যানজট থেকে রেহাই বহরমপুরে
ক্ষিণের গোরাবাজার থেকে উত্তরের সৈয়দাবাদে মণীন্দ্রচন্দ্র বিদাপীঠে যেতে ক’টি তেমাথা রয়েছে? ১৫ না ২০টি? উল্টো দিকের সৈয়দাবাদ থেকে লালদিঘি পাড়ের গার্লস কলেজে পৌঁছতে ১২টি নাকি ১৮টি মোড় রয়েছে? প্রতিদিন সকাল হতেই বহরমপুর শহরের ছাত্রছাত্রী থেকে নিত্যযাত্রীরা মুখ ব্যাজার করে ওই ধরনের গোনা-গুণতি শুরু করতেন। কারণ, প্রত্যেকটি মোড়ে যানজটে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে পড়তে হয়। নিত্যদিন।
প্রায় দেড় দশকের ওই প্রাত্যহিক দুঃসহ ভোগান্তি থেকে বহরমপুর ও তার লাগোয়া এলাকা মিলে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মানুষের অতি সম্প্রতি রেহাই মিলেছে। সৌজন্যে বহরমপুর পুরসভা ও পুলিশের যৌথ ও আন্তরিক উদ্যোগ। মাস খানেক ধরে বহরমপুরের প্রায় ৩০টি মোড়ে মোতায়েন করা হয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। বহরমপুরের নাগরিক ইতিহাস গবেষক খাজিমুদ্দিন আহমেদ বলেন, “নতুন ট্রাফিক ব্যবস্থা চালু হওয়ার ফলে আমার মেয়ের পড়াশোনার সময় বেড়ে গিয়েছে। আগে স্কুলে যাওয়া-আসাতেই যানজটের ধকলে ও ক্লান্ত হয়ে পড়ত।” যুগাগ্নি নাট্যগোষ্ঠীর কর্ণধার অনুপম ভট্টাচার্যও এক সুরে বলেন, “অফিস সেরে মহড়ায় আসতে আগে সকলেরই কমবেশি দেরি হত। এখন যানজটের ভয়টা কাটায় একটু বেশি সময় পাওয়া যাচ্ছে।” সৈয়দাবাদ থেকে বহরমপুর স্টেশন যেতে আগে রিকশায় লাগত ঘণ্টাখানেক। কখনও কখনও দেড় ঘণ্টা। এখন লাগে আধ ঘণ্টা।
যান নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
বহরমপুর পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্যও বলেন, “যানজট নিয়ে লাগাতার আবেদন-নিবেদন করেও জেলার পুলিশ কর্তাদের ঘুম ভাঙাতে পারিনি। বর্তমান পুলিশ সুপারকে যানজটের অসহনীয় দুর্ভোগের কথা জানাতেই তিনি তিন দিনের মাথায় আমাকে সঙ্গে নিয়ে দিনভর গোটা শহর ঘুরে দেখেন। তারপরে তাঁর প্রস্তাব মেনে নিয়ে যান-নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে সহায়তা করতে পুরসভা থেকে ১০০ ট্রাফিক ওয়ার্ডেনের দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে। তার সুফলও এখন মিলছে।” আরও বেশি সাফল্য পেতে শহরের মোড়ে মোড়ে সিসিটিভি লাগাতে চলেছে জেলা পুলিশ। জেলার পুলিস সুপার হুমায়ন কবীর বলেন, “আপাতত শহরের অন্তত ৫৫টি সিসিটিভি লাগানো হবে। তার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। সিসিটিভি লাগানো হলে দুষ্কর্মের পরে দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করাও সহজতর হবে। পথচারী থেকে যানবাহন সব কিছুরই পথবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের নিষ্পত্তিও সহজে হয়ে যাবে।” বহরমপুর ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর অতুলকুমার মণ্ডল বলেন, “পুলিশ সুপার নিজে ঘুরে ঘুরে সরেজমিনে সব দেখাশোনা করছেন, সেই সঙ্গে কিছু বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। ফলে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে উৎসাহের সঞ্চারও হয়েছে।”
পুরসভাও অবশ্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। পুরপ্রধান বলেন, “পুলিশ কর্মী অপ্রতুল। তার উপরে যে সব ট্রাফিক ওয়ার্ডেন এত দিন যানশাসন করতেন তাঁরা কোনও পারিশ্রমিক পেতেন না। এ রকম পরিস্থিতিতে পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল এম কে সিংহের সঙ্গে আলোচনা করে পুরসভার পক্ষে থেকে ট্রাফিক ওয়ার্ডেন পিছু দৈনিক ১০০ টাকা করে ১০০ জনের জন্য মাসিক ৩ লক্ষ টাকা অনুদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” ফলে ট্রাফিক ওয়ার্ডেন ও পুলিশকর্মী মিলিয়ে মোট প্রায় ১৫০ কর্মী বহরমপুরের প্রায় ৩০টি মোড়ে যানবাহনের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করছেন। পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “রঘুনাথগঞ্জ, বেলডাঙা ও মুর্শিদাবাদ-সহ জেলার সব ক’টি পুরসভা এলাকাতে কিছু দিনের মধ্যে যানশাসন ব্যবস্থা ঢেলে সাজা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.