শুধু অপচয়
পরিত্যক্ত বিপণন
তৈরি করতে ব্যয় হয়েছিল কয়েক লক্ষ টাকা। তার পরে প্রায় এক দশক কেটে গিয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ বিপণনকেন্দ্র এখনও চালু হল না। হাওড়ার কামারডাঙা রোড, ড্রেনেজ ক্যানাল রোডের ধারের এই বিপণনকেন্দ্রগুলি অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। পড়ে থাকা বিপণনকেন্দ্রগুলি নিয়ে আপাতত কোনও পরিকল্পনা নেই হাওড়া পুরসভার।
কোনা এক্সপ্রেসওয়ের কাছে বেলেপোলে একটি, ইছাপুর কামারডাঙা রোডে চারটি ও ড্রেনেজ ক্যানাল রোডের পাশে শানপুরে তিনটি— মোট আটটি বিপণনকেন্দ্র তৈরি করে হাওড়া পুরসভা। ২০০০ সালের ২৩ নভেম্বর তৎকালীন পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বিপণনকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। উদ্দেশ্য ছিল, বেকার ও উচ্ছেদ হওয়া দোকানদারদের পুনর্বাসন দেওয়ার।
কামারডাঙা
হাওড়ার তৎকালীন মেয়র সুবিনয় ঘোষের উদ্যোগে এই বিপণনকেন্দ্রগুলি তৈরি হয়। পুরসভা এক একটি স্টলের জন্য এক লক্ষ টাকা করে চায়। অভিযোগ, কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই বিপণনকেন্দ্রগুলি গড়ে তোলা হয়। ফলে পুরসভার বহু টাকা ক্ষতি হয়েছে। প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র তথা তৎকালীন মেয়র পারিষদ দেবেশ সান্যাল বলেন, “স্টলের বিশেষ চাহিদা ছিল না। যাঁরা নিয়েছিলেন তাঁদেরও ব্যবসা জমেনি। ড্রেনেজ ক্যানালের উপরে হয়েছিল বলে অনেকে আপত্তি করেছিলেন। এখন ওগুলি ভুতুড়ে বাড়ির মতো পড়ে আছে।” শানপুরের কাছে একটি বিপণনকেন্দ্রের কয়েকটি দোকান চালু হয়েছে। বাকি কেন্দ্রগুলি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কথায়: “এগুলি নির্বাচনের আগে চমক দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। ফলে কোনও কাজ হয়নি। আমাদের ইচ্ছা রয়েছে। তবে আর্থিক সমস্যার জন্য আপাতত কিছু করা যাচ্ছে না। ভবিষ্যতে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শানপুরেও অনেক সমস্যা আছে বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। দোকানের বাইরে নামফলক নেই। আলোর ব্যবস্থা হয়নি। ‘শানপুর পশ্চিম হাওড়া বিপণনকেন্দ্র ব্যবসায়ী সমিতি’র সহ-সভাপতি অনিল দেবনাথ বলেন, “২০০০-এ ১ লক্ষ টাকায় দোকান নিয়েছি। মামলা চলায় ২০০১-এ চাবি পাই। তখন পুরসভা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আলোর ব্যবস্থা করবে। পানীয় জল, শৌচাগার করে দেবে। কিন্তু কিছুই করেনি। নিজেদের খরচেই আলো, জলের ব্যবস্থা ও রং করতে হয়েছে। রাস্তার দিকে দোকানের সাটার ও মেঝে করতে হয়েছে। বিপণনকেন্দ্রের সামনে ড্রেনেজ ক্যানাল রোডে গাড়ি রাখা থাকে।
ফলে যাতায়াতের অসুবিধা হয়। দোকান ভাল চলে না।”
অন্য বিপণনকেন্দ্রগুলিরও প্রায় একই অবস্থা। কোনও সুষ্ঠু পরিকাঠামোই গড়ে তোলা হয়নি। বিদ্যুৎ দেওয়া হয়নি। অনেকগুলি স্টলের বাইরে আলাদা আচ্ছাদন নেই। যাতায়াতের জায়গা অপরিসর। পানীয় জল ও শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। এখন বাইরের রেলিং ভেঙে গিয়েছে। আবর্জনা ডাঁই করে রাখা। গজিয়ে উঠেছে ঝোপঝাড়। জানলার কাচ ভেঙে গিয়েছে। কয়েকটি জায়গায় বিপণনকেন্দ্রের সামনে জবরদখল করে দোকান ও ঝুপড়ি তৈরি হয়ে গিয়েছে।
বেলেপোল শানপুর
বেলেপোলের বিপণনকেন্দ্রটি ড্রেনেজ ক্যানালের উপরে তৈরি হয়েছে বলে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। সুভাষবাবুর কথায়: “কোনও সভ্য দেশে এই ভাবে নিকাশি নালার উপর মার্কেট কমপ্লেক্স হতে পারে না। নিকাশি নালাকে ঢেকে নির্মাণ হলে নিকাশি নালা পরিষ্কার হবে না। তৈরির পরে বিপণনকেন্দ্রগুলি চালু হয়নি। এটা পুরসভার টাকার অপচয় ও শহরবাসীর প্রতি বঞ্চনা, অবিচার।” মামলাটি এখন কী অবস্থায় রয়েছে? সুভাষবাবু বলেন, “হাইকোর্টে বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়েছে। হাইকোর্টে পুরসভা মুচলেকা দিয়ে বলে, তারা নালা পরিষ্কার রাখবে। হাইকোর্টও ওই নির্মাণকে অবৈধ বলেনি। তারা শুধু নিকাশি ব্যবস্থা ঠিকঠাক রাখার জন্য পুরসভাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছে।”
স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক জটু লাহিড়ীর বক্তব্য, “তৈরি হওয়ার পরে বিপণনকেন্দ্রগুলি ভুতুড়ে ঘরের মতো পড়ে আছে। শুধু শানপুরের কয়েকটি দোকান বিক্রি হয়েছে। সেখানেও সমস্যা হচ্ছে। দোকানে জল ঢুকে যায়। যাওয়া-আসার জায়গা নেই। অনেক জায়গা বেদখল হয়ে গিয়েছে। বিকল্প কোনও ব্যবহারেরও পরিকল্পনা নেই।” যদিও হাওড়া পুরসভার মেয়র মমতা জয়সোয়াল বলেন, “কয়েকটি বিপণনকেন্দ্র চলছে। বাকিগুলি পড়ে আছে। আপাতত পড়ে থাকা বিপণনকেন্দ্রগুলি নিয়ে কোনও পরিকল্পনা নেই।”

ছবি: রণজিৎ নন্দী

হাওড়া বইমেলা
আজ শনিবার শুরু হচ্ছে হাওড়া জেলা বইমেলা। স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে ২৩তম এই মেলার থিম ‘সার্ধশত স্বামী বিবেকানন্দ’। তবে মেট্রোরেলের কাজের জন্য এ বার বদলেছে হাওড়া বইমেলার জায়গা। কর্পোরেশন স্টেডিয়ামের বদলে মেলা হবে হাওড়া শরৎ সদন চত্বরে। মেলার সূচনা হচ্ছে বই-মিছিল দিয়ে। রাজ্য সরকারের গ্রন্থাগার পরিষেবা অধিকারের পৃষ্ঠপোষণা ও রাজা রামমোহন রায় লাইব্রেরি ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় আয়োজিত মেলাটি চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত (২টো থেকে ৮টা)। আয়োজক হাওড়া জেলার স্থানীয় গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ ও হাওড়া বইমেলা কমিটি। প্রয়াত শিশির কর স্মরণে তৈরি মঞ্চে কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী মুকুল রায় মেলার উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন বইমেলা কর্তৃপক্ষ। এ বারের মেলায় মোট ৫০টি স্টল থাকছে।




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.