সম্পাদকীয়...
শুশ্রূষা
ত বুধবার পুণে শহরে এক ভয়াবহ এবং মর্মান্তিক ‘দুর্ঘটনা’ ঘটিয়াছে। এক বাসচালক উন্মত্তের মতো গাড়ি চালাইয়া নয় জনকে হত্যা করিয়াছেন, বহু মানুষকে জখম করিয়াছেন, বহু গাড়ি ও অন্যান্য বস্তু ভাঙিয়া তছনছ করিয়াছেন। অথচ তিনি দক্ষ এবং অভিজ্ঞ চালক বলিয়া পরিচিত। তাঁহার আচার আচরণেও অতীতে কখনও বিরাট কোনও অস্বাভাবিকতা দেখা যায় নাই। কেবল ঈষৎ ভুলো মনের মানুষ ছিলেন তিনি, কখনও কখনও ঈষৎ অসংলগ্ন কথা বলিতেন এবং মানসিক অবসাদে ভুগিতেন। তাঁহার এই উন্মত্ত এবং বিধ্বংসী কীর্তিতে পরিচিত জনেরা বিস্মিত, বিমূঢ়। বিস্ময় অস্বাভাবিক নহে, তবে সন্তোষে মারুতি মানে নামক ওই বাসচালকের আচরণকে অবিশ্বাস্য এবং ব্যাখ্যাতীত বলিয়া অভিহিত করিলে ভুল হইবে। বরং এই ঘটনা হইতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা গ্রহণীয়। আপাত-স্বাভাবিক বা প্রায়-স্বাভাবিক আচরণের অন্তরালে অনেক সময়েই ভয়ানক রকমের মানসিক উত্তালতা নিহিত থাকে, সচরাচর তাহার প্রকাশ ঘটে না, অথবা ঘটিলেও আপাতদৃষ্টিতে সামান্য আকারেই ঘটে, যথা ‘ভুলো মন’ বা ‘ঈষৎ অসংলগ্ন কথাবার্তা’। কিন্তু কখনও কখনও অকস্মাৎ এমন মানুষই ভয়ঙ্কর আচরণ করেন, ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটাইয়া ফেলেন। এই প্রক্রিয়াটির সহিত আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের কিংবা ভূমিকম্পের সাদৃশ্য সহজেই মনে আসিবে। সেই ঘটনাগুলিও সহসা জানাইয়া দেয়, অন্তরালে বা গভীরে কোন উপপ্লব চলিতেছিল।
ভূকম্পন বা অগ্ন্যুৎপাত কেন বাধ্যতে? কিন্তু মানুষের ব্যাধিগ্রস্ত মনের গভীরে কী চলিতেছে তাহার খোঁজ রাখিলে এবং শুশ্রূষায় যত্নবান হইলে হয়তো পুণে শহরের বুধবারের ঘটনার মতো বিপদ এড়ানো সম্ভব। শুশ্রূষা শব্দটি বিশেষ উপযোগী। এই শব্দের আদি অর্থ: শুনিবার ইচ্ছা। মানসিক অবসাদ, হতাশা, একাকিত্ব, আকাঙ্ক্ষা অপূর্ণ থাকিবার যন্ত্রণা ইত্যাদি নানা কারণে বহু মানুষ অ-স্বাভাবিক আচরণ করেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই অস্বাভাবিকতা একটি সীমার মধ্যে থাকিয়া যায়, কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে থাকে না, তখন বিপর্যয় নামিয়া আসে। কোনও দুইটি মন এক নহে, সুতরাং মানসিক অ-সুখের নিরাময়ের কোনও সাধারণ নিদান হইতে পারে না এক জনের পক্ষে যাহা হিতকর, অন্য এক জনের পক্ষে তাহা ক্ষতিসাধক হইতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ অবসাদগ্রস্ত বা হতাশ অথবা যন্ত্রণাদীর্ণ মনের শুশ্রূষার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন তাহার কথা শোনা। ভাল-মন্দ বা ন্যায়-অন্যায়ের বিচার না করিয়া শোনা, প্রকৃত সম-অনুভূতির সহিত শোনা। বহু ‘অপ্রত্যাশিত’ আত্মহত্যার পরেই শোনা যায়, আত্মঘাতী মানুষটির সহিত কাহারও মানসিক যোগাযোগ ছিল না, কোন অসুখ মনে বহন করিয়া তিনি ঘুরিতেছিলেন তাহা কেহ জানিত না। মানুষ মানসিক ভাবে যত বিচ্ছিন্ন হইতেছে, এই সমস্যা তত বাড়িতেছে। বিচ্ছিন্নতার সভ্যতা হইতে সহজ নিষ্ক্তি নাই। সমাজ পরিবর্তন কাহারও হাতে নয়। কিন্তু ব্যক্তিমানুষ অন্তত ওই একটি অভ্যাস অনুশীলন করিতে পারে। শুশ্রূষার অভ্যাস।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.