বাইপাস-সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালের সাততলা থেকে নীচে পড়ে মৃত্যু হল সেখানে চিকিৎসাধীন এক যুবকের।
পুলিশ জানায়, তাঁর নাম সুব্রত পাল (৩০)। বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরে। গঙ্গারামপুর সেন্ট যোশেফ হাইস্কুলের কমার্সের শিক্ষক ছিলেন সুব্রতবাবু। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফাদার জুয়েল জানান, সুব্রতবাবু নিপাট ভদ্রলোক ছিলেন। গত ২৪ জানুয়ারি তিনি স্কুলে আসেন। এরপর বাড়ি থেকে টেলিফোন এসেছে বলে তিনি স্কুল থেকে চলে যান। তারপর থেকে আর কোনও যোগাযোগ করেননি। মাত্র দুই বছর আগে স্কুলে তিনি যোগ দেন। ২০ ডিসেম্বর বুনিয়াদপুরে বিয়ে করেন। গঙ্গারামপুরের ক্ষুদিরাম মার্কেট সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা সুব্রতবাবু বাড়ির ছোট ছেলে। বাবা শ্যাম পালের হার্ডওয়ারের দোকান রয়েছে। বড় ছেলে দোকান দেখাশুনো করেন। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সুব্রত ঠান্ডা প্রকৃতির ছেলে ছিল। খুব একটা কারও সঙ্গে মিশত না।
সুব্রতবাবুর আত্মীয়রা জানিয়েছেন, বেশ কিছু দিন থেকে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন ওই যুবক। সপ্তাহ দু’য়েক আগে একবার নিজেই হাতের শিরা কাটেন তিনি। ওই ঘটনার পর চিকিৎসার জন্য তাঁকে প্রথমে মালদহ জেলা হাসপাতাল এবং পরে কলকাতার ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শনিবার সকাল ৭টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে ওই হাসপাতালেই।
সুব্রতবাবুর মৃত্যুর ঘটনায় এ দিনই হাসপাতালের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন তাঁর আত্মীয়রা। তিলজলা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা। কলকাতা পুলিশের ডিসি (সাউথ-ইস্ট) বাসব দাশগুপ্ত বলেছেন, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই রোগীর নজরদারি ঠিকমতো করেনি বলে তাঁর আত্মীয়রা অভিযোগ করেছেন। গাফিলতির মামলা দায়ের হয়েছে। তদন্ত চলছে।”
সুব্রতবাবুর দাদা রঞ্জন পাল জানিয়েছেন, তাঁর ভাই মানসিক অবসাদে ভুগছেন এবং কয়েকদিন আগে হাতের শিরা কেটেছেনসে কথা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সে সময় জানিয়েছিলেন, রোগীর পরিবারের কেউ সব সময় ওই যুবকের সঙ্গে তাঁর কেবিনে থাকতে পারেন। কিন্তু সেই প্রস্তাবে সম্মত হননি সুব্রতবাবুর আত্মীয়রা। তাঁরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেন, রোগীর সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে হাসপাতালকেই। কী কারণে ওই যুবক মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন তা জানাতে পারেননি রঞ্জনবাবু।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, মানসিক অবসাদগ্রস্ত সুব্রতবাবুর জন্য ‘বিশেষ’ কোনও ব্যবস্থা ছিল না হাসপাতালে। হাসপাতালের এক প্রশাসনিক কর্তা তাপস মুখোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছেন, ওই রোগীর আচরণে অস্বাভাবিকতা কিছু দেখা যায়নি। উনি যে আচমকা এ রকম করবেন, তা বোঝা যায়নি। ওই কর্তার বক্তব্য, “উগ্র স্বভাবের কোনও রোগীকে আমাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয় না।” হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি জঞ্জাল সাফাইয়ের ‘সার্ভিস ডেক’। তাঁর কেবিনে থাকা একটি চেয়ার দিয়ে ‘সার্ভিস ডেক’-এ যাওয়ার কাচের জানালার ‘লক্’ ভাঙেন সুব্রতবাবু।
এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রঞ্জনবাবু। তাঁর বক্তব্য, “লক্ ভাঙার শব্দ হাসপাতালের কেউ শুনতে পেল না?” হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যুক্তি, যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে সাধারণভাবে কারও যাওয়ার কথাই নয়। তবু, শব্দ পেয়েই সেখানে ছুটে যান হাসপাতালের কর্মীরা। কিন্তু, ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, এ দিন সকাল ৭টা নাগাদ ওই হাসপাতালে তাঁর সাততলার কেবিনের লাগোয়া ‘সার্ভিস’ বারান্দার একটি কাচের জানালার ‘লক্’ ভেঙে নীচে ঝাঁপ দেন সুব্রতবাবু। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলেই তদন্তকারীদের অনুমান। প্রত্যক্ষদর্শী এক রোগীর আত্মীয় সেন্টু হালদার বলেন, “হাসপাতালের সামনে চায়ের দোকানে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ একটা ছেলেকে লাফ দিয়ে নীচে পড়তে দেখলাম। ছুটে গিয়ে দেখি, ওঁর শরীর থেকে গলগলিয়ে রক্ত বেরচ্ছে। তখনও ছটফট করছিল। অন্য রোগীর আত্মীয়রা ধরাধরি করে ওঁকে ভিতরে নিয়ে গেলেন।” হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কর্তব্যরত কর্মীরাই গুরুতর জখম সুব্রতবাবুকে আইসিসিইউতে নিয়ে যান। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এ দিন সকাল সাড়ে ৬টার সময় চা-বিস্কুট দেওয়া হয় সুব্রতবাবুকে। তার কিছু পরে কেবিন থেকে বেরিয়ে নার্সদের কাছে সময় জিজ্ঞাসা করেন তিনি। হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, “সুব্রতবাবুর কেবিন থেকে আচমকা শব্দ শুনে নার্সরা ছুটে যান। তাঁরা দেখেন, কেবিনের লাগোয়া ‘সার্ভিস ডেক’-এর কাচের জানালার লক্ ভেঙে নীচে ঝাঁপ দেন ওই রোগী।”
|
আরও ২ শিশুর মৃত্যু মুর্শিদাবাদে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বহরমপুর |
মুশির্দাবাদ জেলা হাসপাতালে ভর্তি আরও দু’টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে শনিবার। এ নিয়ে গত তিন দিনে ওই হাসপাতালে শিশু-মৃত্যুর সংখ্যা ৯ থেকে বেড়ে দাঁড়াল ১১-তে। এ দিন সকালে মারা যায় বছর খানেকের শামিম শেখ ও মাস খানেকের রাশিয়া খাতুন। তাদের শুক্রবার রাতে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৈয়দ সাজাহান সিরাজ বলেন, “কম ওজনের ওই শিশুদের অনেকে বাড়িতে ভূমিষ্ঠ হয়েছে। তারা নিউমোনিয়া, আাসথেসেমিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ছিল। প্রথম দিকে তাদের গ্রামের হাতুড়ের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন বাড়ির লোক। পরে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন আর হাসপাতালের কিছু করার ছিল না।” |