শুধু একটু ‘স্ক্রিনিং’ আর প্রথম অবস্থায় রোগ চিহ্নিত করতে পারা। তাতেই প্রাণে বেঁচে যেতে পারেন কয়েক হাজার মহিলা। কারণ, প্রথম অবস্থায় জরায়ুমুখ ক্যানসার ও স্তন ক্যানসার ধরা পড়লে ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগী সুস্থ হয়ে যান। অথচ, ভারতে প্রতি বছর যত মহিলা ক্যানসারে মারা যান তাঁদের সিংহভাগই জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত! দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে স্তন ক্যানসার।
কিন্তু কেন? রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তারাই স্বীকার করছেন, এইচআইভি, ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা নিয়ে যা প্রচার চালানো হয় তার সিকি ভাগ অর্থও ক্যানসার প্রতিরোধের প্রচারে ব্যয় করা হয় না। এক জন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার বছরে অন্তত এক বার স্তন পরীক্ষা করা উচিত বা পাঁচ বছরে অন্তত এক বার জরায়ুমুখ পরীক্ষা করানো দরকার এই সচেতনতার অভাব রয়েছে শিক্ষিতদের মধ্যেও। যে কোনও সরকারি হাসপাতালে নিখরচায় জরায়ুমুখ ক্যানসার নির্ণয়ে ‘প্যাপ স্মিয়ার’ বা ‘অ্যাসেটিক অ্যাসিড’ টেস্ট হয়, এই সহজ তথ্যটুকুই সরকার এখনও সবাইকে জানাতে পারেনি। |
স্বাস্থ্য কর্তাদের একাংশই বলছেন, ক্যানসারের প্রচারে এই গাফিলতি খানিকটা ইচ্ছাকৃত। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “দিল্লির অফিসারেরা আমাদের বললেন, জরায়ুমুখ ক্যানসার বা স্তন ক্যানসারের স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক করলে যাঁদের ক্যানসার ধরা পড়বে তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থাও সরকার থেকে করতে হবে। সেই পরিকাঠামো এখনই করা সম্ভব নয়। ফলে এখন স্ক্রিনিং নিয়ে কোনও প্রচার না-করাই ভাল।” আর এক স্বাস্থ্য কর্তার কথায়, “প্রতিদিন ইনডোর-আউটডোরে রোগীর চাপ সামলে আলাদা করে ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ে সময় দেওয়া অনেক সরকারি হাসপাতালেই সম্ভব হবে না। ফলে মানুষকে বেশি জানানোর দরকার নেই।”
এই জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সরকারি চিকিৎসকেরাই। যেমন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, “বাড়ির মেয়েরা এমনিতেই নিজেদের শারীরিক অসুবিধাকে গুরুত্ব দেন না। স্তনে মাংসপিণ্ড বুঝতে পেরেও বা ঋতুস্রাবের সময় ছাড়া অন্য সময়ে রক্তপাত হলেও মনে করেন, ছেলের পরীক্ষাটা হয়ে যাক বা স্বামী অফিসের ছুটি পাক, তবে ডাক্তারের কাছে যাবেন। এর উপর সরকারও যদি গাফিলতি দেখায়, তা হলে সমস্যা কোথায় পৌঁছবে বোঝাই যাচ্ছে।”
২০১১ সালেই ‘ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ফর নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ’ প্রোগ্রাম চালু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এতে যে অসংক্রামক রোগগুলি প্রতিরোধ ও চিকিৎসার ব্যাপারে সরকার উদ্যোগী হয়েছে, তার অন্যতম ক্যানসার। টাকা পয়সাও অনেকটা পেয়ে গিয়েছে রাজ্যগুলি। তার পরেও কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে জরায়ুমুখ ক্যানসার বা স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের আলাদা কোনও প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়নি।
চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালের চিকিৎসক পার্থ বসু জানিয়েছেন, ২০১০ সাল থেকে তাঁদের হাসপাতালের তরফ থেকে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি ও পূর্ব মেদিনীপুরে ২৫-৬০ বছরের মহিলাদের জরায়ুমুখ ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের কাজ হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ১৭ হাজার মহিলার স্ক্রিনিং হয়েছে। ২৫ জনের ক্যানসার ধরা পড়েছে। প্রি-ক্যানসার স্টেজ ধরা পড়েছে ১২০ জনের। সময় মতো চিকিৎসায় তাঁরা বেঁচে গিয়েছেন। সরকার একটু সচেতন হলে এবং সরকারি স্তরে এই রকম স্ক্রিনিং শুরু হলে প্রতি বছর কয়েক হাজার মহিলাকে ক্যানসারের হাত থেকে বাঁচানো যেতে পারে। |
সজাগ থাকা |
জরায়ুমুখ ক্যানসার
• টানা সাদাস্রাব
• দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব
• মাঝে মাঝে রক্ত বার হওয়া
• শারীরিক সম্পর্কের পর রক্ত বার হওয়া
• তলপেটে ব্যথা |
স্তন ক্যানসার
• স্তনে মাংসপিন্ড
• স্তনবৃন্তের রঙ বদলানো
• স্তনবৃন্ত ঢুকে যাওয়া
• একটি স্তন ছোট বা বড় হয়ে যাওয়া
• স্তনবৃন্ত থেকে রস বা রক্ত বার হওয়া |
ভারতে |
জরায়ুমুখ ক্যানসার
• বছরে আক্রান্ত হন প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার
• বছরে মৃত প্রায় ৮৫-৯০ হাজার |
স্তন ক্যানসার
• বছরে আক্রান্ত হন আনুমানিক ১ লক্ষ
• বছরে মৃত প্রায় ৮০ হাজার |
|
সমালোচনার সামনে পড়ে স্বাস্থ্য দফতরের টেকনিক্যাল অফিসার অসিত বিশ্বাস জানিয়েছেন, অসংক্রামক রোগের কর্মসূচিতে প্রথম দফায় দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও দক্ষিণ দিনাজপুরের জন্য টাকা পাওয়া গিয়েছে। একটু দেরি হলেও এ বার রাজ্যে শিলিগুড়িতে প্রথম সরকারি স্তরে জরায়ুমুখ ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচি শুরু হবে। কিন্তু লেডি ডাফরিন হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ শক্তিরূপা চক্রবর্তীর মতে, ‘করছি’, ‘করব’ বলে দেরি করলে সমস্যা আরও গাঢ় হবে। তাঁর কথায়, “স্তন পরীক্ষার একটা পদ্ধতি আর সময় আছে। দু’ আঙুলের বদলে হাতের চেটো স্তনের উপর চেপে ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে পরীক্ষা করতে হয়। ঋতুস্রাবের ঠিক আগে পরীক্ষা করা উচিত নয়। ঋতুস্রাবের পঞ্চম দিন থেকে পরীক্ষা করতে হয়। সরকারি প্রচার না থাকলে মানুষ এ সব জানবে কী করে?”
|
ক্যানসার সচেতনতা
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
বিশ্ব ক্যান্সার সচেতনতা দিবস পালন করা হল শিলিগুড়ির সুমিতা ক্যান্সার রিলিফ ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড এডুকেশনাল সোসাইটির উদ্যোগে। শনিবার শিলিগুড়ির প্রধাননগরে সংস্থার কার্যালয় থেকে দু’টি সুসজ্জিত গাড়ি সচেতনতা প্রচারে বের হয়। একটি নকশালবাড়ি পর্যন্ত প্রচার চালায়। |