মেয়েদেরই বাজিমাত! শনিবার রাতের পার্টিতে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত এক বন্ধুকে বলছিলেন, “দেখলেন তো মেয়েদের ক্ষমতা!” তার কিছুক্ষণ আগে রয়্যাল ক্যালকাটা গল্ফ ক্লাবে আনন্দবাজার পত্রিকা-অম্বুজা রিয়্যালটির ‘বায়োস্কোপে বাজিমাত’ ক্যুইজে তিনি আর স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়-ই ‘চ্যাম্পিয়ন’!
টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রির ‘হিট’ পরিচালক আর নায়ক-নায়িকাদের নিয়ে বাছাই ছ’টি ক্যুইজ টিম। তার মধ্যে ঋতুপর্ণা আর স্বস্তিকার জুটিটাই শুধু মেয়েদের নিয়ে। বাকি পাঁচটা টিমের চারটিতে নারী-পুরুষের অনুপাত ১:১। জিৎ-শ্রাবন্তী, দেব-কোয়েল, রাজ চক্রবর্তী-অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়, অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী-ইন্দ্রাণী হালদার। আর একটা টিমে তো খাঁটি ‘পুরুষতন্ত্র’! ক্যুইজের উত্তর দিতে সেখানে জুটি প্রসেনজিৎ ও সৃজিৎ মুখোপাধ্যায়ের।
প্রথম কয়েক রাউন্ডের পর থেকেই ‘মিক্সড্ ডাবলস্’ টিমগুলো পিছিয়ে পড়ছিল। সৃজিৎ আর প্রসেনজিতের টিমই তখন এক নম্বরে। তবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের শেষ রাউন্ডে জিতে গেল স্বস্তিকা-ঋতুপর্ণার ‘নারীবাহিনী’।
পুরুষদের অনেক ‘মিসগাইডেন্স’ ও ‘গোপন ষড়যন্ত্র’ তছনছ করেই এসেছে জয়। শ্রাবন্তী একটি প্রশ্নের ভুল উত্তর দিলেন। এবং তার পরেই সটান জানালেন, উত্তরটা তিনি ঠিকই ভেবেছিলেন। কিন্তু সৃজিৎ পাশের টেবিল থেকে তাঁকে ‘মিসগাইড’ করছিলেন। অভিযোগের উত্তর নেই, ‘পুরুষতন্ত্র’ তখন মিটিমিটি হাসছে। প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র সৃজিৎ পোড় খাওয়া ক্যুইজার। তিনি জানেন, প্রেমে এবং ক্যুইজে কোনও নীতি থাকে না।
আর ‘গোপন ষড়যন্ত্র’? ক্যুইজমাস্টার মীরের প্রশ্ন, ‘খিড়কি থেকে সিংহদুয়ার’ গানটা কোন ছবিতে ছিল? জিৎ-শ্রাবন্তী টিম পারছে না উত্তর দিতে। দর্শকাসনে পাশাপাশি বসে ‘ব্যোমকেশ’ আবির চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী নন্দিনী। নন্দিনীকে দেখিয়ে আবির বন্ধুর উদ্দেশে চেঁচালেন, ‘‘আরে বলতে পারছিস না, ও আমার কে হয়?’’ |
ঋতুপর্ণা ও স্বস্তিকার হাতে বিজয়ীর পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও বনি কপূর। শনিবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী |
এ রকমই ছিল অনুষ্ঠানের মেজাজ। দর্শকাসনে প্রায় সারা টলিউড। তাঁরাও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বন্ধুদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। রাজ-অর্পিতা জুটি তখন অনেকটা পিছিয়ে। শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় মাঠ থেকে বললেন, ‘‘ওরে, প্রলয় আসছে!’’ অনিরুদ্ধ-ইন্দ্রাণীর টিম দু’টো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারল না। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় সঙ্গে সঙ্গে হাঁক দিলেন, ‘‘ফাইট টোনি, ফাইট!’’
এই পরিবেশের মধ্যেই বিজয়ী টিমের দ্রুত গতির দৌড়! ‘বাজার রাউন্ড’-এ যে টিম আগে ‘বাজার’ টিপবে, তারাই উত্তর দেবে। সেখানেই ‘সাঁঝবাতির রূপকথারা’ ছবি নিয়ে প্রশ্ন। কিন্তু সে ছবির নায়িকা ইন্দ্রাণী হালদারের চেয়েও দ্রুত ‘বাজার’ টিপে দিলেন ঋতুপর্ণা। ইন্দ্রাণী অবশ্য বলছিলেন, তাঁর টেবিলের যন্ত্রটি খারাপ ছিল, টেপাটেপি করেও কিছু হয়নি। কিন্তু সঞ্চালক থেকে ম্যাচ রেফারি শ্রীকান্ত মোহতা, কেউই তাঁর যুক্তিতে কান দেননি। জয়ের খিদে এবং প্রত্যুৎপন্নমতিত্বই এ দিন ঋতুপর্ণা-স্বস্তিকাদের এগিয়ে দিয়েছে।
মেয়েদের ক্যুইজ-জয় এ রকমই হয়? শহরের খ্যাতনামা ক্যুইজমাস্টার ডেরেক ও’ব্রায়েন ঘটনাটা শুনে হাসছেন, “এখন স্কুল, কলেজজীবন থেকেই মেয়েরা ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় নামে। ছেলেদের চেয়ে একচুলও কম যায় না তারা।”
তবে ক্যুইজের মজাটাই এ দিনের সব নয়। শোক বুকে চেপে কলকাতাকে ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বলেছে টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রি। শুনিয়েছে জীবনের কথা। আমরি-কাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াবে টলিউড। ঘটনাচক্রে, কেবিসি বা বোর্নভিটা ক্যুইজ কনটেস্ট ইত্যাদির আগে ভারতে প্রথম ক্যুইজ-অনুষ্ঠান হয় এই কলকাতাতেই, ১৯৬৭ সালে সেন্ট পল্স ক্যাথিড্রালের প্যারিস হলে। ক্যুইজমাস্টার ছিলেন নিল ও’ব্রায়েন। টালিগঞ্জ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সেই ক্যুইজযাত্রার খবরে তিনি উচ্ছ্বসিত, “বলেন কী? ক্যুইজ যে এ ভাবে জাতীয় বিনোদন হয়ে দাঁড়াবে, ’৬৭ সালে ভাবতেই পারিনি!”
যেমন ভাবা যায়নি, ভারতীয় ক্যুইজের জন্মভূমিই টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রির হাত ধরে ক্যুইজকে পৌঁছে দেবে সম্পূর্ণ অন্য এক মাত্রায়। মৃত্যুকে হারিয়ে জীবনের অঙ্গীকারে। |