সমাজকর্মী সিস্টার ওয়ালসা হত্যার পিছনে পরিকল্পিত যড়যন্ত্রই ছিল বলে মনে করছে ঝাড়খণ্ড পুলিশ। তবে তাতে কোনও রকম রাজনৈতিক মদত থাকার প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। রাজ্য পুলিশের ডিজি জি এস রথ এদিন স্পষ্ট বলেছেন, “সিস্টার ওয়ালসার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সংস্রব নেই।”
তা হলে কারা চক্রান্ত করে সিস্টারকে হত্যা করল? সরাসরি মুখ খুলতে চাইছেন না পুলিশের পদস্থ আধিকারিকেরা। সিস্টার ওয়ালসার নেতৃত্বে রাজমহল পাহাড় বাঁচাও কমিটি যে উচ্ছেদ-বিরোধী আন্দোলন শুরু করেছিল, তারই অন্তর্গত জটিলতা এই খুনের পিছনে রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে খনি-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কমিটির ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছিল। পুলিশ জানায়, সেই চুক্তি অনুযায়ী খনিতে স্থানীয় নয়টি গ্রামের বাসিন্দাদের কাজ পাওয়ার কথা। কিন্তু পরবর্তী কালে দেখা যায়, খনিতে কাজ করছেন বেশ কিছু বহিরাগত শ্রমিক। পুলিশের বক্তব্য, “অনেক গ্রামবাসীই নিজেরা খনির কাজে না-গিয়ে টাকার বিনিময়ে বহিরাগতদের কাজে পাঠাতে থাকে। এই ঘটনার উপরে সিস্টারের কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না।” কিন্তু খনিতে কাজের সুযোগ না-পাওয়া গ্রামবাসীদের মধ্যে সিস্টারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমছিল। পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রের খবর, এই সুযোগটাই কাজে লাগায় কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। যারা সিস্টারের উচ্ছেদ-বিরোধী আন্দোলনে গলা মেলায়নি, তারাই এ বার গ্রামবাসীদের কাছে সিস্টারকে খনি কর্তৃপক্ষের ‘এজেন্ট’ হিসেব তুলে ধরার চেষ্টা শুরু করে। |
সিস্টার ওয়ালসা হত্যার প্রতিবাদ। শুক্রবার সুমন বল্লভের তোলা ছবি। |
শেষ পর্যন্ত যে ভাবে লাঠি-টাঙ্গি-কুড়াল হাতে ২৫-৩০ জন দুষ্কৃতী সিস্টারের ঘর ঘিরে রেখে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, তাতে নির্দিষ্ট চক্রান্তের গন্ধই পাচ্ছে পুলিশ। স্থানীয় থানার ভুমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রথমত, কয়েক সপ্তাহ আগে এক যুবতী ধর্ষণের শিকার হন। ওই ঘটনায় দোষীর গ্রেফতারের দাবি নিয়ে সিস্টার আমরাপাড়া থানায় এফআইআর দায়ের করতে যান। থানা সিস্টারের অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে বলে অভিযোগ। থানার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় অভিযোগ, সিস্টারের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের একাংশের ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠার খবর পুলিশের অজানা ছিল না। বিশেষ করে গত ৮ নভেম্বর সিস্টারকে গ্রামছাড়া করার দাবিতে যখন রাস্তা অবরোধ হল, তখন সিস্টারের নিরাপত্তায় পুলিশের তৎপর হওয়া উচিত ছিল। পুলিশ কিছুই করেনি। আজ সকালে আমরাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার বানারসি প্রসাদকে তাই সাসপেন্ড করা হয়েছে।
রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন, সিস্টার খুনের তদন্তে কোনও রকম গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না। আজ বিকেলে দিল্লি রওনা হওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডাও তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। বলে গিয়েছেন, “প্রয়োজনে রাজ্য সরকার উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের পথে যেতে প্রস্তুত।” অর্থাৎ তেমন হলে বিচারবিভাগীয় তদন্ত কিংবা সিবিআই তদন্তও হতে পারে বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আপাতত সন্দেহভাজন সাত জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুমকা জোনের ডিআইজি বিনয়কুমার পাণ্ডে। |