বিনোদন গল্পের গুণেই দর্শক টানছে
‘গোঁসাইবাগানের ভূত’

লিউডের জন্য এটা চমকের বছর। স্বল্প বাজেটের ‘ইচ্ছে’ বক্স অফিসে দারুণ সাড়া ফেলে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল আগেই। বছর শেষের মুখে অপেক্ষা করছিল আরও একটা চমক।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি নীতীশ রায়ের ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’ সম্ভবত এই বছরের ‘সুপারহিট’ ছবির তালিকায় নাম লেখাতে চলেছে। প্রথম সপ্তাহেই যে ছবির সংগ্রহ অন্তত ৪০ লক্ষ টাকা। আর এই শুক্রবারের মধ্যেই সেটা কোটির ঘর ছুঁয়ে ফেলবে বলে আশা মাল্টিপ্লেক্স ও হল মালিকদের। কারণ সপ্তাহান্তেই বড়দিনের ছুটি। মাল্টিপ্লেক্স ও হল মালিকদের মতে, দর্শকদের মুখে মুখে ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’-এর প্রশংসা যে ভাবে ছড়াচ্ছে, তাতে ছুটির সপ্তাহে ৬০ লক্ষ উঠে যাওয়াই স্বাভাবিক। এই শুক্রবারেই মুক্তি পাচ্ছে ‘রয়েল বেঙ্গল রহস্য’। ফেলুদার সঙ্গে ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’ দারুণ টক্কর দেবে বলে মনে করছেন মাল্টিপ্লেক্স-কর্তারা।
আইনক্সের পঙ্কজ লাডিয়া যেমন বললেন, “ইভনিং শোয়ে ছবিটা চলছে। ভাল পয়সা উঠছে। দারুণ হিট। ভাল গল্প কখনও প্রাসঙ্গিকতা হারায় না। আগামী দিনগুলোতেও ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’ এই রকমই চলবে।” সপ্তাহ দুয়েক আগে ৩৫টি হলে মুক্তি পেয়েছিল ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’। এত ভাল টাকা উঠছে বলে আরও বেশি জায়গায় ছবিটা দেখানোর কথা ভাবছেন হল-মালিকরা।
প্রিয়া আর স্টারেও ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’ দেখতে ঠাসা ভিড় হচ্ছে বলে জানালেন ওই দুই হলের কর্ণধার অরিজিৎ দত্ত। তাঁর কথায়, “দাদু-ঠাকুমার সঙ্গে নাতি-নাতনি দেখতে আসছে ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’। প্রিয়ায় বয়স্ক মানুষদের জন্য আমাদের ‘লিফ্ট’ বেশি সময় চালাতে হচ্ছে। কারণ তাঁদের সিঁড়ি ভেঙে ওঠা অসুবিধে।”
নতুন করে ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’ নিয়ে এত হইচই, কেমন লাগছে লেখকের?
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বললেন, “আমি খুব একটা সিনেমা-ভক্ত নই। তাই প্রযুক্তিগত দিক নিয়ে খুব একটা কিছু বলতে পারব না। কিন্তু ফিল্মটা আমি দেখেছি। বেশ ভাল লেগেছে। অ্যানিমেশনের অংশটাও সুন্দর ভাবে করা হয়েছে। এ ধরনের ছবি যদি সফল হয়, বুঝতে হবে পারিবারিক বিনোদনমূলক ছবির এখনও কদর আছে।”
আনন্দমেলা পূজাবাষির্কীতে ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত হয়েছিল উপন্যাসটি। বই হয়ে বেরোয় তার পরের বছর। নিধিরামের মতো গোবেচারা ভূত আর অঙ্কে ১৩ পাওয়া ছোট্ট বুরুনের গপ্পো অসম্ভব জনপ্রিয় হয়েছিল সেই সময়েই। হ্যারি পটারের জমানাতেও সেই আকর্ষণ তা হলে অটুট রয়েছে?
ইন্ডাস্ট্রির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা নাকি ডিজনি-র ১+১-এর কৌশলের মতো। সেটা কী রকম? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বাচ্চারা তো আর একা সিনেমা দেখতে আসে না। সঙ্গে বাবা-মা, কাকু-দাদু-ঠাকুমা কেউ না কেউ থাকেই। ফলে এমন ছবিতে মাথাপিছু দু’টো টিকিট বিক্রি হয়েই যায়। আকর্ষণটা আরও বাড়িয়ে তোলে এমন টানটান বুনোটের গল্প।
সিনে-বিশ্লেষকদের মতে, এখনকার বাচ্চারা হয়তো ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’ উপন্যাসটা পড়েনি। কিন্তু ওদের বাবা-মায়ের প্রজন্ম অবশ্যই পড়েছেন। বড়রাই উৎসাহভরে বাচ্চাদের ফিল্মটা দেখাতে নিয়ে যাচ্ছেন। বাবা-মায়ের মনে হচ্ছে, বইটা পড়ে যে আনন্দ তাঁরা পেয়েছিলেন, এই প্রজন্ম না হয় সিনেমাতেই সেটা খুঁজে পাক।
তা ছাড়া, এখনকার বাচ্চাদের কাছে সহজে পৌঁছনোর জন্য ছবিতে জ্যান্ত চরিত্রের সঙ্গে ৩২ মিনিটের অ্যানিমেশনও রয়েছে বলে জানালেন ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’-এর প্রযোজক মৌ রায়চৌধুরী। কিন্তু ‘অ্যাডভেঞ্চারস অফ টিনটিন’-এ বিশ্বমানের অ্যানিমেশনের কাছে ১ কোটি ৭০ লক্ষ বাজেটের বাংলা ছবির ‘দেশি’ অ্যানিমেশন দাঁড়াতে পারবে? আশঙ্কাটা ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’-এর নির্মাতাদের মনেও ছিল।
কিন্তু সেই আশঙ্কাকে ভুল প্রমাণ করে বাচ্চারা তো দেখছে ছবিটা?
“তার পিছনে কিন্তু রয়েছে গল্পের জোর, অ্যানিমেশনের চেয়েও যেটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ,” বলছেন টলিউডের প্রথম সারির এক অভিনেতা। গল্পের জোর এমনই যে ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’-এর ইংরেজি কমিকস ‘দ্য ঘোস্ট অফ গোঁসাইবাগান’-ও তাই ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছে ছোটদের মধ্যে।
যাদের জন্য এই ছবি, সেই কচিকাঁচার দল কী বলছে ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’ দেখে?
কাঞ্চন মল্লিকের অভিনয়ে ‘নিধিরাম ভূত’ মন টেনেছে তাদের। এক বার দেখা হয়ে গেলেও আবার তাই ছবিটা দেখতে চায় সাউথ পয়েন্টে ক্লাস টু-এর ছাত্র ঈশান চট্টোপাধ্যায়। “কাঞ্চন মল্লিক দারুণ। গানগুলোও ভাল। টিনটিনের চেয়েও এটা বেশি ভাল লেগেছে”, বলছে ঈশান। চুঁচুড়ার আর এক খুদে ক্লাস ফোরের অধিদেব সরকারেরও ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’ দেখা হয়ে গিয়েছে। ফের দেখার ইচ্ছে তারও, “কাঞ্চন মল্লিককে খুব মজার লেগেছে।
শুধু মনে হচ্ছে এ রকম একটা ভূত যদি আমারও থাকত, যে আমার হোমওয়ার্ক করে দেবে!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.