রুটের পারমিট রয়েছে। অথচ রাস্তায় চলে না বাস। উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় এমনই বহু পারমিটের সন্ধান পেয়েছে পরিবহণ দফতর। পারমিট থাকা সত্ত্বেও বাস না চলাচল করায় ওই সব বাসের মালিকেরা কর দেন না। ফলে একদিকে যেমন রাজস্ব থেকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে। তেমনই রাস্তায় বেরিয়ে বাসের অভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। দীর্ঘদিনের এই সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হয়েছে জেলা পরিবহণ দফতর।
দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় বাসের সংখ্যা ৫ হাজার ৪৯৪টি। এর মধ্যে বেশ কিছু বাসের পারমিট থাকা সত্ত্বেও সেগুলি রুটে চলে না। এই অবস্থায় পরিবহণ দফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ওই সব পারমিটের মালিক কে এবং তিনি কতদিন ধরে বাস চালাচ্ছেন না, সব খোঁজ নেওয়া হবে। জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ সংস্থার সদস্য (রাজ্য সরকার মনোনীত) গোপাল শেঠ বলেন, “শীঘ্রই ওই তদন্তের কাজ শেষ হলে যাঁরা পারমিট নিয়োছিলেন তাঁদের শুনানিতে ডাকা হবে। সেই সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হবে বাস চালাতে ইচ্ছুক হলে তাঁরা যেন অবিলম্বে ওই সব রুটে বাস নামান। তা না হলে সরকারি নিয়ম মেনে পারমিট বাতিল করে যাঁরা বাস চালাতে ইচ্ছুক তাঁদের তা দিয়ে দেওয়া হবে।” তবে এর পাশাপাশি জেলার বেশ কিছু রুটে পারমিট না থাকা সত্ত্বেও যে বাস চালানোর মতো বেআইনি ঘটনা ঘটছে তাও জানিয়েছে পরিবহণ দফতর। দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই সব বাসের মালিকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। |
পারমিট থাকা সত্ত্বেও বাস না চালানো, পারমিট না থাকা সত্ত্বেও বাসা চালানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় যোগাযোগের উন্নতির জন্য নতুন নতুন রুট পারমিট দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে পরিবহণ দফতর। তা ছাড়া আগে যে সব রুটে বাস চলত কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তা বন্ধ, সে সব রুটেও ফের বাস চালু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যেমন বাগদা থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত আগে সরকারি বাস চলত। দীর্ঘদিন ধরে তা বন্ধ। অশোকনগর এবং কলকাতার মধ্যে সরকারি বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ওই সব বাস ফের চালু করা হবে বলে পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় বেআইনি অটোরিকশার দাপট যে ভাবে বেড়ে গিয়েছে তা নিয়েও চিন্তিত পরিবহণ দফতর। প্রসঙ্গত, বেআইনি অটো চলাচলের প্রতিবাদে গত ৮ নভেম্বর বনগাঁ-বাগদা রুটে বাস ও অটো চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিলেন মালিক এবং শ্রমিকেরা। পরদিন, ৯ নভেম্বর ওই একই প্রতিবাদে বসিরহাট মহকুমার হিঙ্গলগঞ্জের দুলদুলি থেকে হাসনাবাদ পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ রাখেন বাসমালিক ও শ্রমিকেরা। এ বিষয়ে গোপালবাবু জানান, বেআইনি অটোর ব্যাপারে সরকার এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া ট্রাকে বহন ক্ষমতার অতিরিক্ত মাল পরিবহণের ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হয়েছে পরিবহণ দফতর। কারণ ওভারলোডিংয়ের ফলে রাস্তার অবস্থা দ্রুত খারাপ হচ্ছে। বাড়ছে দুর্ঘটনা। |
তবে এত সব সমস্যা সামলাতে পরিকাঠামোর উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছে পরিবহণ দফতর। ২০১১ সালের মার্চ মাস থেকে বারাসতের আরটিও পদটি শূন্য। এআরটিও সমীর প্রামাণিক এবং সৌরীন দাস ওই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। আরটিও পদ শূন্য থাকায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। আবার বসিরহাটে এআরটিও দফতর থাকলেও সেখানে কোনও এআরটিও নেই। জেলার দূরদূরান্ত থেকে বারাসত আরটিও অফিসে কর জমা দিতে আসতে হয় গাড়ির মালিকদের। অথচ সেখানে না আছে বসার ব্যবস্থা। না আছে শৌচাগার। ফলে সমস্যায় পড়তে হয় করদাতাদের। পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে গত ৯ নভেম্বর বারাসতে জেলাশাসক সঞ্জয় বনশলের দফতরে আরটিও বোর্ডের প্রথম বৈঠক হয়। সেখানে যাবতীয় সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বনগাঁয় একটি এআরটিও অফিস খোলার অনুমোদনও পাওয়া গিয়েছে। এ ছাড়া আরটিও এবং এআরটিও অফিসে একটি করে ‘কমপ্লেন বক্স’ রাখা থাকবে। যেখানে সাধারণ মানুষ তাঁদের অভিযোগ জানাতে পারবেন। |