প্রবাদে বলে, সকালটা দেখেই বলে দেওয়া যায় দিন কেমন যাবে। সে দিক থেকে জানুয়ারি মাসটাই হয়তো ঠিক করে দেবে এ বছর টলিউড কোন পথে হাঁটবে!
আগামী শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে দেব-এর ‘খোকাবাবু’। পরের শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি আসছে জিৎ-কোয়েলের ‘১০০% লভ’ এবং প্রসেনজিৎ-পদ্মপ্রিয়া অভিনীত ‘অপরাজিতা তুমি’। গোটা টালিগঞ্জ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির চোখ এখন এই তিনটে ছবির দিকে।
কেন? এই মুহূর্তে টলিউডের তিন বৃহত্তম তারকা এই তিনটে ছবিতে আছেন বলে? আগ্রহ শুধু সেই কারণে নয় কিন্তু। বরং চলচ্চিত্র জগৎ মনে করছে ঠিক কী ধরনের, কোন গোত্রের ছবি আগামী কিছু দিন বাজার শাসন করবে, সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে এই তিনটে ছবির মধ্য দিয়েই। ‘খোকাবাবু’ বা ‘১০০% লভ’-এর মতো পুরোদস্তুর বাণিজ্যিক ছবি? নাকি একটু সমান্তরাল রাস্তা-ঘেঁষা ‘অপরাজিতা তুমি’? জানুয়ারির শেষেই বেরিয়ে যাবে ‘রেজাল্ট’! |
কিন্তু তার আগে এই সময়টা উত্তেজনার পারদ চড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। বাদ নেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মমতার মায়ের শ্রাদ্ধবাসরে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন দেব। দেব-এর নতুন ছবি, টালিগঞ্জের হাল-হকিকত নিয়ে কথা হয় তাঁদের মধ্যে। তখনই মমতা ‘খোকাবাবু’ দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সব ঠিক থাকলে ১৯ তারিখ এসআরএফটিআই-এর প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি দেখবেন মমতা।
উত্তেজনায় ফুটছে টলিউডও। ২০১১ যা গিয়েছে, সেটাই এই উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। গত বছরে একমাত্র ‘পাগলু’ ছাড়া যত ছবি হিট করেছিল, সেগুলো অপেক্ষাকৃত ছোট বাজেটের, ‘জীবনমুখী’ ছবি বলা চলে। ‘ইচ্ছে’, ‘২২শে শ্রাবণ’, ‘রঞ্জনা আমি আর আসব না’...। ইতিমধ্যেই গত সপ্তাহে মুক্তি পেয়ে গিয়েছে মৈনাক ভৌমিকের ‘বেডরুম’। সমান্তরাল-গোত্রীয় ছবির সাফল্যে আরও একটি পালক যুক্ত করতে চলেছে সে। পাশাপাশি বড় বাজেটের বাণিজ্যিক ছবিগুলোর অবস্থা কিন্তু খুব ভাল ছিল না গত বছরে। ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে’ মাঝারি ব্যবসা দিয়েছে। দেব-এর ভক্তদের প্রাথমিক ভিড়টা হালকা হয়ে যাওয়ার পরে ‘রোমিও’-র ব্যবসাও আহামরি নয়। ‘আমি সুভাষ বলছি’ তো প্রথম দিন থেকেই মুখ থুবড়ে পড়েছে। সুতরাং এই পরিস্থিতিতে এ বছরের আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানুয়ারি থেকেই বুঝে নিতে চাইছে টলিউড। ‘২২শে শ্রাবণ’-এর মতো হিট উপহার দেওয়ার পরে আত্মবিশ্বাসী গলায় পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় বলছেন, “অন্য ধারার ছবির এই সাফল্য কিন্তু আচমকা নয়। ২০০৯-এও ‘অটোগ্রাফ’ ও ‘মনের মানুষে’র মতো ছবি দুরন্ত ব্যবসা করেছিল। এটা ঘটতে পারছে, তার কারণ, ব্যবসার মানচিত্রটা বদলে গিয়েছে। আগে যে সব হল-এ শুধু বাণিজ্যিক ছবিই চলত, সেখানে এখন ‘ইচ্ছে’-র মতো ছবি দরজায় কড়া নাড়ছে। এবং যথেষ্ট জোরে জোরে নাড়ছে। এর উল্টোটাও ঘটছে ঠিকই। সাউথ সিটিতেও দেবের ছবি দেখার ভিড় আছে। কিন্তু সেটা ওই পরিমাণে নয়। সেই জন্যই অন্য ধারার ছবিগুলো অনেক বেশি লাভের মুখ দেখছে।”
এই তথাকথিত অন্য ধারার ছবির সাফল্যের অন্যতম মুখ প্রসেনজিৎ কী বলছেন? এই জানুয়ারি-জ্বর নিয়ে তাঁর মনোভাব কী? জবাবে বললেন, “আমি চাই, তিনটে ছবিই খুব ভাল চলুক। তবে হ্যাঁ, টলিউডে একটা পরিবর্তন এসেছে। বলা যেতে পারে, ‘বইমেলা’-দর্শককে আমরা আবার বাংলা ছবির হল-এ ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। তাঁরা একটা বিরাট তফাৎ গড়ে দিচ্ছেন।”
এই তফাৎটা কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে? ‘খোকাবাবু’ না ‘১০০% লভ’ না ‘অপরাজিতা তুমি’? কে টিকবে দৌড়ে? জানুয়ারি শেষ সপ্তাহে জানা হয়ে যাবে উত্তরটা। |