বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যেই উৎসব-হাহাকারের শিবির বদল
ইয়াকুবুদের পায়ের জাদুতে মোহনবাগান সম্মোহিত
মোহনবাগান-২ (স্নেহাশিস, ওডাফা)
প্রয়াগ ইউনাইটেড-৩ (শঙ্কর, ইয়াকুবু পেনাল্টি-সহ ২)
জিদ বাসকারের স্মৃতি কি ফেরালেন ইউসিফ ইয়াকুবু?
আটের দশকের ইরানি জাদু কি কলকাতায় ফিরল ঘানার ফুটবলারের পা দিয়ে?
বুধবার সুব্রত ভট্টাচার্যর মোহনবাগানকে আকাশ থেকে মাটিতে আছড়ে ফেলার দিনে ইয়াকুবুকে দেখে স্টেডিয়ামে উপস্থিত অনেকেরই স্মৃতি মনে করাচ্ছিল মজিদকে। সেই সাপের মতো ড্রিবল, সেই ছবির মতো পাস, একার কৃতিত্বে বিপক্ষ ডিফেন্সকে দেহের দোলায় ছিন্নভিন্ন করে গোল করে যাওয়াইয়াকুবুর পায়ে তো সবই দেখল এ দিনের যুবভারতী। সম্মোহিত হয়ে।
তুলনা নিয়ে বিতর্ক কেউ তুলতেই পারে। স্বয়ং মোহনবাগান টিডি কিন্তু বললেন, “মজিদের চেয়ে কোনও কোনও জায়গায় ইয়াকুবুকে আমি এগিয়ে রাখব। এই বয়সে ওর ধারাবাহিকতা দেখার মতো।” আর চুনী গোস্বামীর মন্তব্য, “ওডাফার চেয়ে অনেক বড় ফুটবলার ইয়াকুবু।”
গোল করার নাচ, গোল খাওয়ার লজ্জা। বুধবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
কিন্তু যাঁকে নিয়ে ম্যাচের পর মুগ্ধতা, জর্জ বেস্টের অন্ধ ভক্ত সেই ইয়াকুবু কী বলছেন? “মজিদের নাম শুনেছি। ওকে দেখিনি। সময় পেলেই বেস্টের ড্রিবল মুগ্ধ হয়ে দেখি। গোলগুলোও। বেস্টই আমার স্বপ্নের ফুটবলার।” যা শুনে ইউনাইটেড অধিনায়ক লালকমল ভৌমিক বলে ফেললেন, “ইয়াকুবুই আমাদের জর্জ বেস্ট।”
বুধবারের আই লিগ আসলে ছিল সুব্রত বনাম সুব্রতর যুদ্ধ। গত কয়েক বছর যাদের কোচিং করিয়ে এসেছেন সেই দলের বিরুদ্ধেই নেমেছিলেন গল্ফগ্রিনের বাবলু। এবং বলতে দ্বিধা নেই, চূড়ান্ত ফিটনেসের দৌলতে টগবগ করে ফুটল পুরো ইউনাইটেড টিমটাই। ইয়াকুবু তো বটেই জোসিমার, লালকমল, জয়ন্ত, বেলো, দীপক মণ্ডলরা লড়াইটা কার্যত এক তরফা করে দিলেন। এতটাই যে, কয়েকসপ্তাহ আগে ডেম্পোর কাছে মোহনবাগানের পাঁচ গোলে হারের রেকর্ডও ভেঙে যেতে পারত এ দিন। “আমাদের অন্তত সাত গোল করা উচিত ছিল,” ম্যাচের পর দাবি করলেন ইয়াকুবুদের কোচ সঞ্জয় সেন। সুব্রতর জমানায় যিনি কোচ হয়েও ইউনাইটেডে ছিলেন ব্রাত্য।
আট থেকে আঠারোদশ মিনিটের মধ্যেই ০-৩ পিছিয়ে পড়তে পারত বাগান। সংগ্রাম আর কিংশুক গোললাইন থেকে বল না ফেরালে। তা সত্ত্বেও সুব্রতর টিম দু’বার এগিয়ে গিয়েছিল। ১-০ থেকে ১-১ করলেন শঙ্কর। বিরতির পর ওডাফা ২-১ করলেন। পেনাল্টি থেকে তাও শোধ করলেন ইয়াকুবু। নিজেদের বক্সে কিংশুক হাতে লাগিয়েছিলেন বল। জয়ের গোলটা ইয়াকুবুর-ই। মোহন রক্ষণকে কাঁদিয়ে ছেড়ে।
স্কোরটা অবশ্য খেলার সঙ্গে মানানসই নয়। ৯০ মিনিটের মধ্যে কার্যত ৭৫ মিনিট আট বা নয় জনে নিজেদের রক্ষণ সামলাল সুব্রতর টিম। ময়দানে বড় দলগুলোর বিরুদ্ধে ছোট দলগুলো যা করে থাকে! এরকম সময় নীচে নেমে এসে দলকে বাঁচান যিনি, সেই ব্যারেটো ছিলেন না। খোঁড়াতে থাকা ওডাফা বা সুনীলকে সেই কাজটা করার চেষ্টা করতে হল। দু’জনেই অবশ্য চূড়ান্ত ব্যর্থ। সুব্রত স্বীকার করলেন, “গোয়ায় ডেম্পো ম্যাচের চেয়েও খারাপ খেলেছি আমরা। জঘন্য। কেউ কিস্যু খেলতে পারেনি। ব্যারেটো-সহ আমার ছয় জন ফুটবলার ছিল না। ওদের জায়গা নেওয়ার মতো লোক কোথায়?”
আই লিগের ১৪ দলের মধ্যে দুটো টিম এখনও অপরাজিত ডেম্পো এবং প্রয়াগ ইউনাইটেড। কলকাতার তিনটে দলের মধ্যে সবথেকে ভারসাম্যময় দল প্রয়াগ। রিজার্ভ বেঞ্চে যাঁরা বসে আছেন তাদের দিয়েই আরও একটা শক্তিশালী দল গড়া যায়। ঠিকঠাক খেললে চ্যাম্পিয়নের লড়াইতে থাকার কথা তাদের। কর্তারা এ দিনের পর মনে হল সেটা ভাবতেও শুরু করেছেন। স্পনসর প্রয়াগের পক্ষ থেকে এ দিন জেতার জন্য সাড়ে তিন লাখ টাকা দেওয়া হল ফুটবলারদের।
পুরস্কার তো অন্য ভাবে পেল মোহনবাগানও! হারলেও ডেম্পো ম্যাচের মতো নবি-সুনীলদের গোলের মালা পরে ফিরতে হল না তাঁবুতে।

প্রয়াগ ইউনাইটেড: অভিজিৎ, দীপক, জাস্টিন, বেলো, সুখেন, লালকমল, শঙ্কর (সুভাষ), গৌরাঙ্গ (স্নেহাশিস, ক্রিশপিন), জয়ন্ত, জোসিমার, ইয়াকুবু।
মোহনবাগান: সংগ্রাম, সুরকুমার, ড্যানিয়েল, কিংশুক, ধনরাজন, নবি, প্রদীপ (গৌরাঙ্গ, জাগতার) অসীম, স্নেহাশিস, সুনীল, ওডাফা (শাখতার)।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.