ওসামা বিন লাদেনকে নিয়ে ছবি করতে ভারতে ছুটে এসেছেন ক্যাথরিন বিগেলো। বলিউড তার আগেই বানিয়ে ফেলেছে ‘তেরে বিন লাদেন’।
এ বার ওসামার আবির্ভাব হতে চলেছে বাংলা নাটকেও।
জাঁ পল সার্ত্রের বিতর্কিত প্রহসন ‘নেক্রাসভ’-এর ছায়ায় গৌতম হালদারের নতুন নাটক, ‘ওসামা’। ১৩ মার্চ শহরের মঞ্চে তার প্রথম অভিনয়। ১৯৫৫ সালে লেখা সার্ত্রের মূল নাটকের বিষয়বস্তু ছিল, পশ্চিমী দেশগুলোর অভিজাত সমাজের চোখে কমিউনিজমের জুজু। ২০১২-য় সেই নাটক করতে গিয়ে গৌতম তাকেই বদলে দিয়েছেন লাদেনের জুজু-তে।
নাটকে প্রথম বার ওসামার নাম উচ্চারিত হয়েছিল কবে? শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি, সেটা ঘটেছিল কার্যত ৯/১১-এরও আগে। ব্রিটিশ নাট্যকার লিও বাটলার-এর নাটক ‘রিডানডেন্ট’ প্রথম মঞ্চস্থ হয় ২০০১-এর ২২ সেপ্টেম্বর। তার কয়েক দিন আগেই ঘটে গিয়েছে ৯/১১। নাটকটি লেখা হয়ে গিয়েছিল তার আগেই। দারিদ্রের সঙ্গে লড়তে লড়তে হতোদ্যম হয়ে যাওয়া একটি চরিত্র সে নাটকে বলে উঠেছিল, “এর চেয়ে ভাল, লাদেন কোনও
|
ওসামার ভূমিকায় গৌতম। |
বিস্ফোরণ ঘটাক! সব শেষ হয়ে যাক!” ইতিহাসের পাকেচক্রে নাটকটি মঞ্চে আসার মধ্যেই ঘটে গেল দুনিয়া কাঁপানো ঘটনাটা। ২০০৫-এ মঞ্চে এল আর এক ব্রিটিশ নাট্যকার ডেনিস কেলি’র নাটক। বিতর্কিত সেই নাটকের নাম, ‘ওসামা দ্য হিরো’। ৯/১১-ইরাক যুদ্ধ-সন্ত্রাসদমন কবলিত সময়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হওয়া আতঙ্ক, অবিশ্বাস আর উদ্বেগের কাহিনি।
শুধু কি নাটক? তালিবান জমানার পতনের পরে আফগানিস্তানে প্রথম তৈরি হল যে সিনেমা, তার নাম ‘ওসামা’ (২০০৩)। সিদ্দিক বারমাকের সেই বিখ্যাত ছবিতে ‘ওসামা’ আসলে একটি ছোট্ট মেয়ে। তালিবান বিধিনিষেধের শাসনে পরিবারকে সাহায্য করার তাগিদে যাকে ছেলে সেজে রোজগারের পথ দেখতে হয়। ছেলের সাজে তার নাম ওসামা। ওইটুকুই, লাদেনের আর কোনও অনুষঙ্গ নেই এ ছবিতে।
হলিউড লাদেনকে নিয়ে ছবি করার কথা ভাবছে ২০০৮ থেকেই। ‘হার্ট লকার’-খ্যাত ক্যাথরিন বিগেলো তখন ভেবেছিলেন, মার্কিন বাহিনীর লাদেনকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়ানোর গল্পই বলবেন তিনি। ‘অপারেশন জেরোনিমো’ তাঁকে গল্পের উপসংহার উপহার দিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে লাদেনের জীবিতাবস্থাতেই বলিউড বানিয়ে ফেলেছে ‘তেরে বিন লাদেন’। যেখানে এক সাংবাদিক মার্কিন মুলুকের সংবাদমাধ্যমে কাজ করার স্বপ্ন সার্থক করতে অবিকল লাদেনের মতো দেখতে একটি লোককে ‘লাদেন’ সাজায়।
গৌতমের নাটকেও সাংবাদিক এবং সংবাদমাধ্যমে নকল ওসামা হাজির হওয়ার গল্প আছে। যেমনটি ছিল সার্ত্রের নাটকেও। সেখানে নেক্রাসভ নামে কাল্পনিক চরিত্রটি ছিল সোভিয়েত রাশিয়ার ‘ফেরার’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। গৌতম বললেন, “ওসামা বিন লাদেন মারা গেলেও লাদেন নামক ‘মিথ’টা কিন্তু বেঁচেই আছে। লাদেনের মৃতদেহের ছবিও প্রকাশ করা হয়নি।” নাদেন আদৌ সমুদ্রগর্ভে সমাহিত নাকি আমেরিকার মাটিতে, সেই বিতর্কও মাথা তুলেছে ফের। এই ‘মিথ’কেই আয়নার মতো ব্যবহার করে এ নাটকের প্রধান চরিত্র, যে আসলে একটি ঠক। চার্লস শোভরাজের কথা মনে করিয়ে দিয়ে যার আসল নাম, চার্লস। তার হাতে আক্ষরিক অর্থেই রয়েছে আয়না, যেখানে দর্শক দেখতে পায় নিজেকেও।
নাট্যভাষার ওই নিজস্ব জোরটাই হয়ে উঠুক নাটকের প্রকৃত নায়ক, চাইছেন ওসামা ওরফে চার্লস! থুড়ি, গৌতম হালদার। |