বিশরপাড়ায় কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল অসীম দামের খুনের ঘটনায় এয়ারপোর্ট থানা সময়মতো ব্যবস্থা নেয়নি বলে আগেই অভিযোগ উঠেছিল। ঘটনার ১০ দিন পরে, রবিবার ওই থানার আইসি-র বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হল। বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার এ দিন জানান, ওই থানার আইসি দেবপ্রসন্ন পানকে ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে।
সিপি বলেন, “আইসি-র বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছিল। তাঁর জবাব সন্তোষজনক না-হওয়ায় এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” আইসি-কে ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে সিপি-র অফিসেই অর্থাৎ আপাতত তাঁকে ওই দফতরেই বসতে হবে। পুলিশের পরিভাষায় ‘ক্লোজ’-এর অর্থ, ওই শাস্তি চলাকালীন কোনও ‘কেস’ নেওয়া বা তদন্ত করা যাবে না।
 |
কনস্টেবল অসীম দাম |
৮ মার্চ, দোলের দিন অসীমবাবুর বিশরপাড়ার বাড়িতে ঢুকে তাঁর ভাগ্নির শ্লীলতাহানি করে এক দল যুবক। ওই পুলিশকর্মী তার প্রতিবাদ করায় দুষ্কৃতীরা তাঁকে হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আধমরা অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। হামলার তিন দিন পরে মারা যান তিনি। অসীমবাবুর পরিবারের লোকজন জানিয়েছিলেন, হামলার পরে তাঁরা প্রথমে নিমতা থানায় গিয়েছিলেন। কিন্তু ঘটনাস্থল নিমতা থানার আওতাভুক্ত না-হওয়ার ‘অছিলা’ দেখিয়ে ওই থানা তাঁদের অভিযোগ নেয়নি। তাঁরা তার পরে এয়ারপোর্ট থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু এয়ারপোর্ট থানা থেকে নিজেদের মধ্যে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার ‘পরামর্শ’ দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। পরে স্থানীয় ক্লাবের ছেলেদের চাপে সেই অভিযোগ নথিবদ্ধ করা হয়। কিন্তু এয়ারপোর্ট থানা অভিযুক্তদের গ্রেফতারের কোনও চেষ্টা করেনি বলে অভিযোগ করেন অসীমবাবুর আত্মীয়স্বজন। তবে ওই পুলিশকর্মীর মৃত্যুর পরে ঘটনাটি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে হইচই শুরু হওয়ায় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। গ্রেফতার করা হয় চার জনকে। শেষ পর্যন্ত ঘটনাটির তদন্তভার নেয় সিআইডি।
শুধু বিশরপাড়ার ওই ঘটনাতেই নয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজারহাটে সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে শঙ্কর রায় নামে এক সিপিএম-কর্মীর আহত হওয়ার ঘটনাতেও এয়ারপোর্ট থানার বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ উঠেছিল। শঙ্করবাবুর স্ত্রী টিঙ্কু রায় অভিযোগ করেন, সংঘর্ষের ঘটনার পরেই তিনি এয়ারপোর্ট থানায় একটি অভিযোগপত্র জমা দেন। কিন্তু তার কোনও ‘রিসিপ্ট’ বা প্রাপ্তিপত্র দেয়নি পুলিশ। সংঘর্ষের ব্যাপারে কোনও তদন্তও শুরু হয়নি। তার পরেই তিনি আদালতের দ্বারস্থ হন। টিঙ্কুদেবীর অভিযোগকে এফআইআর হিসেবে গণ্য করার নির্দেশ দেয় আদালত। সেই সময়েও পুলিশ কমিশনার জানিয়েছিলেন, পুলিশের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এয়ারপোর্ট থানার আইসি-র ‘ক্লোজ’ হওয়ার সঙ্গে সেই অভিযোগেরও কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা নিয়ে পুলিশ কোনও জবাব দেয়নি।
|