পরিকাঠামো পর্যাপ্ত না হলেও পুরোপুরি বেহাল নয়। রয়েছেন চিকিৎসক ও নার্সও। তবু চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর অভাবে দীর্ঘ দিন ধরে রোগীরা উপযুক্ত পরিষেবা পান না বলে অভিযোগ। কাঁকসা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এই সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সবুজ বালা। তিনি জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছে। জেলার অন্যতম উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসীম মালাকার শীঘ্র প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
জাতীয় সড়ক ও পানাগড়-মোড়গ্রাম রাজ্য সড়কের মোড় থেকে সামান্য দূরে রয়েছে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। আদিবাসী অধ্যুসিত কাঁকসার এক বিস্তীর্ণ অংশের মানুষ সম্পূর্ণভাবেই এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির উপরে নির্ভরশীল। তাছাড়া জাতীয় বা রাজ্য সড়কে দুর্ঘটনা ঘটলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আহতদের প্রথমে এখানেই নিয়ে যাওয়া হয়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির পরিকাঠামো নিয়েও অভিযোগ ছিল বাসিন্দাদের। বছর দু’য়েক আগে স্বাস্থ্য দফতর স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির পরিকাঠামো উন্নয়নে উদ্যোগী হয়। শয্যা সংখ্যা ১০ থেকে বেড়ে হয় ৩০। গড়ে তোলা হয় উন্নতমানের অপারেশন থিয়েটার। ‘আইসোলেশন ওয়ার্ড’ গড়ার কাজও চলছে। সব মিলিয়ে আগের থেকে এখানে চিকিৎসা পরিষেবার উন্নতি হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি ফের পরিষেবা হাল খারাপ হচ্ছে। রোগ সামান্য জটিল হলেই রোগীকে অন্যত্র ‘রেফার’ করে দেওয়া হচ্ছে। কমে গিয়েছে প্রসূতি ভর্তির সংখ্যাও। এমনই অভিযোগ এলাকার বাসিন্দাদের।
বর্তমানে ওই ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৫ জন চিকিৎসক ও ৫ জন নার্স রয়েছেন। কিন্তু চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর সংখ্যা মাত্র তিন জন। তার মধ্যে আবার এক জন অসুস্থ থাকায় ছুটি নিয়েছেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত চতুর্থ শ্রেণির কর্মী না থাকায় চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা কল্যাণীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এলাকায় অনেক দুঃস্থ মানুষজন রয়েছেন। পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় সবথেকে বেশি সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা।” ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সবুজ বালা অভিযোগ স্বীকার করে জানান, চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর অভাবে ইন্ডোর ও আউটডোর দু’জায়গাতেই চিকিৎসা পরিষেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
ব্লকের একমাত্র সরকারি হাসপাতালের দমন দশায় ক্ষুব্ধ রাজনৈতিক মহলও। কাঁকসার ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “বাম জামানায় দীর্ঘ দিন ধরে স্বাস্থ্যের দিকটি অবহেলিত ছিল। নিয়মিত শূন্যপদ পূরণ হয়নি। তাই তাই এই দশা।” গলসির বিধায়ক ফরোয়ার্ড ব্লকের সুনীল মণ্ডল বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য। ইতিমধ্যেই তিনি বিষয়টি নিয়ে বিধানসভায় আলোচনা করেছেন বলে জানান। সুনীলবাবু বলেন, “ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দ্রুত চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগের দাবি জানানো হয়েছে।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তন্ময় মুখোপাধ্যায় বাইরে থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে অন্যতম উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসীম মালাকার বলেন, “ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছ থেকে সমস্যার কথা জেনেছি। কী ভাবে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা যায় দেখছি।” |