|
|
|
|
|
|
|
মহানগরে শিল্পিত আয়োজন |
ছবির কথা |
দুই শিল্পীর দু’রকম জীবন-‘দর্শন’! প্রথমজন জীবনের দিকে তাকিয়ে আছেন কবে থেকেই, ক্রমে শ্রবণশক্তি ক্ষীণ হয়েছে, দৃষ্টি হয়েছে প্রখর, আরও সংবেদনশীল। তিনি, সতীশ গুজরাল, শহরে দেখাচ্ছেন তাঁর একগুচ্ছ রেখাচিত্র, ‘আইজ অন লাইফ’ (আকৃতি আর্ট গ্যালারি, ৯-৩১ ডিসেম্বর)। পঁচাশি পেরিয়েছেন, অথচ রেখার চলনে জরার ছাপ নেই কোথাও। আছে সুস্মিত প্রশান্তি। এবং যে ভাবে বিভিন্ন যন্ত্রকে নিয়ে আসছেন তিনি, মানব-মানবীর সঙ্গে, তার মধ্যে কোথাও কি থেকে যায় সভ্যতা নিয়ে তাঁর মন্তব্য? ২০০৫-’১১-র মধ্যে আঁকা এই সব ছবিতে মানুষ ও মানুষীর বিভঙ্গে আছে বিচিত্র একটি গতি। অশীতিপর সতীশ গুজরালের চলাফেরা, বয়সের কারণেই, অনেক সীমায়িত। অথচ, সেই সীমাকে তিনি অস্বীকার করেছেন তাঁর শিল্পে। ক্রিকেট থেকে অশ্বারোহণ, কী ভাবে গতিশীলতাকে ধরতে চেয়েছেন সতীশ, এই সব রেখাচিত্রে তার প্রমাণ ছড়ানো। পাশাপাশি, আর এক প্রবীণ শিল্পী, লালুপ্রসাদ সাউ তাঁর একক প্রদর্শনীর পরিসরে নিয়ে এসেছেন অন্তর্দর্শন। ‘লুকিং ইন’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে (গ্যালারি ৮৮; ৮ ডিসেম্বর - ৮ জানুয়ারি) পরিপার্শ্বের প্রতি তাঁর দৃষ্টিপাত। কলকাতার সরকারি আর্ট কলেজ-এর শিক্ষাপর্ব থেকে কলাভবনের অধ্যাপনা, লালুপ্রসাদের চিত্রভাবনায় একাধিক বাঁক। মাধ্যম বদলেছে। বিষয় বদলেছে। পাল্টেছে তাঁর দৃষ্টিপাতের প্রকরণ। রেখাচিত্রের লালুপ্রসাদ, গ্রাফিক্স-এ বিমূর্ত অবয়বের লালুপ্রসাদ, অতঃপর পেন্টিং-এর নিজস্ব অবয়বী ঘরানার লালুপ্রসাদ কী ভাবে দৃশ্যের মধ্যেই নিজস্ব দর্শনের সঞ্চার করেন তিনি, তা এই প্রদর্শনীর একটি দ্রষ্টব্য। এই দু’টি বিপুল প্রদর্শনীর পাশাপাশি আই সি সি আর-এর নন্দলাল বসু গ্যালারিতে আসছে বিমানবিহারী দাসের পঁচিশতম একক (১৭-২৪ ডিসেম্বর)। এই পূর্বাপর প্রদর্শনীতে তাঁর অজস্র কাজের সংগ্রহ দেখতে পাবেন শিল্পরসিকেরা। অন্য দিকে, ১৭ ডিসেম্বর, স্টুডিয়ো ২১-এ, বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে শ্রেয়সী ঘোষ-এর আন্তর্মাধ্যম উপস্থাপনা ‘বুনন’। কথা ও ছবি কী ভাবে মিলে যায়, নির্মিত বা বি-নির্মিত হয় কিছু বুনোট, তারই একটি মেধাবী রূপ নিয়ে আসবেন তিনি। আলতো হিমে মহানগরে এখন শিল্পিত উত্তাপ!
|
আলপনা |
পশ্চিমি উন্নয়নের যে সব মডেল চালু ছিল রবীন্দ্রনাথের আমলে, তাতে মানুষকে বাধ্য করা হত সীমিত এক প্রগতির পথ ধরে এগোতে। তা থেকে ব্যক্তিমানুষকে বার করে এনে ঋতু-উৎসবে বা প্রকৃতি-সেবায় উদ্বুদ্ধ করাই ছিল শান্তিনিকেতনে কবি ও তাঁর সহযোগী নন্দলাল বসুর অভিপ্রায়। সেই সূত্রেই শিল্পকলা আর কারুকর্ম অনুশীলনের খুঁটিনাটি কৌশলগুলিকে ‘আশেপাশের পরিবেশ থেকে সরাসরি গ্রহণ করা হয়েছিল। যেমন আলপনা (দেওয়াল ও মেঝে চিত্রণ)... ’, লিখেছেন কে জি সুব্রহ্মণ্যন, আনন্দ থেকে সদ্য প্রকাশিত একটি বইয়ের ভূমিকায় স্বাতী ঘোষের রবীন্দ্রভাবনায় শান্তিনিকেতনে আলপনা (৪০০.০০)। জীবনবোধ গড়ে তোলার এ-ব্রতে আলপনার মতো দেশজ শিল্পধারার গড়ে ওঠা, ধ্রুপদী মাত্রা ও উৎকর্ষে পৌঁছনো, বাণিজ্যকরণ, অন্যান্য কারুশিল্পে অধিগ্রহণ এ সবেরই অনুসন্ধিৎসু আলোচনা, বিবরণ স্বাতীর মূল্যবান বইটিতে।
|
|
পুঁতির ঐতিহ্য |
প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে পুঁতি কেবল অলঙ্কারই নয়, ইতিহাসের একটি অমোঘ পদচিহ্নও বটে। খ্রিস্ট জন্মের প্রায় তিরিশ হাজার বছর আগেও ভারতে পুঁতির সন্ধান পাওয়া যায়। হরপ্পার সময় তা এতটাই উন্নত হয়েছিল যে তখন থেকে বিদেশের নানা স্থানে পুঁতি চালান যেত, এও প্রমাণিত। পুঁতি তৈরিতে ক্রমশ নতুন প্রযুক্তি এলেও গুজরাতের খামবাট এলাকাতে এখনও সেই প্রাচীন পদ্ধতিতে পুঁতি বানাচ্ছেন বেশ কিছু পরিবার। পুঁতির সেই ইতিহাস অনুসন্ধান এ বার ভারতীয় জাদুঘরে। ‘ইন্ডিয়ান বিড টেকনোলজি: অ্যান ইনট্যানজিবল হেরিটেজ অব ইন্ডিয়া’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে, ১৪-১৫ ডিসেম্বর। ১৩-য় পুঁতি তৈরির কর্মশালা, শেখাবেন গুজরাতের শিল্পীরা। উৎসাহীরা যোগ দিতে পারেন, জানালেন স্পেশাল অফিসার সায়ন ভট্টাচার্য। সঙ্গে পুঁতির ইতিহাস নিয়ে বলবেন কিশোরকুমার বাসা, ত্রিলোক ঠাকুরিয়া, আর কে মহান্তি এবং কে রাজন।
|
মুক্তচিন্তা |
বাংলার অন্যতম ঐতিহ্য মুক্তচিন্তা। প্রায় এক দশক মুক্তচিন্তার প্রচার ও প্রসারে নিযুক্ত অনীশ সংস্কৃতি পরিষদ। প্রতি বছরের মতো এ বারেও বাৎসরিক মুক্তচিন্তা সম্মেলন অবনীন্দ্র সভাগৃহে, ১৮ ডিসেম্বর। অনুষ্ঠানের প্রথমাংশে বই প্রকাশ— সমাজে সংস্কার, বিপন্ন ভাষা ও ভারতবর্ষ, নাস্তিকতার ইস্তাহার, অনীশ করণীয় প্রভৃতি। দ্বিতীয় অংশে আলোচনায় গৌতম ভদ্র যোগেন চৌধুরি। গিয়াসুদ্দিনের প্রসঙ্গ: মুসলমান সমাজে সংস্কার বইটি প্রকাশ করবেন মহাশ্বেতা দেবী। |
বাঁশিতে ডেকেছে |
রবীন্দ্রগানে ‘বাঁশি’ শব্দটির প্রয়োগ বিশেষ অর্থবহ। কৈশোরকালেই বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যের সঙ্গে কবির পরিচয় ঘটেছিল। এর মধ্যে বিদ্যাপতির পদাবলির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল নিবিড়।
ষোলো বছর বয়সে কবি লেখেন
‘গহন কুসুমকুঞ্জ মাঝে
মৃদুল মধুর বংশী বাজে।’
এরপর সারা জীবন ধরে কবি কখনও বাঁশির তানকে মিলিয়েছেন বিশ্বচরাচরের সীমাহীন ব্যাপ্তিতে, কখনও মোহন বাঁশির অচিন সুর কৃষ্ণপ্রেমে পাগলিনী রাধার চিত্তকে ব্যাকুল করে তুলেছে দয়িতের সঙ্গে মিলনের আকাঙ্ক্ষায়। প্রেমের অনুষঙ্গে রচিত এমত কিছু গান সংকলন করে শৈলজারঞ্জন মজুমদার প্রতিষ্ঠিত ‘প্রাচীন প্রবাহিনী’-র শিল্পীরা নিবেদন করছেন নৃত্যালেখ্য ‘বজাও রে মোহন বাঁশি’, ১৫ ডিসেম্বর সন্ধে ৬ টায়, শিশির মঞ্চে। নৃত্য পরিচালনায় পলি গুহ, সংগীত ও নৃত্যে সংস্থার শিল্পীরা। পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের সহায়তায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের সূচনাপর্বে একক রবীন্দ্রগানে আশিস ভট্টাচার্য।
|
উপলক্ষ চল্লিশ |
এ বছর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চল্লিশ বছর। হাসিনা সরকার নতুন ভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকাকে। দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সম্পর্কের উন্নয়নে বড় ভূমিকা থাকে নাগরিক সমাজেরও। মূলত এই ভাবনা থেকেই এ শহরে আয়োজিত হয়েছে এক আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্র, উপদেষ্টা শঙ্খ ঘোষ। উদ্যোক্তা ইনস্টিটিউট অব সোশাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ, সঙ্গে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট অব এশিয়ান স্টাডিজ এবং কবীর চৌধুরি পরিচালিত সাউথ এশিয়ান পিপলস ইউনিয়ন এগেনস্ট ফান্ডামেন্টালিজম অ্যান্ড কম্যুনালিজম। ১৬-১৮ ডিসেম্বর, আই সি সি আর-এ। থাকছেন দু’দেশের বহু বিশিষ্টজন। এই উপলক্ষে বেঙ্গল গ্যালারিতে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও ভারত’ শীর্ষক এক প্রদর্শনীতে থাকবে বহু দুর্লভ ছবি ও নথি, সঙ্গে দু’দেশের প্রায় পঞ্চাশ জন শিল্পীর চিত্র ও ভাস্কর্য প্রদর্শনী, চলবে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রথম দিন ভারত সরকারের ডাক বিভাগ প্রকাশ করবে একটি বিশেষ খাম। থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বইয়ের প্রদর্শনী। শেষ দিন লেখক ও চিত্রপরিচালক শাহরিয়ার কবিরের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান বিষয়ক এক চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত হবে। |
সম্মান |
বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন মুনীর চৌধুরি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্য পড়ানোর সুবাদে তিনি ঘুরেছেন বহু দেশে। ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে যোগ দিয়ে কারারুদ্ধ হন। সেখানে বসেই লিখেছিলেন তাঁর বিখ্যাত নাটক ‘কবর’। সে সময় স্তিমিত হয়ে আসা নাট্য আন্দোলনকে উজ্জীবিত করেছিলেন তিনি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে। আজকের বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত নাট্যকর্মীদের অধিকাংশই তাঁর ছাত্রছাত্রী। স্বাধীনতা প্রাপ্তির দিন কয়েক আগে নিরুদ্দেশ হন তিনি, আসলে সেনাদের হাতে নৃশংস ভাবে শহিদ হন। বাংলাদেশে ওঁর স্মৃতিতে ১৯ বছর দেওয়া হচ্ছে ‘মুনীর চৌধুরি সম্মান’। শামসুল হক, সেলিম আলদীনের মতো অনেকেই এই সম্মানে সম্মানিত। তবে এই প্রথম কাঁটাতার ডিঙিয়ে এ পারের নাট্যব্যক্তিত্ব মনোজ মিত্রকে দেওয়া হল এই সম্মান। ২৭ নভেম্বর শিল্পকলা অকাদেমির তরফে জাতীয় নাট্যশালা, ঢাকায় এই সম্মান তুলে দেওয়া হল মনোজবাবুর হাতে। উপস্থিত ছিলেন মুনীরের ভাই কবীর চৌধুরী, তাঁর পরিবারের লোক ও বাংলাদেশের অজস্র নাট্যপ্রেমী মানুষজন। ফিরদৌসী মজুমদারের সঙ্গে মনোজবাবু এখানে পরিবেশন করেন তাঁরই লেখা শ্রুতিনাটক ‘দম্পতি’-র অংশবিশেষ এবং একটি একাঙ্ক ‘ভগীরথের মূর্তি’। প্রাণের আবেগ সে দিন ভেঙে ফেলেছিল কাঁটাতারের বেড়া, বলছিলেন মনোজবাবু। |
শতবর্ষ |
জন্ম ১৯১১-র ১২ ডিসেম্বর। অবিভক্ত বাংলার পাবনা জেলার হরিপুর গ্রামের এক জমিদার-ব্রাহ্মণ পরিবারে। কিন্তু তাঁর চিন্তায় মার্কসবাদ-লেনিনবাদ হল এ যুগের বিপ্লবী হিউম্যানিজম। প্রলেতারীয় শাসনের সমর্থক হয়েও একদলীয় আমলাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সমর্থক ছিলেন না অগ্নিযুগের বিপ্লবী ত্রিদিব চৌধুরী। গত শতকে বিশের দশকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে পঞ্চাশের দশকে গোয়ায় পর্তুগিজ শাসনের বিরুদ্ধে সত্যাগ্রহ আন্দোলনে কারাবরণ করেন। একদা রাজ্যসভার সম্মানিত সদস্য ও আরএসপি-র সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত এই মানুষটির জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে আজ ১২ ডিসেম্বর মৌলালির যুবকেন্দ্রে এক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। থাকছেন অশোক মিত্র সহ অন্য বিশিষ্ট জন।
|
স্মৃতির কোলাজ |
|
সবটুকুই যেন স্মৃতির কোলাজ। যে স্মৃতিগুলো এক সময় ভারত-ব্রিটেন সম্পর্কের উন্নতি ঘটিয়েছিল। লেখক ও রাজনৈতিক কর্মী কৃষ্ণ মেনন অ্যালান লেন-এর সঙ্গে স্থাপন করেছিলেন ‘পেঙ্গুইন ও পেলিক্যান বুকস’। ভারতীয় স্থাপত্য অনুসারে স্থপতি জন ন্যাশ তৈরি করেন ব্রাইটনের রয়্যাল প্যাভিলিয়ন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতীয় সেনাদের জন্য এটি ব্যবহৃত হয় হাসপাতাল হিসেবে। গাঁধীজি, দাদাভাই নওরোজি, মহারাজা রণজি, উদয়শঙ্কর, কর্নেলিয়া সোরাবজি, নন্দলাল বা আব্দুল করিমের মতো ব্যক্তিত্ব এবং ঘটনার স্মৃতির কোলাজ। ব্রিটিশ কাউন্সিলের উদ্যোগে ও দেশের ওপেন ইউনিভার্সিটি এবং ভারতের ন্যাশনাল আর্কাইভস-এর সহায়তায় এমন অজস্র তথ্য নিয়ে তৈরি হয়েছে একটি প্রকল্প। ছবি, সংবাদপত্রের খবর, ডায়েরি, কার্টুন, বিজ্ঞাপন এমত নানাবিধ উপাদান নিয়ে আয়োজিত একটি প্রদর্শনী, ‘বিয়ন্ড দ্য ফ্রেম’ এখন ক্যামাক স্ট্রিটের ব্রিটিশ কাউন্সিলে। এর উদ্বোধন উপলক্ষে ছিল একটি আলোচনাচক্র। অনেকেই বললেন, জগদীশচন্দ্র, রামমোহন প্রমুখের উল্লেখ থাকাটা জরুরি ছিল। এ উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে তথ্যবহুল একটি পুস্তিকা। প্রদর্শনী চলবে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত, অথবা দেখা যাবে www.bl.uk/asiansinbritain-এ। সঙ্গের ছবি প্রদর্শনী থেকে, ব্রিটিশ লাইব্রেরি বোর্ডের সৌজন্যে। |
অন্য স্বর |
চার পেরিয়ে এ বার পাঁচ। মহানগরে আরও এক বার লেসবিয়ান-গে-বাইসেক্সুয়াল-ট্রান্সজেন্ডার, অর্থাৎ যৌনতার সমান্তরাল নানা স্বরের বার্ষিক ফিল্ম এবং ভিডিও উৎসব ‘ডায়ালগস’-এর উদযাপন আসন্ন (১৬-১৮ ডিসেম্বর) । শরীরী কামনার ‘মূল’ স্রোতের শাসনে ক্রমেই প্রান্তে সরে যায়, বিপন্ন হয়ে পড়ে যারা, সেই সব প্রায় অশ্রুত, বা অর্ধশ্রুত স্বর-লিপিগুলি কী রকম, সেই খোঁজ বড় একটা পড়ে না। ‘স্যাফো ফর ইকুয়ালিটি’ এবং ‘প্রত্যয় জেন্ডার ট্রাস্ট’-এর যৌথ আয়োজনে এই উৎসবের বর্তমান বছরের অংশীদার ম্যাক্সমুলর ভবন/গ্যেটে ইনস্টিটিউট। বার্লিন ফিল্মোৎসবের নির্বাচিত কিছু ছবি থেকে শুরু করে অপেশাদার ভিডিও, এই উৎসবের চলচ্ছবির ব্যাপ্তিটি বিস্তৃত। পাশাপাশি, অন্য স্বরের কথা যদি উঠেই পড়ে, তা হলে উল্লেখ থাক যে ১৬ ডিসেম্বর, অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের সামনে মোহর কুঞ্জে অঞ্জলি মেন্টাল হেলথ রাইটস অর্গানাইজেশন-এর আয়োজনে ‘সোল সুফিয়ানা’। গাইবেন আনুশে আনাদিল।
|
নাট্যমেলা |
এরে পরতে গেলে লাগে, ছিঁড়তে গেলে বাজে।’ উত্তর রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের। প্রশ্নটি ছিল, ২৮ বছর ধরে এই শহরে আপনি একটি জাতীয় নাট্যমেলার সংগঠক, কেমন লাগে? ১৬ ডিসেম্বর অ্যাকাডেমিতে শুরু হচ্ছে নান্দীকারের জাতীয় নাট্যমেলা। তার আগে কথা হচ্ছিল তাঁর সঙ্গে। বলছিলেন, ‘সারা ভারতে অনেক নাট্যমেলাই আমাদের, থুড়ি, কলকাতাকে অনুসরণ করেছে। অনেক কষ্টের মধ্যেও সেইটা আমার দারুণ লাগে।’ ইজরায়েল, ঢাকা থেকে নাটক আসছে এই মেলায়, থাকছে মুম্বই, অসম, ভোপাল, দিল্লি, কাশ্মীর, ওড়িশা থেকেও। নাটক নিয়ে উদ্যাপনের এই অবসরে কষ্টগুলো কী? ‘সরকারি অনুদান পাই, কিন্তু অর্থাভাব লেগেই আছে। এত অতিথি আসেন দেশ-বিদেশ থেকে, তাঁদের রাখব কোথায়? বড় হোটেল তো আর কুলিয়ে উঠতে পারি না,’ বলছিলেন রুদ্রপ্রসাদ। দশ দিনের উৎসবেই আরও বেশি দেশি-বিদেশি নাটক যাতে এ শহরের মানুষকে দেখানো যায়, তার জন্য ছোট নাটক নির্বাচন করা হয়। দিন না-ই বাড়ুক, দর্শকের সংখ্যা বাড়ছে কি? ‘একটা স্ট্যান্ডার্ড উৎসাহ সব সময়েই দেখে আসছি, তবে আশার কথা ইদানীং নতুন প্রজন্মের অনেককে দেখছি এই উৎসবে,’ উত্তর রুদ্রপ্রসাদের। |
|
|
|
মানবিক |
সারা জীবন মানুষের পাশে থেকেছেন। প্রবল প্রাণশক্তি আর বাঁচার অদম্য ইচ্ছের কাছে বার বার পরাজিত হয়েছে তাঁর বহু বার অস্ত্রোপচার করা হৃদয় এবং ভগ্ন শরীর। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাখরাহাটের বারকালিকাপুর গ্রামে ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৪৩-এ জন্ম শৈবাল মিত্রের। প্রদ্যোত মিত্র ও ইলারাণী দেবীর পুত্র। স্কটিশ চার্চ কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা। অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্রনেতা ছিলেন শৈবাল, পার্টি ভাগের পর আসেন সিপিআইএম-এ। তার পর নকশালবাড়ি আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সাংগঠনিক ও তাত্ত্বিক নেতা। তেজোদীপ্ত বক্তৃতা করতেন। ‘কমিউনিস্ট পার্টির কাঠামোয় গণতন্ত্রীকরণ দরকার’ এ কথাটা বারবার বলতেন। বন্দিমুক্তি কমিটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, সদস্য ছিলেন এপিডিআর-এর। প্রিয় আড্ডার জায়গা ছিল কফিহাউস, যখন তার অস্তিত্ব রক্ষা নিয়ে সংশয় দেখা দিল, তখন শৈবালই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা বলে কফিহাউসকে সংকটমুক্ত করেন। সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে এসে সত্তর দশকের গোড়া থেকেই সাহিত্যচর্চার শুরু। প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ অজ্ঞাতবাস, গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ- ভ্রমণকাহিনি সব মিলিয়ে ৫২টি গ্রন্থ। ষাটের ছাত্র আন্দোলন, আজ আছি, বজ্রনির্ঘোষের উপন্যাস, নির্বাচিত গল্প ও অগ্নির উপাখ্যান তাঁর উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি। গত ২৭ নভেম্বর স্ত্রী সুদেষ্ণা দেবী, দুই মেয়ে শিল্পিতা ও শ্রেয়াকে রেখে ৬৮ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন মানবিক এই লেখক। রবীন্দ্র-ওকাকুরা ভবনে এক অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট জনেরা শ্রদ্ধা জানালেন মানুষটিকে। |
|
|
|
|
|
|
|