১৯৭৬ সাল। দেশজুড়ে অস্থিরতা। জারি হয়ে গিয়েছে জরুরি অবস্থা। সেই সময়ে নবদ্বীপের কিছু মানুষ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে নানা মেরুর হলেও যাদের ভালোবাসার জায়গা ছিল এক, শুরু করলেন এক নাট্যমঞ্চের। জন্ম হল নবদ্বীপ একাঙ্ক নাট্য প্রতিযোগিতা মঞ্চের। দলমত নির্বিশেষে ওই ‘কমন প্ল্যাটফর্ম’ চার বছরের মধ্যে ১৯৮০ সালে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়। জন্ম হয় আর এক নতুন সংগঠন নবদ্বীপ নাট্য উন্নয়ন পরিষদের। প্রচলিত নাট্য প্রতিযোগিতা বা নাট্য উৎসবের চেনা ছকের বাইরে গিয়ে নাটকের সার্বিক উন্নতির জন্য কাজ শুরু হয়। গত শুক্রবার থেকে নবদ্বীপ রাধা বাজার পার্কে শুরু হয়েছে ৩৭ তম নাট্য সম্মেলন। চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত। ১৭টি নাটক মঞ্চস্থ হবে ওই সম্মেলনে। নবদ্বীপের বিভিন্ন নাট্যগোষ্ঠী ছাড়াও গোবরডাঙা, বগুলা, চন্দননগরের কিছু নাট্যদলও রয়েছে।
গোটা জেলার নাট্য জগতে বিশেষ ভুমিকা পালন করে চলেছে নবদ্বীপ নাট্য উন্নয়ন পরিষদ। পরিষদের সভাপতি দেবাশিস নন্দী বলেন, “প্রতিযোগিতা বা নাট্য উৎসব নয়, আমাদের উদ্দেশ্য পিছিয়ে পড়া মফসস্লের নাট্যচর্চাকে সচল রাখা। অনেক টাকা খরচ করে বড় নাট্যদল এনে নাটক সব জায়গায় হয়। নিবদ্বীপ নাট্য উন্নয়ন পরিষদ চেয়েছে বিভিন্ন দলের সমন্বয় সাধন মঞ্চ হিসেবে কাজ করতে। এক দলের কোনও অসুবিধে থাকলে অন্য দল তা পূরণ করবে। পরিচালনা থেকে স্ক্রিপ্ট, আলো থেকে আবহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই কাজ গুরুত্ব দিয়ে করা হয়। আমাদের সম্মেলন মানে স্থানীয় নাট্য দলগুলির কাছে এক মেলা।” এ বছরের সম্পাদক নবকুমার কর্মকার বলেন, “কোনও রাজনৈতির পরিচয় এখানে বাধা নয়। কংগ্রেস আমল, বাম আমল বা বর্তমান তৃণমূল জমানায় সমান ভাবে সক্রিয় নাট্য পরিষদের সদস্যরা। নাট্য প্রতিযোগিতা নিয়ে বিতর্ক বহু ক্ষেত্রেই সংস্কৃতির সুস্থ পরিবেশকে নষ্ট করে। তাই আমরা উৎসব বা প্রতিযোগিতা কোনওটাতেই নেই। আমরা নাট্য উন্নয়নমুখী একটি প্রতিষ্ঠান।” চন্দননগরের সুচারু দাম রবিবার তাঁর নতুন নাটক উপস্থাপন করতে এসে বলেন, “একটা সময় নবদ্বীপের নাট্যচর্চা অত্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল। নানা কারণে তার ক্ষয় হয়েছে। তবে নাট্য উন্নয়ন পরিষদ নাট্য উৎসব বা প্রতিযোগিতার বাইরে বড় ক্যানভাসে যেভাবে এই ক্ষয়িষ্ণু ধারাটিকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে তা তাৎপর্যপূর্ণ।”
বগুলার নাট্যদলের পরিচালক সৃজন বলেন, “অন্যান্য মাধ্যমের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠতে গেলে নাট্যদলগুলির পারস্পরিক সহযোগিতা খুব জরুরি। শুধু নবদ্বীপের দলগুলির মধ্যেই নয় এই বোঝাপড়াটা যদি জেলা জুড়ে বেশ কয়েকটা দলের মধ্যে করা যায়, যদি সম্মিলিত ভাবে কোনও প্রযোজনা করা যায়, তাতে প্রয়োজনে শো কম হবে, কিন্তু একটা ভালো কাজ দেখে নাটক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া মানুষেরাও আবার ফিরে আসবেন। প্রকৃত উন্নয়ন তখনই হবে।” |