পাঁচ বছর আগে দুই সিপিএম কর্মী খুনের মামলা প্রত্যাহারের ব্যাপারে সরকারি আবেদনে সম্মতি জানালেন নদিয়ার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক শম্পা দত্ত (পাল)। সিপিএম অবশ্য এই রায়ের প্রতিবাদ করে জানিয়েছে, তারা উচ্চ আদালতে যাবে।
২০০৬ সালে নদিয়ার বাঁশডোবায় ওই খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে বলরাম দেবনাথ, পরেশ বিশ্বাস ও অমিয় সন্ন্যাসী নামে তিন কংগ্রেস কর্মী ছিলেন। কিছু দিন আগে শান্তিপুরের কংগ্রেস বিধায়ক অজয় দে তাঁদের মুক্তির জন্য আইনমন্ত্রী মলয় ঘটককে চিঠি লেখেন। পরে নদিয়া জেলা আদালতের সরকারি কৌঁসুলি কিশোর মুখোপাধ্যায়কে চিঠি পাঠান রাজ্য সরকারের লিগ্যাল রিমেমব্রানসার (এলআর) ইন্দ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তাতে বলা হয়, আইনমন্ত্রীর নির্দেশে অজয়বাবুর ওই চিঠি বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারি কৌঁসুলির কাছে পাঠানো হচ্ছে।
বুধবার সরকারি কৌঁসুলি বিচারকের কাছে মামলা তুলে নেওয়ার আবেদন জানান। এলআর-এর চিঠিটিও তিনি আদালতে পেশ করেন। ওই দিনই নিহতের পরিবার আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে সরকারি এই আবেদনের বিরুদ্ধে আপত্তি জানায়। তাদের আইনজীবী, চাপড়ার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সামসুল ইসলাম মোল্লা বলেন, “বিচারক শুক্রবার আমাদের আপত্তি খারিজ করে সরকারের মামলা প্রত্যাহারের আবেদনেই সম্মতি জানিয়েছেন। ফলে সাত অভিযুক্ত বেকসুর খালাস পেয়েছেন।” |
অজয়বাবুর যুক্তি, “অভিযুক্তরা রাজনৈতিক হিংসার শিকার হয়েছিলেন। তাদের ফাঁসানো হয়েছিল। তাই সরকার পরিবর্তনের সুযোগে সুবিচার চেয়েছিলাম।” অজয়বাবু জানান, প্রথমে মুখ্যমন্ত্রীর
সঙ্গে দেখা করে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলেছিলেন। তাঁর কথায়, “সব শুনে মুখ্যমন্ত্রী তখনই আবেদন করতে বলেন। এর পরেই আমি আইনমন্ত্রীকে চিঠি লিখি।” আইনমন্ত্রী অবশ্য দাবি করেন, “মামলা প্রত্যাহারের নির্দেশ আমি দিইনি। বিষয়টি আমার ভাল করে জানাও নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের ১৯ নভেম্বর শান্তিপুরের বাঁশডোবা জঙ্গলের পাশে খুন হয়েছিলেন স্থানীয় একটি স্কুলের শিক্ষক নারায়ণ দেবনাথ এবং দিনমজুর সুশীল সরকার। নারায়ণবাবু সিপিএমের বাগআছড়া লোকাল কমিটির সদস্য ও জেলা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য ছিলেন। সুশীলবাবু দলের সমর্থক। তদন্তে নেমে পুলিশ কংগ্রেসের চার পঞ্চায়েত সদস্য-সহ ৮ জনকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে এক জন বছরখানেক আগে অসুস্থ হয়ে মারা যান। বাকিরা এ দিন খালাস পেলেন।
সিপিএম নেতা সামসুল ইসলাম মোল্লার আক্ষেপ, “বিচার চলছিল। ২৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দি নেওয়া হয়ে গিয়েছে। সরকার
এই ভাবে মামলা তুলে নেওয়ায় বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাবে।” এ ব্যাপারে তাঁরা উচ্চ আদালতে যাবেন বলেও জানান তিনি। সিপিএমের শান্তিপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক শান্তনু চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, “শাসকপক্ষের এই সিদ্ধান্তে শান্তিপুরের সিপিএম নেতা-কর্মীদের খুনের রাস্তাই পরিষ্কার করা হল!”
রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবিতে যাঁরা আন্দোলন করেন, সেই গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতির (এপিডিআর) সহ-সভাপতি তাপস চক্রবর্তীর মন্তব্য, “আমরা খুশি। যাঁরা রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার হয়েছিলেন তাঁদের মুক্তিই শ্রেয়।” তবে তাঁর খেদ, “এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তেরা বর্তমান শাসক-শিবিরের লোক হওয়ায় সরকার যতটা তৎপরতা দেখিয়েছে, অন্য রাজবন্দিদের ক্ষেত্রে কিন্তু তেমনটা দেখা যাচ্ছে না।” |