ঘোর বৃষ্টির দিন। নতুন জামা গায়ে চাপিয়ে বেরোলেন। জলে জামা কিন্তু ভিজল না!
বর্ষার আগে বাড়ি রং করিয়েছেন। বর্ষা এল, চলেও গেল। বাড়ির দেওয়ালে কোনও ছাপই রেখে যেতে পারল না!
ছোট্ট একটা নল। কার্বন দিয়ে তৈরি। অথচ ইস্পাতের নলের চেয়ে
বহুগুণ পোক্ত!
এমন সব আবার হয় নাকি?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগে হতো না। এখন হয়। কী ভাবে?
হয় ন্যানো প্রযুক্তির দৌলতে।
পদার্থবিজ্ঞানের নবতম এই আবিষ্কারটি এখন বহুচর্চিত বিষয়। কিন্তু নিছক গবেষণাগারের চার দেওয়ালে আটকে না-থেকে তা যে একেবারে আম-গৃহস্থের ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছে, সেটা ক’জন জানেন? ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ সায়েন্স মিউজিয়ামের কিউরেটর কাঞ্চনকুমার চৌধুরীর কথায়, “জামা থেকে চিকিৎসা, কিংবা প্রসাধন থেকে পরিবহণ ন্যানো প্রযুক্তি এখন সর্বত্রই হাজির।”
ন্যানো প্রযুক্তি ব্যাপারটা কী?
গ্রিক ভাষায় ‘ন্যানো’ কথার অর্থ বামন। বিজ্ঞানের ভাষায় ‘ন্যানো’ হল পরিমাপের একটি একক। যা বোঝায় দশ লক্ষ ভাগের এক ভাগ। সহজতম উদাহরণ, মানুষের একটা চুলের প্রস্থ ৮০ হাজার ন্যানোমিটার। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে পরিভাষাটি প্রথম ব্যবহার করেন টোকিও সায়েন্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক নোরিও তানিগাচি, ১৯৭৪ সালে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ন্যানো প্রযুক্তির সাহায্যে কোনও পদার্থের আণবিক বা পারমাণবিক গঠনের উপরে কারিকুরি করে উন্নত মানের পদার্থ গঠন সম্ভব। আবার কোনও ক্ষেত্রে অণু-পরমাণুস্তরে দু’টো আলাদা পদার্থকে সংযুক্তির কাজেও ব্যবহৃত হয় এই প্রযুক্তি। |
কী রকম? এক গবেষকের ব্যাখ্যা, “কাপড়ের তন্তুর সঙ্গে টেফলন জাতীয় পদার্থের এই ক্ষুদ্রতমস্তরের সংযুক্তির মাধ্যমে বানানো যায় ন্যানো ক্লথ। এই কাপড়ের তন্তুর সঙ্গে টেফলনের অণুগুলো আটকে থাকে। টেফলন জাতীয় পদার্থ জল-নিরোধক হওয়ায় ‘ন্যানো ক্লথ’ জলে ভেজে না। চটচটে কিছু লেগে গেলে সহজে মুছেও ফেলা যায়। গবেষকদের ভাষায় এর নাম ‘লোটাস এফেক্ট।’ কারণ, পদ্মপাতায় ঠিক একই ভাবে জল নিরোধক কৌশল থাকে।
অর্থাৎ, ‘প্রাকৃতিক’ ন্যানো প্রযুক্তি! শুধু পদ্মপাতা নয়, প্রাকৃতিক ভাবে এই প্রযুক্তি কাজ করে প্রজাপতির মতো বিভিন্ন পতঙ্গের পাখাতেও। ন্যানো প্রযুক্তির সাহায্যে কাপড়ে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণও ঠেকানো সম্ভব বলে গবেষকদের দাবি।
পাশাপাশি চিকিৎসার ক্ষেত্রেও ন্যানো প্রযুক্তির প্রয়োগ দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে। ন্যানো টেকনোলজির গবেষক অনিন্দ্য দত্ত জানিয়েছেন, ক্যানসার, বিশেষত স্তন ক্যানসারের চিকিৎসায় এটি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে। অস্থি ও হৃদ্রোগের চিকিৎসাতেও এর গুরুত্ব যথেষ্ট। একই সঙ্গে রোদ-চশমা, চশমার লেন্স, প্যাকেজিং ও প্রসাধনী দ্রব্য তৈরিতে ন্যানো প্রযুক্তি ঢালাও ভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। অনিন্দ্যবাবুর দাবি: সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব ঠেকাতে পারে, এমন প্রসাধনী ন্যানো প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করা সম্ভব। নির্মাণ, পরিবহণ শিল্পেও এর ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে।
কিন্তু গবেষকদের আক্ষেপ, ন্যানো প্রযুক্তির কথা অনেকে শুনে থাকলেও বিষয়টি সম্পর্কে সম্যক ধারণা অধিকাংশেরই নেই!
আর তাই এ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে সম্প্রতি কলকাতার সায়েন্স সিটিতে একটি পরীক্ষাগার ও প্রদর্শশালা খোলা হয়েছে। কাঞ্চনবাবু জানাচ্ছেন, ন্যানো প্রযুক্তি সম্পর্কে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যাতে আগ্রহ তৈরি হয়, সেই লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ। বিষয়টি নিয়ে নিয়মিত কর্মশালাও হবে। |