|
|
|
|
সম্পাদক সমীপেষু... |
হায়, ‘হেরিটেজ’-দর্শন! |
সরস্বতী পুজোর পর দিন আমরা কলকাতার দ্রষ্টব্য দুটো বাড়ি দেখতে গিয়েছিলাম। জোড়াসাঁকোয় গিয়ে দেখি, পর্যটকদের ভিড়, কিন্তু গেট বন্ধ। সরস্বতী পুজো উপলক্ষে শনি-রবি পরপর দু’দিন ছুটি। হতাশা আরও বাড়ল যখন জানা গেল, সোমবার সাপ্তাহিক ছুটি। সেখান থেকে গেলাম মার্বেল প্যালেস। অনুমতিপত্র অন্য কোথা থেকে নাকি সংগ্রহ করতে হবে। গেটের ধারে দারোয়ানকে টাকা দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। ওখানে একটা টিকিটঘর থাকলে টাকাটা কোথায় গেল সে বিষয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া যেত। ভেতরের অবস্থা আরও চমকপ্রদ। হেড দারোয়ান বিভিন্ন দারোয়ানের হাতে পর্যটকদের দল ভাগ করে দিচ্ছে। পান চিবোতে চিবোতে অশিক্ষিত দারোয়ানের দল দিব্যি গাইডে পরিণত হচ্ছে। এ রকমই এক জন আমাদের পথ-প্রদর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হল। টিমটিমে আলোয় মহামূল্যবান আসবাব শিল্পসামগ্রীর ধুলো ফাটাফুটো তেমন চোখে পড়ছে না, ওইটুকুই যা লাভ। একটু বাদে খেয়াল হল, গাইড শুধু সেই সব জিনিসই দেখাচ্ছে যেখানে তলায় নামগুলো লেখা আছে। ‘আমরা পড়তে পারি। আমাদের সঙ্গে থাকার কোনও দরকার নেই’ কথাটি সবিনয় জানাবার পরেও সে ছিনেজোঁকের মতো লেগে রইল। |
|
বেহাল। মার্বেল প্যালেস। |
সবচেয়ে রোমহর্ষক ঘটনাটা ঘটল পেন্টিং রুমে। একটি বিদেশিনির ছবি দেখিয়ে সে বলল, ‘ইয়ে রুবেন্সকা শাদি কা তসবির’। ছবির নীচে লেখা ম্যারেজ, সেন্ট ক্যাথরিন, রুবেন্স। বললাম রুবেন্স পেন্টার হ্যায়। সে জোরের সঙ্গে বলল, ‘পেন্টার ভি হ্যায়। উও আপনা শাদি কা তসবির বানায়া।’ আমরা সমস্বরে প্রতিবাদ করি রুবেন্স লেড়কি নহি, মরদ হ্যায়। রুবেন্সের লিঙ্গ নির্ধারণ নিয়ে খানিকক্ষণ বাদানুবাদের পর আমাদের গভীর অজ্ঞতা দেখে হতাশ হয়ে সে হাল ছেড়ে দেয়। কলকাতাবাসী হওয়া সত্ত্বেও আমাদের অভিজ্ঞতা যদি এই রকম হয়, অন্যান্য প্রদেশ এবং বিদেশি পর্যটকদের কী অবস্থা হচ্ছে ভেবে সত্যিই লজ্জা পেলাম। কলকাতায় সাধারণ পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো যা দু-চারটি দ্রষ্টব্য আছে, ঐতিহ্যবাহী এই প্রাসাদটি তার অন্যতম। এর দর্শনী ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে কর্তৃপক্ষ আরও একটু পেশাদার মনোভাব গ্রহণ করলে ক্ষতি নেই।
ঋতা বসু। কলকাতা-১৯
|
‘খিচুড়ি’ প্রকল্প |
সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্প নিয়ে ঝর্না পান্ডার লেখা পড়লাম। আই সি ডি-এর সঙ্গে আমার পরোক্ষ যোগাযোগ প্রায় আড়াই যুগ। স্বাধীন সাংবাদিক হিসাবে একাধিক দৈনিকে এই প্রকল্পের ত্রুটি-বিচ্যুতির কথা লিখেছি। আই সি ডি এস প্রকল্প যত পুরনো হচ্ছে নিত্যনতুন দুর্নীতি যেন একে ঘিরে ধরছে। আমি একটু বিস্তারিত ভাবে বলতে চাই।
এই প্রকল্পে সমস্ত সুপারভাইজারই মহিলা। মাসিক বেতন পঁচিশ থেকে চল্লিশ হাজারও বটে। কিন্তু শ্রীমতী পান্ডার বক্তব্য অনুযায়ী, অধিকাংশ সুপারভাইজারের থাকে ৪০ থেকে ৭০টি সেন্টার। যাঁদের ২০ থেকে ২৫টি সেন্টার থাকে, তেমন সুপারভাইজার কয়েক জন আছেন।
সুপারভাইজারদের এক-একটি সেন্টার ভিজিট করতে আসা-যাওয়া নিয়ে সাত-আট মাইল হাঁটতে হয়। যদি একটি ভ্যান গাড়ি নেন, তা হলে যাতায়াতের ভাড়া কম করে একশো টাকা। শেয়ারে গেলে কিছু কম হয়। সুপারভাইজারদের রিপোর্ট সি ডি পি ও-রা মানবেন কেন?
কোনও অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারে ডিম না-দেওয়া হলে সুপারভাইজাররাই আক্রান্ত হন। ফিডিং রোস্টার থেকে শুরু করে সব খাতাপত্র মাসে এক দিন সুপারভাইজ করে ফিডিং দেওয়ায় গরমিল হচ্ছে কি না, তা বোঝা সম্ভব? সুপারভাইজাররা তবু একটু স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারতেন যদি আই সি ডি এস-এর সাদা-নীল জিপটা ওঁদের দেওয়া হত। যদি সি ডি পি ও এবং এ সি ডি পি ও-রা সুপারভাইজারদের সঙ্গে পরিদর্শন করতেন।
আমি এক সি ডি পি ও-কে জানি, যিনি অফিসে আসতেনই না। সবার থেকে মোবাইলে রিপোর্ট নিতেন। একজন মহিলা সুপারভাইজার মোবাইল কিনতে নিমরাজি হলে তাঁকে অপমান করা হয়। এবং তিনি স্বামীকে না-জানিয়ে মোবাইল কিনতে বাধ্য হন। খারাপ চাল, ডাল, সবজি সব কিছু নিয়ে সুপারভাইজারদের দেওয়া রিপোর্ট সি ডি পি ও-রা দেখেও দেখেন না। এস ডি পি ও-র কাছে দৌড়ান মনোমত জায়গায় পোস্টিং পেতে।
সি ডি পি ও-রা যদি অফিসের আইনকানুন ডবলিউ বি এস আর-এর মাধ্যমে না-বোঝেন, ভুল ইংরেজি লেখেন, আর দু’পয়সা কামাবার ধান্দা করেন, তা হলে সুপারভাইজাররা মহিলা হয়ে কী করতে পারেন? বিশেষত, যদি কোনও কোনও ক্ষেত্রে কোনও অঙ্গনওয়াড়ির প্রতি সি ডি পি ও দুর্বল হয়ে ওঠেন? আইসিডিএস প্রোজেক্ট-কে ঠিক করতে সর্বাগ্রে ঠিক করা প্রয়োজন সি ডি পি ও-দের।
তরুণকুমার রায়। শকুন্তলা পার্ক, কলকাতা-৬১
|
ছাত্র ও শিক্ষক |
১৯৩০ সালের সেপ্টেম্বরে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেখানে একটি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের অপরাধ ও শাস্তি বিষয়ক তাঁর এক কথোপকথন সব দিক দিয়েই যেন অলীক মনে হয়। বিশেষত শিক্ষাক্ষেত্রে এই অন্ধকার সময়ের প্রেক্ষিতে।
আমি এদের জিজ্ঞাসা করলুম, ‘কেউ কোনও অপরাধ করলে এখানে তার বিধান কী?’ একটি মেয়ে বললে, ‘আমাদের কোনও শাসন নেই, কেননা আমারা নিজেদের শাস্তি দিই।’... একটি মেয়ে বললে, ‘বিচারসভা যাকে বলে তা নয়, আমরা বলাকওয়া করি। কাউকে অপরাধী করাই শাস্তি, তার চেয়ে শাস্তি আর নেই।’ একটি ছেলে বললে, ‘সেও দুঃখিত হয়, আমরাও দুঃখিত হই, ব্যস, চুকে যায়।’ আমি বললুম, ‘মনে করো, কোনও ছেলে যদি ভাবে, তার প্রতি অযথা দোষারোপ হচ্ছে তা হলে তোমাদের উপরেও কারও-কারও কাছে কি সে ছেলের আপিল চলে?’ ছেলেটি বললে, ‘তখন আমরা ভোট নিই অধিকাংশের মতে যদি স্থির হয় যে সে অপরাধ করেছে, তা হলে তার উপর আর কথা চলে না।’ আমি বললুম, ‘কথা না চলতে পারে, কিন্তু তবু ছেলেটি যদি মনে করে, অধিকাংশ তার উপরে অন্যায় করছে তা হলে তার কোনও প্রতিবিধান আছে কি?’ একটি মেয়ে বললে, ‘তা হলে হয়তো আমরা শিক্ষকদের পরামর্শ নিতে যাই কিন্তু এ রকম ঘটনা কখনও ঘটেনি।’ |
(রাশিয়ার চিঠি, ৬) |
পাচু রায়। কলকাতা-৫৫ |
|
|
|
|
|