এ বছর এমনটাই চলবে
কটা করে বছর ঘোরে, আর সঙ্গে সঙ্গে চার দিকে হাট বসে যায়। এইটা নিন, আনকোরা নতুন। ওইটা ধরুন, আগে কখনও হয়নি। পাঁচ মিনিট দাঁড়ান, এ বছরের স্পেশ্যাল জিনিসটি আসছে। বিশেষত পোশাকের ও সাজ-সজ্জা পৃথিবীতে হট্টগোলটা মারাত্মক। সব্বাই ‘ইন ট্রেন্ডস ইন ২০১২’ বলে ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়ে বসে থাকবে। এ বিষয়ে বিগত বছরগুলির অভিজ্ঞতা আবার তেমন সুখপ্রদ নয়। নতুন আবার কোনটা, সবই তো আগে দেখা, বললে রেট্রো ট্রেন্ড বলে চালিয়ে দেবে।
তা নইলে ফ্যাশনের নামে সব কিম্ভূত-কিমাকার জামা-কাপড়। সিনেমা-র্যাম্পেই ভাল দেখায়। এই তল্লাটে পরে বের হওয়া তো দূর, কোথাও কিনতেই পাওয়া যায় না।
খাঁটি অভিযোগ। সে সকল খেয়াল রেখেই তো তৈরি হয়েছে এই তালিকা। সামনের ৩৬৬টি দিন, ‘সুন্দর’ হয়ে উঠুক, সাধ, সাধ্য ও নাগালের মধ্যেই।

ডেনিম হল রোজের পোশাক। তাকে একটু ড্রেসি, অর্থাৎ সাজ-সাজ করে তুলতে টপ বাছাই করতে হয় বুদ্ধি করে। সেইটাই কিনুন পঞ্চো নকশার। বেশ ছড়ানো, ঢিলেঢালা দেখতে। হাতাটাও বেশ বড়। এতটাই বড় যে মনে হয় মাথাটা ওখান দিয়েও গলিয়ে নিলে হত। তা ছাড়া জামার সঙ্গে এমন ভাবে আটকানো যে আলাদা করে বোঝাই যায় না। সব মিলিয়ে বেশ ভালই দেখায়।
অল্প ভারী চেহারায় স্ট্রাইপ দেওয়া টপ পরলে, মেদ বোঝাই যায় না, তন্বীদের তো আরও ছিপছিপে দেখায়। লম্বালম্বি, না চওড়া স্ট্রাইপ, কোনটা বেশি মানাবে, আর ভাববেন না। জিগজ্যাগ স্ট্রাইপ দেওয়া অ্যাসিমেট্রিক্যাল টপ কিনে নিন। কাটের বৈশিষ্ট্যে ওই পোশাকের কোনও আকৃতি নেই, আর জিগজ্যাগ নামেই বুঝতে পারছেন স্ট্রাইপগুলো লম্বা-চওড়া-কৌণিক সব রকম। পরলেই অন্যদের নজরে পড়বেন। তাই যেখানে-সেখানে না, বেড়াতে বা পার্টিতে গেলে পরুন।
যাঁরা সাহসী পোশাক পরেন তাঁরা অফশোল্ডার (যার কাঁধ বা হাতার অংশ নেই) টপ কিনে ফেলুন। জার্সি কাপড়ের ছোট ঝুলের (কোমর পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই শেষ) এক রঙা জ্যাকেট দিয়ে পরুন।
ট্রান্সপারেন্ট টপের আবার একটা চল হয়েছে। না,না, এই পোশাক স্বচ্ছ শিফন কাপড়ের হলেও আপনি না চাইলে অশালীন দেখাবে না। বরং ভিতরের পোশাকটি সুন্দর হলে আকর্ষণ বাড়বে। আর ওই ট্রান্সপারেন্ট টপে ববি প্রিন্ট দেখলে সঙ্গে সঙ্গে কিনে ফেলুন। সি-থ্রু টপের মধ্যে জালি কাজের ‘শ্রাগ’ও আছে। ক্রিম রঙের শ্রাগ আর সঙ্গে হাঁটু ঝুলের প্লিট দেওয়া কালো ফর্মাল স্কার্ট একেবারে বিদেশিনি হয়ে যাবেন কিন্তু!

না এটা পোশাকের নাম নয়। স্কিন ফিট ডেনিম এবং জেগিংস এখন পুরো পপিনস লজেন্সের রঙের হয়ে গেছে। গোলাপি, বেগুনি, সবুজ, হলুদ, কমলা, মেটে লাল। দেখলে মনে হবে দোলের রং ছিটিয়ে দিয়েছে কেউ। শর্ট টপ বা শার্টের সঙ্গে পরুন, পায়ে থাকবে ব্যালেরিনা বা কাফ বুট। স্নিকার্স এ সাজের সঙ্গে মানায় না।
সব বয়সের জন্য এসেছে মেডিয়িভ্ল প্যান্টস, তবে পরার জন্য নিমের্দ থাকা জরুরি। চকলেট বা খাকি রঙের। কোমরের অংশটা ফোলা এবং প্লিট দেওয়া। গোড়ালির একটু আগেই শেষ। মেয়েরা হাই হিল দিয়ে পরবেন। আর ছেলেদের জন্যও ওই প্যান্টস রয়েছে, ওদের আবার কোমর অংশে স্যাটিন বা ভেলভেট কাপড় দিয়ে কোমরবন্ধের মতো ডিজাইন করা। মধ্যযুগের নাইটরা যেমন পরতেন। বিয়েবাড়ির উপযুক্ত এথনিক ফিউশন।

কলকাতার শীতটাও তো এখন জাঁকিয়েই পড়ে। আর অনেকের তাতে ভারী আহ্লাদ হয়। এই তো কেমন বিদেশের মতো হাঁটু পর্যন্ত উঠে আসা চামড়ার বুট পরে ঘুরব। সঙ্গে থাকবে ছোট ঝুলের এককাটের ফ্রক। যাকে ইউরোপে এলাইন শর্টড্রেস বলে। আর ওপরে একটা কেপ। সেটা হল বিদেশি আলখাল্লা। সুপারম্যান বা ম্যানড্রেকদের মতো। এই সাজের সময় যেন বুটের উপরিভাগ আর শর্ট ড্রেসের নীচের হেমলাইনের মধ্য দিয়ে পা অল্প হলেও উঁকি মারে। ওটা নইলে বিশাল ফ্যাশন বিপর্যয় ঘটে যাবে। একটা রঙিন লেগিংস পরে নিলে অবশ্য আলাদা কথা। তবে, লেগিংসটা কিন্তু এ বার সত্যিই পুরনো হয়েছে।
গাউন কিনলে ঝিনুকের মতো বা মারমেড কাটের কিনবেন। আর ওই ফ্রক, মানে শর্ট ড্রেস যদি শুধু পরেন, একটা ভাল বেল্ট কিনে নেবেন। বা পিছনে বো বাঁধা ড্রেস খুঁজবেন। বয়স লুকোতে জানা একটি মহান শিল্প।

আগে মেয়েরা ছেলেদের মতো শার্ট-প্যান্ট পরলে গেছো, টমবয়, কত বিশেষণ জুটে যেত। আর এখন? সেই কম্বিনেশন ঠিকঠাক ক্যারি করতে যারা জানে তারাই নাকি ‘আধুনিকা’! পলিয়েস্টারের টেলর ফিট ট্রাউজার্স-এর (দেখলে মনে হয় খানদানি দরজি মাপে মাপ বানিয়ে দিয়েছে) সঙ্গে ফর্মাল শার্ট গুঁজে পরুন। চোখে লাইব্রেরিয়ান ফ্রেমের চশমা। দেশি-বিদেশি রূপসীরা তো এই ‘ম্যাসকুলিন লুক’কে ইদানীং ভারী কুলীন করে তুলেছে।
ডেনিমের ওপর, চেক শার্ট পরে, হাতকাটা ওয়েস্টকোট পরারও একটা হাওয়া উঠেছে মহিলামহলে।

মেয়েরা ছেলেদের পোশাক পরছে, নতুন ট্রেন্ড সত্যি, তাই বলে উল্টোটাও ভেবে বসবেন না। ছেলেরা জোয়াব, ধোতি প্যান্টস, বরফি আঁকা রংচঙে কুর্তা-শার্ট জাতীয় কয়েকটা ‘ফাঙ্কি’ জামাকাপড় পরলেও, ওদের ফ্যাশনেও ক্যাজুয়াল প্রীতিটা ক্রমশ কমছে। সবাই এখন স্কটিশ বা প্লেড ফ্রেব্রিকের ব্লেজার খুঁজতে ব্যস্ত। চেকের মতো চৌখুপি হলেও চেক না, অনেকটা কম্বলের মতো দেখতে। দেখলে মনে হয়, লাল-কালো, সাদা-কালো কাপড় যেন বিনুনির মতো বুনোট করে তৈরি করা হয়েছে। আর ফর্মাল শার্টগুলো হয়েছে হাই-কলার। ওগুলো পরে অফিস-পার্টি-ডেট সর্বত্র যাওয়া যাবে। নাম ড্রেস-শার্ট। আর টাইয়ের দৈর্ঘ্যও কমেছে। আর বেল্ট পর্যন্ত নয়, বুকের ঠিক মাঝামাঝি শেষ।
তবে টি-শার্ট বেঁচে থাকবে ঠিকই। চেহারা কিঞ্চিৎ পালটে। গেঞ্জির তুতো ভাই হয়ে, নাম কঞ্জি। জাপান থেকে এসেছে এই নাম। নানা রকম ডিজাইন। নজর কাড়ে পকেট। বুকে নয়, হাতায়, পিঠে, কোমরে। নাহ্, খুব অদ্ভুত লাগে না দেখতে। ওই আর কী! নতুন সময়, নতুন পোশাক। দেখতে দেখতে বছর পুরনো হবে ক’দিনেই, এ সবও তখন চোখে সয়ে যাবে নিশ্চয়ই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.