গেল।” গৌরবাবু ও জবাদেবীর মেয়ে, পনেরো বছরের তিলোকা স্থানীয় খয়েরপাহাড়ি-গাড়রা হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। আট বছরের সীমা স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তিলোকা কাঁদতে কাঁদতে বলে, “সকালে কাজে যাওয়ার সময় মা আমাকে রাঁধতে বলে গিয়েছিল। ঠাকুমাকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এখন কী ভাবে বাঁচব জানি না। কে দেখবে আমাদের?” কোনও উত্তর নেই বৃদ্ধার কাছে। অন্য দিকে সুমিত্রাদেবীর ছেলে হারাধন ও সৌমেন মায়ের কথা মনে পড়লেই হাউ হাউ করে কাঁদছে। বিড়বিড় করে বলছে, “আমাদের এ ভাবে ফেলে কোথায় চলে গেলে মা। আমরা কার কাছে থাকব?” প্রতিবন্ধী বাবার কাছে এরও কোনও উত্তর নেই।

ক্ষতিপূরণের দাবিতে গ্রামবাসীদের অবরোধ।
মৃতদের মধ্যে গাড়রা গ্রামের বাসিন্দা রয়েছেন পাঁচজন। বাকি ৬ জন গোপালডাঙা গ্রামের। শনিবার দুপুরের পর থেকেই এই দু’টি গ্রাম শোকাচ্ছন্ন। গোপালডাঙা গ্রামের বাসিন্দা জ্যোৎস্না কর্মকার, কাকলি মল্ল, পারুলতা মল্ল, জবা মল্ল-রা সারেঙ্গা মিশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গাড়রা গ্রামের বাসিন্দা নিয়তি মল্ল ও শৈল বাঙালকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে। এ দিকে মৃত ও আহতদের ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে যথাসাধ্য ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন রাজ্যের শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শ্যাম মুখোপাধ্যায়। রবিবার সকালে ব্যঁকুড়া মেডিক্যালে মৃতদেহগুলির ময়না তদন্তের সময় মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে শ্যামবাবু মৃতদের পরিবারের আত্মীয়-পরিজনদের সমবেদনা জানান। তাঁদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, “মৃত ও আহতদের পরিবার অবশ্যই ক্ষতিপূরণ পাবেন। ওঁরা গরিব মানুষ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করে দেখছেন। ব্লক প্রশাসনকে প্রাথমিক ভাবে সাহায্য করার জন্য বলা হয়েছে।” মহকুমাশাসক (খাতড়া) দেবব্রত বিশ্বাস বলেন, “সারেঙ্গার বিডিও হীরকজ্যোতি মজুমদার রবিবার সকালে ওই দু’টি গ্রামে গিয়েছিলেন। মৃত ও আহতদের পরিবারকে চাল, আটা, চিড়ে-সহ বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী দিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে কথাও বলেছেন।” দেবব্রতবাবু জানান, ক্ষতিপূরণের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

ছবি: উমাকান্ত ধর



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.