সন্ধ্যা পাগলী
বয়স প্রায় ষাট। পেশায় ভিক্ষুক। আধপাগল। এলাকায় পরিচিত সন্ধ্যা পাগলী নামে। এ রকম ভবঘুরে ভিক্ষাজীবী মানুষদের যে কোনও রাস্তায় যখন তখন দেখা যায়। দক্ষিণ দিনাজপুরের সন্ধ্যাও এমনই এক জন। কিন্তু অনেকটাই আলাদা। নিজস্ব আদলে তৈরি তার নীতি-আদর্শের কথা আশেপাশের লোকের মুখে মুখে ঘোরে। সন্ধ্যা অবস্থাপন্ন কৃষক পরিবারের মেয়ে। ছোটবেলায় বাবা-মা’র মৃত্যুর পর মামারা সম্পত্তি আত্মসাৎ করে নেয়। তখন থেকেই সে অর্ধ-উন্মাদ। কিশোরী বয়সে রাস্তা হারিয়ে চলে আসে নালগোলা গ্রামে। বেশ কয়েক বার স্থানীয় ‘ভদ্রলোক’দের দ্বারা ধর্ষিত হয়। পরে স্থানীয় মানুষই তাকে রক্ষা করে। আশ্রয় মিলেছে তেঁতুলমোড়া গ্রামের সহনা মৃধার বাড়িতে। প্রতি দিন রিকশা চড়ে সে আড়াই কিলোমিটার দূরে চলে আসে ভিক্ষের জন্য। চটের বস্তা চিরসাথি। লোকে বলে, ওর মধ্যে রয়েছে অনেক টাকা। শোওয়ার সময় মাথার নিচে ওই চটের বস্তা রাখা থাকে বালিশের মতো। শরীরে একের পর এক জামাকাপড়। সবই নতুন কেনা। এক বার পরলে আর খুলবে না। খুললে আর পরবে না। মুখের ভেতর দুই গালে দু’টি পান ধরা থাকে সকাল থেকে সন্ধ্যা। চিবোয় না।
এহেন সন্ধ্যার ভিক্ষে করার পদ্ধতিও অন্য রকম। লোক বিশেষে এক-দুই-পাঁচ-দশ টাকাভিক্ষের রেট বাঁধা। আশেপাশের সকলের নাম মুখস্থ। নাম ধরে ডেকে নিজের ধার্য টাকা চেয়ে নেয়। পালানোর উপায় নেই। দিনে রোজগার ২০০ টাকা। সে নিজেও কাউকে ফাঁকি দেয় না। জামা-কাপড় কিনলে দাম মিটিয়ে দেয়। এমনকী দাম কমানোর আবেদন পর্যন্ত করে না। রিকশা ভাড়াও মিটিয়ে দেয়। বাড়ি ফেরার সময় সন্ধ্যার দু-হাতে থাকে থলে ভর্তি বাজার। এ সবই আশ্রয়দাতা পরিবারের জন্য। কৃতজ্ঞতা স্বরূপ এটুকু করে সে। এটি সন্ধ্যা পাগলীর নিজস্ব সিদ্ধান্ত। সততা ও নিষ্ঠার জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা সন্ধ্যাকে ভালবাসেন। সমাজের সর্ব স্তরের কালোর মধ্যে এখনও যে কিছু আলোর রেখা আছে, এ ঘটনা সেটাই প্রমাণ করে। যে সমাজের মুষ্টিমেয় কিছু অংশের অত্যাচারে জীবনের প্রথম বেলাতেই অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছিল সন্ধ্যার জীবনে, তারই অন্য একটি অংশ ওকে হারিয়ে যেতে দেয়নি। তাই বুঝি সমাজ আজও চলছে।

সত্যপিরের গান
সত্যপিরের গান উত্তর দিনাজপুর জেলার লুপ্তপ্রায় সঙ্গীতগুলোর মধ্যে অন্যতম। সত্যপীর হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের দেবতা। সত্যপিরের মহিমা নিয়ে অনেক পালা রচিত হয়েছে। যেমন হিরা মুচি, দীপক চাঁদ, কিষাণ জাহির, ভীমা চোর, অশোক নুরি, করিম বাদশা, বিশু কাঙাল, আয়ুব বাদশা পিতার নাম প্রভৃতি। এ সব পালায় সত্যপিরের মহিমার সঙ্গে সমাজের জাতিভেদ প্রথা, খাদ্যদ্রব্য, বেশভূষা, বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণ, বৈধব্য যন্ত্রণা, শ্রমিকদের যন্ত্রণা প্রভৃতি সমস্যাগুলোকে আঞ্চলিক ভাষায় তুলে ধরা হয়। এক কথায়, একে উত্তর দিনাজপুরের লোকজীবনের দলিল বলা যায়। এই জেলায় রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষজন অসুখবিসুখ থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায়, বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণের জন্য জন্য এই গানের আয়োজন করে থাকেন। এমনকী বিয়ের সময়ও এই গান গাওয়া হয়। প্রত্যেক দলে এগারো জন করে সদস্য থাকে। দলের মূল গায়ককে ‘গাইন’ বলা হয়। তার পরনে থাকে সাদা পাঞ্জাবি ও পাজামা। কাঁধে লাল চাদর ও মাথায় লাল টুপি। আর হাতে থাকে চামর। গাইনরা তাঁদের বাড়িতে সত্যপিরের মাজার প্রতিষ্ঠা করে শিরনি প্রদান করে থাকেন। তবে গায়করা কোনও দিনই যথাযোগ্য সম্মান ও আর্থিক সাহায্য পান না। ফলে দিন দিন এই গানের প্রতি তাঁদের আগ্রহ কমছে। অনেকে পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। হয়তো এক দিন সত্যপিরের গান চিরতরে লুপ্তই হয়ে যাবে।

নাট্য-কর্মশালা
উত্তর দিনাজপুর জেলার ছোট শহর কালিয়াগঞ্জ। শহরটি ছোট হলেও জেলার সংস্কৃতি চর্চায় তার অবদান মোটেও কম নয়। এই শহরের একটি নাট্যদল ‘যাত্রিক নাট্যগোষ্ঠী’। বয়স চল্লিশ বছর। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় পঞ্চাশটি নাটক প্রযোজনা করেছে তারা। নাট্যচর্চা ও প্রযোজনার পাশাপাশি তারা নিয়মিত নাট্য-কর্মশালারও আয়োজন করে আসছে। সম্প্রতি পঞ্চাশ জন কচিকাঁচাকে নিয়ে শুরু হয়েছিল এদের ‘শিশু কিশোর নাট্য কর্মশালা ২০১১-২০১২’। এই কর্মশালায় বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণের পাশাপাশি একটি শিশু-কিশোর নাটকও প্রযোজিত হয়েছে।

বন্যপ্রাণ সপ্তাহ
বন ছেড়ে বন্যরা আজ কেন লোকালয়ে চলে আসছে? এর জন্য দায়ী কারা? এর সমাধানই বা কী? এ সব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে সম্প্রতি ময়নাগুড়িতে এক ঘণ্টার একটি নাটক পরিবেশন করল স্থানীয় পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের সদস্যরা। এ ভাবেই উদ্যাপিত হল বন্যপ্রাণ সপ্তাহ। প্রভাতফেরি দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বন ও বন্যপ্রাণীদের গুরুত্ব প্রসঙ্গে আলোচনারও আয়োজন করা হয়। এ বিষয়ে কবিতা পাঠ করে ছয় বছরের অনন্যা দে। সবশেষে ছিল নাটকটি। নাম ‘ধ্বংস’। নাটকটির রচনা এবং নির্দেশনায় অশোককুমার বিশ্বাস।

লড়াকু সুমন
আলিপুর ব্লকের প্রত্যন্ত ‘পারপাতলা খাওয়া’ গ্রামের ছেলে প্রতিবন্ধী সুমন সরকার। বয়স কুড়ি। সুমনের হাত ও পা দুই-ই অচল। তবে দু-হাত দিয়ে সে ধীর গতিতে লিখতে পারে। সুমন শিলবাড়ি হাট উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। সরকারি সাহায্যে পাওয়া একটি ট্রাই-সাইকেল তার সঙ্গী। এই সাইকেলটিতেই বসেই তার দিনের অনেকটা সময় কেটে যায়। প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও পড়াশোনায় সুমনের দারুণ উৎসাহ। কোনও গৃহশিক্ষক নেই। কাকা অঙ্ক, ইংরেজি দেখিয়ে দেন। অন্যান্য বিষয়গুলি সুমনকে নিজে নিজেই পড়ে নিতে হয়। । মা রোজ সুমনকে স্কুলে পৌঁছে দেন। ছুটির শেষে নিয়ে আসেন। বিকেলে খুড়তুতো ভাইরা নিয়ে যায় বাইরে বেড়াতে। এই ভাবে অন্যের ওপর নির্ভর করেই তার দিন কাটে। সুমন বড় দুঃখী। শত কষ্টের মধ্যেও সে জীবনপণ লড়াই করে চলেছে। লেখাপড়া করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.