অজানাকে জানতেই কাল ৭০ পেরোবেন হকিং
নাম বলতেই চোখে ভেসে ওঠে হুইলচেয়ারে বন্দি, ঘাড়টা ডান দিকে একটু কাত করে থাকা মানুষটির কথা। যাঁর চশমার মোটা কাচের আড়াল থেকে উঁকি মারে দীপ্তিমান দু’টি চোখ। যে চোখ এক সময় খোঁজ দিয়েছিল মহাকাশের এক অদ্ভুত আঁধার কৃষ্ণগহ্বরের অনেক রহস্যের। সত্তরের দোরগোড়ায় পৌঁছেও সমান উজ্জ্বল সেই চোখ দু’টি। আজও খুঁজে চলেছে বিজ্ঞানের আরও না জানি কত রহস্য! মারণ স্নায়ুরোগও দমাতে পারে না তাঁকে। তিনি স্টিফেন হকিং। রবিবার পূর্ণ করবেন সত্তর বছর।
দিনটিকে বিশেষ ভাবে উদ্যাপন করবে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়। হবে সম্মেলন। যেখানে থাকবেন এ বারের পদার্থবিদ্যায় নোবেলজয়ী সল পার্লমুত্তের-সহ একাধিক বিজ্ঞানী। বক্তৃতা দেবেন স্টিফেন নিজেও।
এ উদ্যাপন তো এক বিজ্ঞানীকে ঘিরে বাকি বিজ্ঞানীদের। এরই সমান্তরালে বিশ্ব জুড়ে চলছে আর এক উদ্যাপন। নীরবে। ইথারে। সে উদ্যাপন জীবনের। আরও স্পষ্ট করে বললে, অদম্য জীবনীশক্তির। ফেসবুক, ট্যুইটার থেকে শুরু করে বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে অগণিত হকিং-ভক্তের এখন একটাই প্রার্থনা। সামান্য বাধাবিপত্তি-অসুখবিসুখেই বেঁচে থাকার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন যাঁরা, তাঁদের সাক্ষী রেখেই দীর্ঘতর হোক হকিংয়ের জীবন। প্রতি মুহূর্তে যাঁরা মৃত্যুভয়ে কাতর, তাঁদের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকুন তিনি। কিনারা করুন আরও অনেক মহাজাগতিক রহস্যের।
ছোটখাটো এক মানুষ। ‘লাউ গেহরিগ’ রোগ ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিয়েছে গোটা শরীর। পক্ষাঘাতের ফলে নাড়াতে পারেন না কোনও অঙ্গ। কথা বলতে গেলে শুধু ডান দিকের থুতনিটা একটু নড়ে। শব্দ বেরোয় না। তাঁর চশমায় লাগানো শক্তিশালী ইনফ্রা-রেড সেন্সর থুতনির সেই নড়া দেখে শব্দ বোঝে। এর পর সেই শব্দ ফুটে ওঠে কম্পিউটারের পর্দায়। যা ভয়েস সিন্থেসাইজারের মাধ্যমে উচ্চারিত হয়। এ ভাবে একটা বাক্য তৈরি করতে সময় লাগে প্রায় ১০ মিনিট। কিন্তু তা-ও কখনও কেউ বিরক্তি দেখেনি তাঁর মুখে। শত শারীরিক অসুবিধা সত্ত্বেও ভাটা পড়েনি তাঁর কাজকর্মে।
প্রথম জীবনে কাজ করেছেন গভীর কালো এক বস্তু নিয়ে। যা শুষে নেয় আলোও ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর। মহাকাশের এই অন্ধকারই প্রথম আলোয় এনেছিল তাঁকে। এই বিষয়ে ‘বেকেনস্টেইন-হকিং রেডিয়েশন’ নামে একটি মতবাদের জন্মও দিয়েছেন তিনি। এর পরেও মহাকাশবিদ্যা এবং কোয়ান্টাম মহাকর্ষ নিয়ে তাঁর একের পর এক গবেষণা তাক লাগিয়ে দিয়েছে বিশ্বকে। সহকর্মী রজার পেনরোজকে নিয়ে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্বের এক জটিল গাণিতিক নকশা তৈরি করেছেন তিনি।
‘এ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম’ তাঁর অসংখ্য কীর্তির একটি। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত এই বইয়ে জটিল মহাকাশবিদ্যাকে তুলনায় অনেক সরল ভাষায় ব্যাখ্যা করে পাঠকের মন জয় করে নেন তিনি। রাতারাতি পৌঁছে যান খ্যাতির শিখরে।
জন্ম অক্সফোর্ডে, ১৯৪২-এর ৮ জানুয়ারি। স্কুলের শিক্ষকদের মতে, ছোটবেলায় ছিলেন আর পাঁচটা সাধারণ ছাত্রের মতোই। তবে সেন্ট অ্যালবানস স্কুলে পড়ার সময়ে অঙ্কের শিক্ষক দিকরান তাহতা তাঁর জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেন বলে পরে উল্লেখ করেছেন স্টিফেন। স্নাতক স্তরে তাই অঙ্ক নিয়েই পড়ার
ইচ্ছে ছিল। কিন্তু বাবা ফ্রাঙ্ক হকিংয়ের ইচ্ছে ছিল, ছেলে অক্সফোর্ডে পড়ুক। যেখানে তখন স্নাতক স্তরে অঙ্ক ছিল না। তাই পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়তে শুরু করেন হকিং। ১৯৬২ সালে স্নাতক হওয়ার পরে জ্যোতির্বিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে বুঝতে পারেন, হাতেকলমে পরীক্ষা নয়, তাত্ত্বিক গবেষণাই তাঁর বেশি পছন্দের।
স্টিফেন চলে যান কেমব্রিজের ট্রিনিটি হলে। আর সেই সময়েই ধরা পড়ে, জটিল এক স্নায়ুরোগে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। ‘লাউ গেহরিগ’। পেশিকে নিয়ন্ত্রণ করার স্নায়ুগুলো আক্রান্ত হয় এই রোগে। প্রথমে অবশ হতে থাকে শরীর। শেষে খাওয়াদাওয়া করা, এমনকী শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতাও চলে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগ ধরা পড়ার ১০ বছরের মধ্যেই মৃত্যু হয় রোগীর। কিন্তু সব হিসেব উল্টে দিয়েছেন স্টিফেন হকিং। মারণরোগের সঙ্গে যুঝছেন সেই সত্তর সাল থেকে। হুইলচেয়ারে বন্দি। কিন্তু কী আশ্চর্য রকমের সক্রিয়!
রোগের সঙ্গে লড়তে লড়তেই রয়্যাল সোসাইটি অফ লন্ডনের সর্বকনিষ্ঠ ফেলো নির্বাচিত হন ১৯৭৪-এ। ১৯৭৯ থেকে ২০০৯-এর অক্টোবর পর্যন্ত তিরিশ বছর ধরে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে পদে থেকে হকিং অধ্যাপনা করেছেন, এক সময়ে সেই পদের অধিকারী ছিলেন স্যার আইজ্যাক নিউটন স্বয়ং। অনেক জটিল তত্ত্বের সহজ ব্যাখ্যা দিতে পারলেও একটি ক্ষেত্রে হার মেনেছেন হকিং। নারী-মনের রহস্য আজও অধরা তাঁর কাছে। নিজে অন্তত এমনটাই বলেছেন সাম্প্রতিক এক সাংবাদিক বৈঠকে। অবশ্য নারীবিবর্জিত নয় তাঁর জীবন। বিয়ে করেছেন দু’বার। আছে তিন সন্তান ও তিনটি নাতি-নাতনি। মেয়ের সঙ্গে ছোটদের জন্য মহাকাশবিদ্যা নিয়ে কয়েকটি বইও লিখেছেন তিনি। ৭০-এ পা দিয়ে রবিবার নতুন কী জানান এই অজানার সন্ধানী, সেই অপেক্ষায় এখন গোটা বিশ্ব।

ব্যাঙ্ককে দুর্ঘটনায় মৃত ভুবনেশ্বর কলিতার পুত্র
তাইল্যান্ডে বাইক দুর্ঘটনায় মারা গেলেন অসম প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি ভুবনেশ্বর কলিতার ছোট ছেলে, সন্দীপ কলিতা। গত কাল ভারতীয় সময়, সকাল ১১টা নাগাদ সন্দীপের বাইকের সঙ্গে একটি ট্রাকের ধাক্কা লাগে। ভাড়া করা বাইকটিতে চেপে সন্দীপ ইন্ডিয়া স্ন্যাক্স বারে মধ্যাহ্নভোজে যাচ্ছিল। ২২ বছরের সন্দীপ কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে কিছুদিন গুড়গাঁওতে চাকরি করে। পরে সে তাইল্যান্ডের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এআইটি)-তে এমবিএ পড়তে যায়। ভয়াবহ বন্যার পরে এআইটির ক্যাম্পাসটি ব্যাংকক থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে, হুয়া হিনে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে, প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে লম্বা ছুটিতে বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় ছিল সন্দীপ। গত কালই তার পরীক্ষা শেষ হয়েছিল। কিন্তু অসমে, বাড়িতে তার আর ফেরা হল না। দুর্ঘটনায় সন্দীপের ল্যাপটপটি চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। তবে মোবাইলটি অক্ষত ছিল। হুয়া হিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই মোবাইল থেকেই সন্দীপের বন্ধুদের খবর দেয়। ভুবনেশ্বরবাবু দিল্লিতে ছিলেন। তাঁর দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার কথা ছিল। ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি কলকাতা পৌঁছন। সন্দীপের মা, অসম সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিক ঋত্ত্বিকা কলিতাও গত কালই কলকাতা পৌঁছন। আজ ছেলের মৃতদেহ আনতে তাঁরা ব্যাংকক রওনা হয়েছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.