‘আর্থিক মন্দা সামাল দিতে’ ঠিকাদার নিযুক্ত কর্মীর সংখ্যা কমাতে উদ্যোগী হল উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (এনবিএসটিসি)। মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যে এনবিএসটিসি-র সদর দফতর থেকে দিনহাটা, আলিপুরদুয়ার এবং দার্জিলিং ডিপোয় সেই নির্দেশ পৌঁছে গিয়েছে। ফলে, রাতারাতি কর্মহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন ১০৮৫ জন ঠিকাদার নিযুক্ত কর্মী।
বুধবার বিষয়টি জানাজানি হতেই বিভিন্ন ডিপোয় বিক্ষোভ-সমাবেশ শুরু হয়ে যায়। আলিপুরদুয়ারে কর্মীরা সপরিবার গিয়ে ডিপো ঘেরাও করে প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ দেখান। ওই আন্দোলনের জেরে ভোর সাড়ে ৫টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সরকারি বাস চলেনি। দিনহাটায় আন্দোলনের জেরে বেলা ১২টা পর্যন্ত সরকারি বাস পরিষেবা ব্যাহত হয়। শিলিগুড়িতে ইনটাক, সিটুর সঙ্গে আন্দোলনে সামিল হন নকশাল নেতারাও। ওই নির্দেশ প্রত্যাহার করা না-হলে লাগাতার আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে সিটু। অবস্থান-বিক্ষোভ চলে বহরমপুরেও। এখানে ৩৩ জন ঠিকাকর্মীকে কাজে যোগ দিতে নিষেধ করা হয়। |
এনবিএসটিসি’র ঠিকাকর্মীদের বিক্ষোভ প্রসঙ্গে বুধবার মহাকরণে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “এনবিএসটিসির প্রায় ১১০০ ঠিকাকর্মী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন আজ দিনহাটা ও আলিপুরদুয়ার ডিপোতে বিক্ষোভ দেখান। কিন্তু এই ঠিকাকর্মীরা ঠিকাদারদের নিযুক্ত কর্মী। তাঁদের দায়িত্ব সরকার কী করে নেবে?” মদনবাবু জানান, এনবিএসটিসি’র দু’ধরনের কর্মী রয়েছেন। স্থায়ী কর্মী ও অস্থায়ী কর্মী। তাঁদের দায়িত্ব নিগমের। ঠিকাকর্মীদের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের। নিগমের নয়। কর্মীদের তিনি ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করেছেন। ঠিকাদারদেরও কোনও সমস্যা থাকলে তাঁরা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। কিন্তু যাত্রীদের অসুবিধা করে এই ধরনের আন্দোলন চলতে পারে না বলে মদনবাবুর অভিমত।
তাঁর অভিযোগ, “বাম সরকার অবৈধ ভাবে দীর্ঘদিন এনবিএসটিসি’র বরাদ্দ টাকা থেকে বহু ঠিকাকর্মীকে বেতন দিয়েছে। এই বেতন দেওয়ার টাকা ‘অন্যান্য খরচ’ বলে দেখানো হয়েছে, যার পরিমাণ ৮০ লক্ষ টাকা।” মদনবাবুর বক্তব্য, চক্রান্ত করে ঠিকাকর্মীদের দিয়ে এই ধরনের আন্দোলন করানো হচ্ছে, যাতে ঠিকাকর্মীদের বেতন দিতে গিয়ে নিগমের স্থায়ী কর্মীদের বেতন আটকে যায়। পরিবহণমন্ত্রী জানান, তিনি ৮ ফেব্রুয়ারি উত্তরবঙ্গে যাবেন।
এনবিএসটিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর সি মুরুগন বলেন, “সংস্থায় প্রচুর বাড়তি লোক রয়েছেন। আর্থিক হাল ফেরাতে ধাপে ধাপে যতটা না-হলে চলবে না সেই সংখ্যক কর্মী রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।” নিগমের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “সংস্থার হাল ফিরলে ইন্টারভিউ নিয়ে ফের কর্মী নিয়োগ করা হবে।”
এনবিএসটিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০৮৫ জন ঠিকাকর্মীর মাইনে বাদ ফি মাসে ৫৪ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। সম্প্রতি রাজ্য সরকার ৬ মাসের জন্য ভর্তুকি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও ভবিষ্যতের কথা ভেবে ঠিকাদার নিযুক্ত কর্মীদের ধাপে ধাপে কমিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে চান নিগম কর্তৃপক্ষ। প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে দিনহাটা ডিপোর ২৭ জন ঠিকাকর্মীর মধ্যে ২০ জনকে, দার্জিলিং ডিপোয় ৪ জন ঠিকাকর্মীর মধ্যে ৩ জনকে কমানোর নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। গত ৩০ জানুয়ারি নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টরের স্বাক্ষরিত ওই চিঠি পৌঁছেছে আলিপুরদুয়ার ডিপোতেও। সেখানেও ১২ জন ঠিকাকর্মীর মধ্যে ৯ জনকে এবং রক্ষণাবেক্ষণ ও সাফাইয়ের কাজে নিযুক্ত ১৫ জন ঠিকাকর্মীর মাধ্যমে ১০ জনকে কর্মচ্যুত করতে বলা হয়েছে। নিগমের আলিপুরদুয়ার ডিপো ইনচার্জ কানাই দাস বলেন, “মঙ্গলবার বিকেলে সংস্থার অধিকর্তার নির্দেশ হাতে পৌছেছে। নির্দেশটি বিকেলে ঠিকাকর্মীদের জানিয়ে বুধবার থেকে কাজ না-আসতে বলা হয়েছে।”
সিটুর এনবিএসটিসি ঠিকা শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক বিষ্ণু রায় বলেন, “পরিবহণমন্ত্রী ৬ মাসের মধ্যে কোনও কর্মী ছাঁটাই হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না।” আলিপুরদুয়ার ডিপোর ঠিকা শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক বিপ্লব ঘোষ জানান, ঠিকা শ্রমিকেরা গাড়ির টায়ার, যন্ত্রাংশ মেরামতি ও নিরাপত্তার কাজ করেন। বসিয়ে দেওয়ায় তাঁদের পরিবার যে ভাবে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ল সেটা কে দেখবে? ঠিকাকর্মী প্রণব দাস বলেন, “২১ বছর বয়স থেকে কাজ করছি। ঠিকাদার পাল্টালেও সমস্যা হয়নি। এখন পরিবার নিয়ে পথ বসতে হবে। মাথা কাজ করছে না।” |