দুষ্কর্ম বাড়ছে, প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষোভ
ত দিন এমন বেপরোয়া-কাণ্ড পাশের রেলশহর খড়্গপুরে একাধিক বার ঘটলেও অনেকটাই নিরুপদ্রব ছিল মেদিনীপুর। সেই নিশ্চিন্তি এ বার ভেঙে চুরমার হওয়ার উপক্রম হয়েছে শহরবাসীর। দিনে দিনে আইনশৃঙ্খলার ক্রমেই অবনতি এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করছে শহরবাসীর মনে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রশ্নে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‘ব্যর্থতা’র অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। প্রধান শাসকদলের বিরুদ্ধেও ধোঁয়াচ্ছে ক্ষোভ।
সকালবেলায় কেরানিতলার গুলি-কাণ্ড নিয়েই বুধবার দিনভর আলোচনা চলেছে রাস্তার মোড়ে মোড়ে। যে আলোচনা জুড়ে উদ্বেগ আর সংশয়। শহর মেদিনীপুরও কি তা হলে দুষ্কৃতীদের ‘নিরাপদ’ ডেরা হয়ে উঠছে? এখানেও কি এ বার প্রকাশ্যে বন্দুক নিয়ে ঘুরে বেড়াবে অচেনা যুবকের দল? অজানা আশঙ্কায় দিন কাটাতে হবে? বুধবারের পর এই সব প্রশ্নই ঘুরেফিরে আসছে। কেরানিতলার ঘটনার পর যে শহরের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, তা মানছেন মেদিনীপুরের উপ-পুরপ্রধান এরশাদ আলিও। তাঁর কথায়, “এই শহরে এ ধরনের ঘটনা ভাবাই যায় না। প্রকাশ্যে গুলি ছুড়ে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে গেল। কাউকে ধরা গেল না! শহরবাসীর উদ্বেগ স্বাভাবিক।” পুলিশ অবশ্য যথাসম্ভব আশ্বস্ত করছে, উদ্বেগের কিছু নেই। বিচ্ছিন্ন ঘটনা। জেলার সদর-শহরে সব সময়েই নজরদারি চলে। নজরদারি আরও বাড়ানো হচ্ছে। পুলিশের এই আশ্বাসেও অবশ্য উদ্বেগ ঢাকা পড়ছে না।
গুলি চলে এই বেআইনি ক্লাবঘরের পাশেই। জনতাই ভেঙে দিল সেই ক্লাব। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
এক সময়ে রেলশহর খড়্গপুরে ছিল দুষ্কৃতীদের অবাধ বিচরণ। প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি চালানো থেকে শুরু করে লুঠপাট, ছিনতাইয়ের ঘটনাও হত হামেশাই। পরে অবশ্য সেখানে পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়। তবু, রেলশহর এখনও ‘সুরক্ষিত’ নয়। মাঝেমধ্যেই চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। তুলনায় শহর মেদিনীপুর ছিল অনেকটাই নিরুপদ্রব। এমনকী মাওবাদীদের চূড়ান্ত তৎপরতার সময়েও এই শহর থেকেছে মোটামুটি ‘ঘটনাহীন’। তবে ইদানীং পর পর কয়েকটি ঘটনার পরে সেই ‘নিশ্চিন্তি’ চুরমার হওয়ারই উপক্রম হয়েছে।
বড়দিনের আগে, গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে মেদিনীপুর শহর লাগোয়া আবাস এলাকায় এক বিলিতি মদের দোকানের সামনে গুলি চলে। গুলিবিদ্ধ হন মুক্তি মাইতি। গুরুতর আহত অবস্থায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। দু’দল দুষ্কৃতীর বচসার জেরেই সে বারও গুলি চলেছিল বলে পুলিশের দাবি।
গত বছর ১২ সেপ্টম্বর দুপুরে মেদিনীপুর আদালত থেকে ফেরার পথে মোহনপুরে খড়্গপুরের ‘মাফিয়া ডন’ বাসব রামবাবুর গাড়ি লক্ষ করে গুলি চলে। রামবাবুর সঙ্গী ভেঙ্কট রাও ছাড়াও গুলি লাগে কৃষ্ণকান্ত রায় নামে এক পথচারীর। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।
গত বছর ৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে সিপাইবাজার এলাকার এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ডাকাতির চেষ্টা হয়। পালানোর সময়ে এক দুষ্কৃতী ধরা পড়ে যায়। ব্যাঙ্ককর্মীদের তৎপরতায় ডাকাতি সম্ভব না-হলেও ওই ঘটনায় এলাকা জুড়ে আতঙ্ক ছড়ায়।
গত বছর ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে শহরের জগন্নাথ মন্দিরচক এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ির অদূরেই এক গহনার দোকানে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। শোরগোলে লোকজন বাড়ির বাইরে বেরোতেই গুলি ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। পুলিশের পৌঁছতে লেগে যায় ঘণ্টা খানেক।
এই ঘটনাক্রমই বুঝিয়ে দিচ্ছেআইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশের ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’র তত্ত্ব খুব গ্রহণযোগ্য নয়। শহরবাসী দেখছেন, অচেনা যুবকদের সন্দেহজনক ঘোরাঘুরি বেড়েছে রাজপথে। দিনের বেলাতেই বসছে জুয়ার আসর। বিধাননগর, শরৎপল্লি এলাকায় চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনাও বেড়েছে সম্প্রতি। রাস্তার ধারেই গজিয়ে উঠছে তথাকথিত ‘ক্লাবঘর’। যত্রতত্র অস্থায়ী নির্মাণ। কোথাও আবার রীতিমতো পাকা বাড়ি! শহরবাসীর অভিযোগ, সব জেনেও পুলিশ-প্রশাসন নির্বিকার। এক পা এগোনোর বদলে বরং দু’পা পিছিয়ে যায়। অবৈধ নির্মাণের পিছনে রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মদত। তাই পুলিশ-প্রশাসনের হাত-পা বাঁধা। বুধবার সকালে কেরানিতলায় গুলি চালানোর ঘটনাটি ঘটে যেখানে, তার পাশেও এমন একটা ক্লাবঘর গজিয়ে উঠেছে সম্প্রতি। অদূরে রয়েছে শাসক তৃণমূলের কার্যালয়। গুলি চালানোর ঘটনার পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ এই ক্লাবঘর ভাঙচুর করেন। তাঁদের অভিযোগ, ওই ক্লাবঘরে এমন অনেকের যাতায়াত লেগে থাকে, যাদের ‘গতিবিধি’ সুবিধার নয়।
বুধবার ওই ক্লাবঘরের মধ্যে থেকে মদের বোতলও উদ্ধার হয়। স্থানীয়দের বক্তব্য, চাইলেই পুলিশ পদক্ষেপ করতে পারে। কিন্তু করে না। কাদের মদতে শহরের আনাচে-কানাচে এই সব ‘অবৈধ’ ক্লাবঘর গড়ে উঠছে, সে নিয়ে আবার রাজনৈতিক চাপানউতোর লেগে রয়েছে। সিপিএম নেতা হিমাদ্রি দে বলেন, “তৃণমূলের মদতেই এ সব হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত অবনিত হচ্ছে। পুলিশ নিষ্ক্রিয়।” এ দিন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ যে ক্লাবঘরটি ভাঙচুর করেন, সেখানে আবার তৃণমূলের পতাকাও রাখা ছিল। যদিও তৃণমূলের বক্তব্য, এ সবই ষড়যন্ত্র। জেলা তৃণমূল সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “পুলিশ তদন্ত করলেই সব স্পষ্ট হবে। ওই ক্লাবে সিপিএম কর্মী-সমর্থকদেরই যাতায়াত ছিল।” পুলিশের সুরেই দীনেনবাবুরও দাবি, “এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। মেদিনীপুর শান্তির শহর। শান্তি বিঘ্নিত যাতে না হয় সে জন্য পুলিশকে নজরদারি বাড়ানোর কথা বলেছি।”
এ-সব কথার কচকচি নিয়ে মানুষের আগ্রহ সামান্যই। তাঁরা শঙ্কিত শহরটার তলে তলে ‘অরক্ষিত’ হয়ে পড়া নিয়ে। বুধবারের ঘটনা তাঁদের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.