বিনোদন প্রথম সপ্তাহেই কোটির ঘর ছুঁয়ে
বাজিমাত ‘কহানি’র

‘বিদ্যা বাগচী’ আবার করে দেখালেন!
কলকাতার সিনেমা-ইতিহাসে এমন সপ্তাহান্ত সত্যি বিরল। কারণ গত শনি-রবিতে গোটা বাংলায় বিদ্যা বালনের সদ্য মুক্তি পাওয়া ছবি ‘কহানি’-র সংগ্রহ ছাড়িয়ে গিয়েছে ৯০ শতাংশ। এই ছবিতেই বিদ্যা বালন লন্ডনের বিদ্যা বাগচী। নিজের স্বামীকে খুঁজতে যিনি পা রেখেছেন কলকাতা শহরে।
স্বল্প বাজেটের এই ছবি কলকাতায় মাত্র তিন দিনে যা সাড়া পেয়েছে, তাতে ইন্ডাস্ট্রি-বিশেষজ্ঞদের অনেকেই অবাক। তাঁদের কেউ কেউ আবার বলছেন, শাহরুখ-সলমনের বড় বাজেটের ছবিতেও এত ভিড় আজকাল দেখা যায় না। শুধু দু’দিনেই ‘কহানি’র সংগ্রহ ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা।
মাল্টিপ্লেক্স কর্তা পঙ্কজ লাডিয়া বলছেন, “ইতিহাস হতে চলেছে। শাহরুখ-সলমনের ছবির মতো এক একটা মাল্টিপ্লেক্সে দিনে ১২-১৪টা শো চলছে ‘কহানি’র। সেই ১২-১৪টা শোয়ের প্রত্যেকটায় ৯০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি দর্শক আসছেন। বাংলার সিনেমা-ভাগ্যে এমনটা বহু দিন ঘটেনি। শাহরুখ-সলমনকে হারিয়ে দিয়েছেন বিদ্যা!” ছবির পরিবেশক প্রীতম জালান জানালেন, ৮৮টি পর্দায় মুক্তি পেয়েছে ‘কহানি’। আর এরই মধ্যে প্রথম সপ্তাহেই দারুণ সাড়া মিলছে।
‘কহানি’র জন্য শহুরে দর্শকের ভিড় এতটাই বেশি যে সপ্তাহান্তে অতিরিক্ত সময় কাজ করে ভিআইপি-দের শো দেখানোর ব্যবস্থা করতে গিয়ে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে মাল্টিপ্লেক্স-কর্তাদের। শনিবার রাতে যেমন টলিউডের তারকা দেব অনুরোধ জানিয়েছিলেন টিকিটের জন্য।
যখন-তখন তলব আসছে পুলিশের উঁচু-মহলের কর্তাদের কাছ থেকেও।
পর্দায় কলকাতার অলি-গলি, দুর্গাপুজো আর টলিউডের পরমব্রত, শাশ্বত, খরাজ, আবির, শান্তিলাল, কমলিকাদের মতো চেনা মুখের ভিড় এই ছবির সঙ্গে কলকাতার মানুষের একাত্ম হওয়ার অনেক রসদই রয়েছে। ‘কহানি’র ইন্সপেক্টর রানার চরিত্রাভিনেতা পরমব্রত বলছেন, “শুধু কলকাতা কেন? বর্ধমান, শিলিগুড়ি, দুর্গাপুর সব জায়গার দর্শকদেরই ছবিটা ভাল লাগছে।” বলে রাখা ভাল, ইন্সপেক্টর রানা তাঁর অভিনয়ের জন্য গোটা দেশ থেকেই অভিনন্দন কুড়োচ্ছেন। “কহানি-র সঙ্গে যুক্ত হতে পারাটা একটা দারুণ অনুভূতি। অসাধারণ একটা ছবি বানানোর জন্য আর আমার উপরে ভরসা করার জন্য পরিচালক সুজয় ঘোষকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আর বিশেষ করে বলতেই হবে বিদ্যার কথা। বিদ্যা বাগচীর ভূমিকায় ও অনবদ্য। ও সত্যি সুপারস্টার।”
বলিউড থেকে টলিউড যাঁর অভিনয় দেখে ধন্য ধন্য করছে, সেই ‘সুপারস্টারের’ প্রতিক্রিয়া কী? “দ্য ডার্টি পিকচার দিয়ে শুরু, তার পর জাতীয় পুরস্কার, আর এ বার ‘কাহানি’ অসামান্য অভিজ্ঞতা। যে কোনও অভিনেত্রীর জন্য একটা সেরা পর্ব। ‘কহানি’র শু্যটিং মোটেই সহজ ছিল না। সারা দেশে, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে এই ফিল্ম যে রকম কদর পেয়েছে, তাতে আমি অভিভূত,” বললেন বিদ্যা।
বিদ্যা একাই যে ‘খান’দের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন, তা বলিউডেও সবাই এখন একবাক্যে মেনে নেন। তাঁর প্রথম ছবি ‘ভাল থেকো’-র সহ-অভিনেতা পরমব্রতও মানছেন সে কথা, “ও অবশ্যই ‘খান’দের সমকক্ষ। আজকাল লোকে বিদ্যা বালনের ছবি দেখতে যায়। ও এতটাই জনপ্রিয়। প্রথমে ডার্টি পিকচার, আর এখন ‘কহানি’তে আবার নিজের ক্ষমতা বুঝিয়ে দিল ও।”
‘কহানি’র মধ্যে কলকাতাকে যে ভাবে তুলে ধরা হয়েছে, সেটাও দর্শকদের টানার একটা বড় কারণ। দুর্গাপুজোর পাশাপাশি কালীঘাট মেট্রো স্টেশন বা মর্গের ছবি এ সব কিছু থেকে মুম্বইয়ের মতো শহরে বসেও কলকাতাকে খুঁজে পাচ্ছেন দর্শক। প্রীতীশ নন্দী যেমন বলছেন, “বিদ্যা বালন আর কলকাতা এটাই একটা সাংঘাতিক ককটেল। বলা ভাল, মারাত্মক মিশেল। তা ছাড়া, পর্দায় যে ভাবে কলকাতার স্পিরিট ধরা পড়েছে, তার জন্য সুজয়কে অভিনন্দন। এত দিন পর্যন্ত টুকরো টুকরো ছবি দেখা যেত কলকাতার। কিন্তু ‘কহানি’তে কলকাতা যেন অনেক বেশি জীবন্ত।”
তা হলে কি এর পর থেকে কলকাতাকে নতুন চোখে দেখবে বলিউড? প্রীতীশ নন্দীর মতে, “কলকাতা নিয়ে বলিউডের আগ্রহ আরও বাড়বে। কিন্তু বুঝবে কি না জানি না। বলিউড আর মুম্বইয়ের লোকেরা তো সারা দিন আয়নায় নিজের মুখ দেখতেই ব্যস্ত। কলকাতাকে তাঁরাই চিনবেন, যাঁরা মানুষকে বোঝেন, ইতিহাসকে বোঝেন, সিনেমাটা বোঝেন। মানুষ দিয়ে, চরিত্র দিয়ে একটা শহর তৈরি হয়। আর ‘কহানি’ সেটা দেখিয়েছে। আমি এত শহরে ঘুরেছি, কিন্তু কলকাতা আমার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শহর। যে কলকাতা আমরা দেখতে চাই, সেই কলকাতাকেই সুজয় দেখাতে পেরেছে। নস্টালজিয়া বিক্রি না করেই সেটা ও করতে পেরেছে।”
কিন্তু কলকাতার জ্যান্ত ছবি তুলে ধরার কাজটা মোটেই সহজ ছিল না বলে জানালেন পরিচালক সুজয় ঘোষ। তাঁর কথায়, “গত বছর দুর্গাপুজোর ভিড়ভাট্টার মধ্যে বাস্তব ছবি খুঁজে বের করা নিয়ে ভীষণ চিন্তায় ছিলাম। কলকাতার নানা জায়গা ঘুরে শু্যটিং করেছি। সব শেষে মনে হচ্ছে, পরিশ্রম সার্থক।” বক্স অফিসের সাফল্যে দারুণ খুশি সুজয়ও।
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে এখন ‘কহানি’ নিয়ে মন্তব্যের ছড়াছড়ি। সিনিয়র ফিল্ম সমালোচকরা তো এই ছবিকে ‘আধুনিক যুগের ক্লাসিক’ আখ্যা দিয়ে দিয়েছেন। শুধু ফিল্ম সমালোচকরা নন, শাবানা আজমি বা অমিতাভ বচ্চনের মতো ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়ররাও সাধুবাদ দিয়েছেন ‘কহানি’কে। সুজয় ঘোষের এর আগের ফ্লপ ছবি ‘আলাদিন’-এ অভিনয় করেছিলেন অমিতাভ। আর এ বার ‘কহানি’র জন্য ‘একলা চলো’ গেয়ে শ্রোতাদের মাতিয়ে দেওয়ার পরে টুইটারে অমিতাভের প্রতিক্রিয়া: “এই মাত্র বাড়িতে ‘কহানি’ দেখলাম। অসাধারণ ছবি! সুজয় আলাদিনের মতো ভুলভাল ছবি কেন বানাচ্ছিলে তুমি?”
‘কহানি’ দেখার পরে টলিউডও কি শিক্ষা নিচ্ছে?
প্রযোজক মহেন্দ্র সোনি বলছেন, “অবশ্যই। সব চেয়ে বড় শিক্ষা হচ্ছে, কলকাতায় বসেও ভাল সিনেমা বানানো যায়। সুজয় সেটা দেখিয়ে দিয়েছে। আর আমরা শুধু ভাবি গল্পটা চলবে তো, প্রচার পাবে তো? এ সব না বলে সুজয়ের মতো কাজ করে দেখাতে হবে।”

উত্তরপাড়ায় ফিল্ম সিটি গড়তে আগ্রহী অনাবাসী প্রসূন
উত্তরপাড়ায় ফিল্ম সিটি গড়তে আগ্রহ প্রকাশ করলেন অনাবাসী ভারতীয় শিল্পপতি প্রসূন মুখোপাধ্যায়। সোমবার কলকাতা পুরসভায় প্রসূনবাবুর সংস্থার প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। ছিলেন তথ্য ও সংস্কৃতি সচিব নন্দিনী চক্রবর্তী। প্রসঙ্গত, কলকাতা পুরসভার প্রায় ৪৫০ বিঘে জমি আছে উত্তরপাড়ায়। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সেখানে ফিল্ম সিটি করার পরিকল্পনা নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই জায়গা চিহ্নিত হয়েছে। সরকারের সঙ্গে পুরসভার চুক্তিও পাকা। এ দিন মেয়র বলেন, “ইউনিভার্সাল সাকসেস এন্টারপ্রাইজ নামে ওই সংস্থার প্রতিনিধির সঙ্গে প্রাথমিক কথা হল। আগে জায়গাটা ওঁরা দেখবেন। কয়েকটি গরিব পরিবার ওখানে রয়েছেন। তাঁদের পুনর্বাসন দিতে হবে।” তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর সূত্রের খবর, মোট ১০টি সংস্থা ফিল্ম সিটি গড়ার আবেদন জানিয়েছিল। পাঁচ জনের আবেদন বাতিল হয়েছে। বাকিদের মধ্যে প্রসূনবাবুর সংস্থা কাগজে-কলমে এগিয়ে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.