একটি বৈদ্যুতিন চ্যানেলের সাংবাদিক ও আলোকচিত্রীকে মারধরের অভিযোগে বাঁকুড়ার ইঁদপুর থানার ওসি এবং দুই কনস্টেবলকে পুলিশ লাইনে ‘ক্লোজ’ করা হল। এক অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর এবং এক কনস্টেবলকে সাসপেন্ডও করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের অভিযোগ, শুক্রবার রাতে খাতড়া-বাঁকুড়া রাস্তায় ট্রাক থামিয়ে পুলিশের তোলাবাজির ছবি তোলাতেই দু’জনকে ধরে থানায় নিয়ে গিয়ে পেটানো হয়। ওসি কৌশিক মিশ্র তোলাবাজি ও মারধরের অভিযোগ মানতে চাননি। তবে বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার প্রণব কুমার বলেন, “সাংবাদিকদের মারধর অভিযোগে ওসি-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের কেউ তোলা তুলছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) গঙ্গেশ্বর সিংহ বলেন, “প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে।”
শুক্রবার রাতে পাঁচ সাংবাদিক ও আলোকচিত্রী একটি গাড়িতে খাতড়া থেকে বাঁকুড়া শহরে ফিরছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, ইঁদপুর থানার কাছেই পাথর বোঝাই ট্রাক থামিয়ে তোলা আদায় করছিল পুলিশ। ছবি তোলা শুরু করতেই তারা দৌড়ে পালায়। কিছুটা পিছু ধাওয়া করে ফিরে এসে তাঁরা গাড়িতে চাপেন। তখনই সাদা পোশাকে কিছু পুলিশকর্মী তাঁদের গাড়ি ঘিরে ধরেন। মাওবাদী ধরা পড়েছে জানিয়ে এলাকার কিছু লোকজনকেও উস্কানো হয়। পাঁচ জন গাড়ি থেকে নামলে জনতা দু’জনকে ধাওয়া করে। এক জন পড়ে গিয়ে চোট পান। তাঁকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। বাকি দু’জনকেও পেটাতে পেটাতে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। থানায় নিয়ে গিয়েও তাঁদের পেটানো হয়। পরে তিন জনকেই লকআপে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।
যে দু’জনকে জনতা তাড়া করে, তাঁরা অবশ্য গা ঢাকা দিতে পেরেছিলেন। পরে তাঁরাই অন্য সাংবাদিকদের ফোন করেন। খবর পেয়ে পুলিশ সুপার রাতে থানায় গিয়ে তিন সাংবাদিক ও আলোকচিত্রীকে ছাড়ার ব্যবস্থা করেন। ওসি অবশ্য দাবি করেন, “পুলিশের বিরুদ্ধে তোলাবাজি বা মারধর করার অভিযোগ ঠিক নয়। স্থানীয় বাসিন্দারা ওঁদের মারধর করছিলেন। পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে।” শনিবারই পুলিশ সুপারের হাতে ওই রাতের ‘ভিডিও ফুটেজ’ তুলে দেন সাংবাদিকেরা। জনতা কেন হঠাৎ সাংবাদিকদের উপরে চড়াও হতে যাবে, তার সদুত্তরও ওসি দিতে পারেননি। পুলিশ সুপার জানান, ওসি ছাড়াও প্রভাত রাজোয়াড় ও গুরুপদ দাস নামে দুই কনস্টেবলকে ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে। সাসপেন্ড হয়েছেন এএসআই অমিত সান্যাল ও কনস্টেবল নারায়ণ ঘোষ। ঘটনাচক্রে, কয়েক দিন আগেই তোলাবাজির অভিযোগে ওই থানার এক কনস্টেবলকে সাসপেন্ড করা হয়। সারেঙ্গা থানার সাব-ইন্সপেক্টর গৌতম সিকদারকে আপাতত ইঁদপুর থানার ওসি-র দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। |