|
|
|
|
|
|
|
সে খোঁজ শুধু ওরাই জানে |
খেলার বেলা |
পাড়ার ছোট্ট পার্ক, ঘাস নেই, আছে ধুলো! আর যদি বা সেই পার্কে ঘাস গজাল, তখন আবার বিরাট পাঁচিল-টাচিল দিয়ে ঘিরে ফেলা হল তার চৌহদ্দি। পেল্লায় সিংদরোজা বসল। সিংদরোজার ওপরে বড় বড় করে কী সব লেখা! ভারি দরোজা গম্ভীর মুখ করে বলে, তফাত যাও! কোথায় যায় অপু-দুগ্গা? এ দিকে পায়ের তলায় অষ্টপ্রহর সরষে, ডাকছে আকাশ, ডাকছে বাতাস। মন বলে, যাই যাই গো! খেলতে যাই। কিন্তু, যদি মাঠ না থাকে কোথাও! যদি সবুজ না থাকে! যদি ঘোলাটে শহর ধোঁয়া ছাড়ে অবিরাম! নিশ্চিন্দিপুর নেই বলে কি খেলার জায়গাও থাকবে না? অপু-দুগ্গা গালে হাত দিয়ে ভাবে! একটুখানি পড়াশোনা শেষ হয়েছে সেই কখন, এ বার তো খেলার বেলা এল! বাড়ি থেকে বেরিয়ে তো পড়াই যায়, কিন্তু কোন দিকে? তালা-ঝোলানো পার্কের ধারে গিয়ে দাঁড়ায় দু’জন। পার্কের গায়ে মস্ত মস্ত সব লোহার বেড়া। দেখনদারি কাজ তাতে। সেটাই দেখে, কিছুক্ষণ। তার ফাঁক গলে ভিতরপানে তাকায়। লোহার গায়ে হাত বোলায় আলতো। ঠান্ডা, ভারি লোহা ফিসফিসিয়ে বলে, তফাত যাও! |
|
সঙ্গের ছবিটি তুলেছেন নীলাঞ্জন কর্মকার। |
বিষণ্ণ দুই ভাইবোনের পাশ দিয়ে আনমনে বয়ে যায় এই মহাব্যস্ত নগর। কেউ বুঝি ফিরেও তাকায় না তাদের দিকে! এরই মধ্যে শিশুদিনের বিকেল ফুরিয়ে আসে দ্রুত। হিমজড়ানো বাতাস মেখে একটু উঁচুতে দাঁড়িয়ে থাকে রা-ওয়ান, জি-ওয়ান, টিনটিন... সে সব দুগ্গা-অপুর চোখেই পড়ে না! তারপর হঠাৎ, রাস্তার ধারের আলোর স্তম্ভটা কী করে যে আচমকা ভূতের রাজা হয়ে যায়, সুর করে বলে, হবে হবে হবে হবে, সব হবে সব হবে... সে খোঁজ শুধু ভাইবোনই জানে, তবে সে কথা আর তাদের বলার সময়ই নেই, কারণ ওই যে তারা ছুটে গেল রাস্তায়, কারণ রাস্তাই একমাত্র রাস্তা, রাস্তা মানে গলি, সেই গলিই তাদের খেলার জায়গা, দৌড় দৌড় দৌড়, পাশ দিয়ে কী যাচ্ছে, কী আসছে, সে সব একটু খেয়াল রেখে ছুটে চলা, এ দিক থেকে ও দিক, সকাল থেকে সন্ধে, গলি থেকে ছুটতে ছুটতে ছুটতে শেষে রাজপথের দিকে...।
|
খেলা যখন... |
অন্তঃপুর থেকে উন্মুক্ত প্রকৃতি এমন বিস্তীর্ণ ক্ষেত্র জুড়ে খেলাধুলোর ইতিহাস সুপ্রাচীন। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের ভারহুত স্তূপের খোদাইয়ে যেমন প্রথম দাবার ছক দেখা যায়, তেমনই আছে হরপ্পা যুগের পোড়ামাটির বল অথবা সাম্প্রতিক রাজস্থানি কাঠের চিত্রিত বল। এই বিনোদনের জগতে অসি বা নৌকা চালানো, বর্শা নিক্ষেপ, তিরন্দাজি এ সবের সঙ্গে তাস-পাশা খেলা, শিকার এমনকি বনভোজনও অন্তর্ভুক্ত। ভারতীয় সংগ্রহশালার এমন অজস্র উপাদান নিয়ে শুরু হচ্ছে এক প্রদর্শনী ‘গেমস অ্যান্ড পাসটাইমস থ্রু এজেস’। আশুতোষ শতবার্ষিকী হলে ১৭ নভেম্বর এটি উদ্বোধন করবেন চুনী গোস্বামী, সকাল ১১টায়। চলবে ২৫ পর্যন্ত, সাড়ে ১০টা-৫টা। সঙ্গে ক্রাফটস কাউন্সিল-এর সহায়তায় বসছে ঘুড়ি তৈরির কর্মশালা। শেখাবেন চার জন কারিগর, ১৭-২০ নভেম্বর। ২২-২৫ জাদুঘর থেকেই উড়বে রংবাহারি ঘুড়ি, সঙ্গে ফানুস। প্রদর্শনী উপলক্ষে জাদুঘর ভবন সেজে উঠবে রকমারি ঘুড়ির সজ্জায়। ছাত্রছাত্রীদের আরও বেশি জাদুঘরমুখী করে তুলতে এমন উদ্যোগ, জানালেন অধিকর্তা অনুপ মতিলাল।
|
আইকম বাইকম |
অন্তর্জলী যাত্রা কিংবা সুহাসিনীর পমেটম-এর লেখক কমলকুমার মজুমদার আজীবন বঙ্গীয় লোকসংস্কৃতিতে আগ্রহী ছিলেন। লোকশিল্পের মূল সুরটি ধরতে চেয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন, সংগ্রহ করেছেন লোকছড়া। তেমনই একটি সংকলন আইকম বাইকম। শুধু সংকলন নয়, প্রতিটি ছড়ার সঙ্গে ছিল তাঁর আঁকা রেখাচিত্র। ১৯৬৩-তে এটি প্রকাশ করেছিল কথাশিল্প, অবনীরঞ্জন রায়ের উদ্যোগে। আইকম বাইকম-এর সেই প্রথম সংস্করণের অবিকল প্রতিরূপ-সংস্করণ এ বার প্রকাশিত হচ্ছে সপ্তর্ষি থেকে। বইটির প্রচ্ছদও কমলকুমার-অঙ্কিত। ১৭ নভেম্বর সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেসের যদুনাথ ভবনে বই-প্রকাশ অনুষ্ঠানে কমলকুমার স্মারক বক্তৃতায় সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলবেন রামপ্রসাদ সেনকে নিয়ে, রামপ্রসাদী গানে অভীক চট্টোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানের আরও দুই আয়োজক ‘কমলকুমার মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’ ও ‘প্রতিবিম্ব’। |
জাপান থেকে |
আশ্রম প্রতিষ্ঠার সময় যে পাঁচ জন ছাত্রকে রবীন্দ্রনাথ পেয়েছিলেন, তাঁদেরই অন্যতম সন্তোষচন্দ্র মজুমদার। তাঁর নাতনি সুকৃষ্ণা চারুকলার ছাত্রী ছিলেন কলাভবনে, সেখানেই পরিচয় জাপানের যুবক তোমোমি ইশি-র সঙ্গে। অতঃপর পরিণয় এবং প্রবাস। ও-দেশে গিয়ে দু’জনে মিলে তৈরি করেন ‘পরিবার’ সংস্কৃতিকেন্দ্র। রবীন্দ্রসার্ধশতবর্ষে শ্রদ্ধা জানাতে পরিবার এখন এ শহরে। সুকৃষ্ণা ইশি (মজুমদার)-এর পরিচালনায় ২০ নভেম্বর সন্ধেয় রবীন্দ্র-ওকাকুরা ভবনে পরিবেশিত হবে ওদের শ্রদ্ধার্ঘ্য ‘দ্য প্যালেট অব টেগোর ডান্স’। রবীন্দ্রনৃত্যের সঙ্গে জাপানের ধ্রুপদী নাচ। সঙ্গে জাপানের হস্তশিল্প প্রদর্শনী। এ দিকে জাপানি ক্যালিগ্রাফিশিল্পী নানগাকু কাওয়ামাতা এখন এ শহরে। ওকাকুরা-র স্মৃতিবিজড়িত শহরের ইজুরা আর্ট অ্যান্ড কালচার ইনস্টিটিউট-এ শিক্ষকতার প্রথম পাঠ। বর্তমানে যুক্ত হামবুর্গ ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ আর্টস-এর সঙ্গে। কয়েক বছর আগে ইজুরাতে রবীন্দ্র-বিষয়ক এক প্রদর্শনীতে অংশ নেন তিনি, কলকাতা এবং শান্তিনিকেতন দেখার ইচ্ছে তখন থেকেই। এ বারে সেই ইচ্ছে পূরণ। গত শনিবার রবীন্দ্র-ওকাকুরা ভবনে শুরু হল ওঁর ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী। বাংলা আকাদেমি ও ভারত-জাপান সংস্কৃতি কেন্দ্রের উদ্যোগে ‘ট্রিবিউট টু টেগোর’ শীর্ষক এই প্রদর্শনী ২০ নভেম্বর পর্যন্ত, ১১-৬টা।
|
মাটির কথা |
জাপানি মৃৎশিল্পী মাহিতো কুদম ২০০৮-এ এ শহরে এসেছিলেন দর্শন শাহ-এর উদ্যোগে এবং পরিচালনা করেছিলেন একটি কর্মশিবির। জুঁই, ফাল্গুনী, অদিতি, লিপি এবং কবিতা ওঁরা পাঁচ জন এখান থেকেই শুরু করেন পথচলা। গড়ে তোলেন ‘ক্লে স্টোরিজ’। কেবলমাত্র দেশ-বিদেশের শিল্পীদের সঙ্গে ভাব আদান-প্রদানই নয়, মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত মানুষদের নিয়েও ভাবছেন ওঁরা। আয়োজন করেন কর্মশিবির, দেখানো হয় তথ্যচিত্র, রয়েছে প্রাসঙ্গিক বইয়ের সংগ্রহ। সঙ্গে শিল্পদ্রব্যের বাজার তৈরির চেষ্টা। সঙ্গে পেয়েছেন বাংলা ও ভারতের ক্রাফটস কাউন্সিল ও বহু শিল্পরসিক মানুষকে। ‘রিভাইভাল অব বেঙ্গল’ শীর্ষকে এ বার ওঁদের মৃৎশিল্প বাজার বসছে আই সি সি আর-এর অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর গ্যালারি এবং ভাস্কর্য উদ্যানে। এটি চলবে ১৭-২০ পর্যন্ত, ১১টা-৭টা, প্রতিদিন।
|
হ্যালো রবীন্দ্রনাথ |
রঙিন দাড়ি আর দরবেশের আলখাল্লা পরে আবার এ শহরে আসছেন ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’-খ্যাত রঞ্জন ঘোষাল। বছর চার আগে বেঙ্গালুরু থেকে এসে শুনিয়ে গিয়েছিলেন ফিলহারমোনিক অর্কেস্ট্রার সঙ্গে রবি ঠাকুরের গান। এ বারেও রবীন্দ্রনাথ। নতুন প্রজন্মের কাছে রবীন্দ্রনাথ কী এবং কেন অথবা কতটা প্রাসঙ্গিক এরই উত্তরের খোঁজে এক অভিনব বীক্ষণে ‘হ্যালো রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষকে। পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের সহায়তায় রবিচ্ছায়ার এই অনুষ্ঠানটি হবে আগামী শুক্রবার সল্টলেকের পূর্বশ্রী প্রেক্ষাগৃহে, সন্ধে ছ’টায়। রঞ্জন ঘোষালের পরিচালনায় আবহ ও অর্কেস্ট্রায় ভায়োলিন ব্রাদার্স। গানে বিশ্বরূপ রুদ্র ও সুদেষ্ণা সান্যাল রুদ্র। অভিনয়ে দোয়েলপাখি দাশগুপ্ত ও রাজর্ষি মুখোপাধ্যায়, মঞ্চ সৌরীশ মিত্রের। এ দিকে সরা শিল্পের কর্মশালা আয়োজন করেছে পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্র। এতে থাকছেন সরাশিল্পী সুনীলকুমার পাল ও কৃষ্ণেন্দু পাল। ১৬-১৯ নভেম্বর, শান্তিনিকেতনের সৃজনী শিল্পগ্রামে।
|
অশোক স্মরণে |
১৯৮০ সালে ‘মানুষ’ নামে প্রথম প্রকাশ। তারপর বিবর্তন মাসিক ‘উৎস মানুষে’। অনেক নাবিককে নিয়ে নৌকো ভাসিয়েছিলেন বিজ্ঞান আন্দোলনের সেই আদি ও অকৃত্রিম কাণ্ডারী অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘উৎস মানুষ’ শুধু একটা বিজ্ঞান-পত্রিকা নয়, হয়ে উঠেছিল একটা সামাজিক আন্দোলন। অশোকের প্রয়াণের পর ‘উৎস মানুষ’ কিছুটা ম্লান। তবু কিছু নেই-আঁকড়া নাছোড়বান্দার প্রয়াসে পত্রিকা বেরোচ্ছে ত্রৈমাসিক আকারে। সম্প্রতি ফের বেরিয়েছে ‘বিবেকানন্দ: অন্য চোখে’ আর ‘শেকল-ভাঙার সংস্কৃতি’-র মতো ‘ভিন্টেজ’ উৎস মানুষ প্রকাশনা। ওঁর স্মরণে এ বারেও আয়োজিত হয়েছে এক স্মারক বক্তৃতা। বিষয়: ‘ঘাড়-কামড়ে-থাকা নিরক্ষরতা ও আমাদের অবদান’। ২০ নভেম্বর বিকেল ৫টায় জীবনানন্দ সভাঘরে এ নিয়ে বলবেন অধ্যাপক রত্নেশ্বর ভট্টাচার্য, যিনি বহু বছর লোকশিক্ষার বিষয়টি নিয়ে মাটি কামড়ে পড়ে আছেন। অন্য দিকে নেহরু-বিষয়ক বিস্মৃতপ্রায় কিন্তু জরুরি লেখার সংকলন জওহরলাল (সূত্রধর) প্রকাশ পাচ্ছে তাঁর ১২৩তম জন্মদিনে, ১৪ নভেম্বর সন্ধে ৬টায় থিমা-য় (৪৬ সতীশ মুখার্জি রোড, কল-২৬)। সৌরীন ভট্টাচার্যের পৌরোহিত্যে বইটি আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করবেন কৃষ্ণা বসু।
|
চরিতাভিধান |
শরৎচন্দ্র লিখতেন অনিলা দেবী ছদ্মনামে। বাস্তবে অনিলা দেবী ওঁর দিদি। ক্লারা পোয়েজ হিটলার। হিটলারের মা, হিটলারের বাবার তৃতীয় পত্নী। জ্যাকুলিন কেনেডি, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির পত্নী, বদলে ফেলেছিলেন হোয়াইট হাউসের আদল। খাঁদু দাসী ছিলেন জনপ্রিয় বাউল গায়িকা। আর কোকিলপ্রভা? পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সর্বশেষ দেবদাসী। পৃথিবীর ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য এমন বহু নারীকে দুই মলাটে এনেছিলেন জীবন সাহা। মূল্যবান এই সংকলন নারী চরিতাভিধান-এর (দীপ) কাজ শুরু ১৯৭৫-এ। সেটি ছিল আন্তর্জাতিক নারীবর্ষ। নিজের উদ্যোগে খুঁজতে লাগলেন তথ্য। অথৈ সমুদ্র, কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। সম্প্রতি অক্সফোর্ড বুক স্টোর-এ সংকলনটি প্রকাশ করলেন কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি সচিব জহর সরকার। এক সপ্তাহের মধ্যেই প্রয়াত হলেন সংকলক। |
খাদ্য উৎসব |
প্রথম পাতে ভর্তা, ভাজি, ডাল, পাতুরি। শেষে ফিরনি জর্দার মতো ওপার বাংলার মিষ্টিতে ভুরিভোজ। মেনুতে আছে বেগুন, সিম, চিংড়ি, বা রকমারি শুঁটকির ভর্তা, কচুর লতি, বেগুন খাসিয়া, ভুনা মুগ ডাল, বাতাসি মাছ, কাচকি মাছ, চিতলের কোপ্তা, বা মুরগির লটপটির মতো পদ। এ নিয়েই ২০ নভেম্বর অবধি চলছে বাংলাদেশি খাদ্য উৎসব। ঠিকানা ৬ বালিগঞ্জ প্লেস। শিলে বাটা মশলায় ফরিদপুর, বরিশাল, খুলনা ও ঢাকার খাবারের সঙ্গে রয়েছে চট্টগ্রামের রকমারি শুঁটকি এবং যশোরের মিষ্টি। হাজির ঢাকার ‘অবশেষ’ হোটেলের দুই শেফ জোসেফ গোমস ও মির মহম্মদ শাহিদুল। সহায়তায় বাংলাদেশ হাইকমিশন। তবে স্বাদ? অবশ্যই আজকের বাংলাদেশের।
|
সংবর্ধনা |
‘বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের পরিবার বরাবর জড়িয়ে, তাই বাংলার সংস্কৃতিতে যাঁদের অবদান আমরা কলকাতার সেই গুণিজনদের সম্মান জানাতে চাই।’ জানালেন অরিজিৎ দত্ত, প্রিয়া সংস্থা-র পক্ষ থেকে। তাঁরা সংবর্ধনা দিচ্ছেন বিভাস চক্রবর্তী, অপর্ণা সেন, প্রসেনজিৎ, অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী ও জহর সরকারকে। ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় স্টার থিয়েটার-এ। উপলক্ষ: প্রিয়া সংস্থার দায়িত্বে নতুন রূপে শুরু করার পর পাঁচ বছর পূর্ণ করল স্টার। এ ছাড়াও ওদিন সন্ধ্যায় আছে সোহাগ সেনের নাটক ‘লাল বাক্স’। অন্য দিকে রমরমিয়ে চলছে চলচ্চিত্র উৎসব। উত্তম মঞ্চে সারা দিন ছবি দেখাচ্ছে ফোরাম ফর ফিল্ম স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যালায়েড আর্টস। জীবনানন্দ সভাঘর আর বাংলা আকাদেমিতে রোজ ছোট ছবির উৎসব, শর্ট ফিল্মমেকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া-র। ওখানেই রোজ বেলা ১টা-২টো ওপেন ফোরাম, ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ-এর উদ্যোগে। নিয়মিত সেমিনার নন্দন ২ ও ৩-এ। ‘উৎসব কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ উদ্যোগে এ বার সেমিনার হচ্ছে’, জানালেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়।
|
আরব্ধ |
ও অনেক সময়ই বলত: আমি কিন্তু আগে চলে যেতে পারি, তা বলে তুমি কাজ বন্ধ করবে না, কেননা কাজ চালানোর শক্তি তোমার মধ্যে আছে।’ দুর্ঘটনায় অকালপ্রয়াত বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ সম্পর্কে বলছিলেন তাঁর স্ত্রী ক্যাথরিন। আমেরিকান, অথচ অসাধারণ বাংলা বলেন। শিখেছিলেন মার্কিন মুলুক থেকে বাংলাদেশে অর্থনীতির গবেষণা করতে এসে, সেখানেই আলাপ তারেকের সঙ্গে। ক্যাথরিনের মাতামহ আলফ্রেড বিংহ্যাম ছিলেন সাংবাদিক, তিরিশের দশকে শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করতে, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সমর্থক, বিপ্লবোত্তর সোভিয়েত রাশিয়ায়ও গিয়েছিলেন, দেশে ফিরে বামপন্থী পত্রিকা বের করতেন। আর আলফ্রেডের বাবা হাইরাম বিংহ্যাম মাচুপিচু শহরের ধ্বংসাবশেষে ইনকা সভ্যতা খুঁজে বার করেছিলেন। সম্ভবত সেই উত্তরাধিকারেই ক্যাথরিন তারেকের শিকড়সন্ধানী সিনেমা-সৃজনে সহযাত্রী হয়ে ওঠেন। তাঁদের নতুন ছবি ‘রানওয়ে’ নিয়ে সদ্য কলকাতায় এসেছিলেন সিনে সেন্ট্রাল-এর ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম অব নিউ সিনেমা-র উদ্বোধনে। তারেকের ‘কাগজের ফুল’-সহ অন্যান্য অসমাপ্ত ছবির কাজ শেষ করবেন, বললেন ক্যাথরিন, ‘আগামী বছরে তারেকের রেখে-যাওয়া যাবতীয় কাজকর্মও শেষ করব, ওর লেখালেখির সংকলনের প্রথম খণ্ড বের করব একুশের বইমেলায়।’ |
|
|
|
অন্য চোখে |
প্রকাশনা জগতের সঙ্গে যুক্ত তিনি। কিন্তু প্রকাশনাকে নিছক বাণিজ্য বলে ভাবতে পারেননি কোনও দিন। দ্য বিজনেস অব বুকস বইয়ে তিনি, আঁদ্রে শিফ্র্যাঁ, কড়া সমালোচনা করেছিলেন বই-বাণিজ্যের একীভবনের। তার পরে একের পরে এক বইয়ে বইয়ের ব্যবসাকে আর পাঁচটা পণ্যের ব্যবসা থেকে আলাদা করে দেখতে এবং দেখাতে চেয়েছিলেন তিনি। ১৯৩৫-এ প্যারিসে জন্ম তাঁর। বাবা জাক শিফ্র্যাঁ যুক্ত ছিলেন প্রকাশনার সঙ্গে। নাৎসিদের অত্যাচারে সপরিবার নিউ ইয়র্কে চলে যেতে বাধ্য হন তিনি। সেখানে স্বাধীন সম্পাদক হিসেবে তিরিশের দশকে চালু করেন ধ্রুপদী সাহিত্যের সহায়ক একটি গ্রন্থমালার। ক্রমে তা এত জনপ্রিয় হয় যে আঁদ্রে জিদ তাঁর ‘গালিমার’ প্রকাশনায় নিয়ে নেন সেই গ্রন্থমালা। আজও তা প্রকাশিত হয় সেখান থেকেই। শিফ্র্যাঁর প্রকাশনার জগতে হাতেখড়ি তাঁর বাবার প্রতিষ্ঠিত প্যান্থিয়ন বুকস-এ। প্রায় তিরিশ বছর সেই সংস্থার পরিচালক ছিলেন তিনি। আমেরিকায় পাস্তেরনাক, ফুকো-র বই প্রকাশে তখন তাঁর ভূমিকা ছিল অনেকখানি। নব্বইয়ের দশকে গড়েন অলাভজনক প্রকাশনা-সংস্থা ‘দ্য নিউ প্রেস’। উদ্দেশ্য, যে সব গভীর গবেষণার বই প্রকাশ করতে চায় না বড় প্রতিষ্ঠান, সেগুলি প্রকাশ করা। এ হেন মানুষ এসেছিলেন এই শহরে। তাঁকে ঘিরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে জমে উঠল একটি সংলাপ-সন্ধ্যা, আর জাতীয় গ্রন্থাগারের ভাষা ভবনে তিনি বললেন ‘দ্য ফিউচার অব প্রিন্ট’ নিয়ে। সত্যিই কি এই ই-যুগে মুদ্রণের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময়? শিফ্র্যাঁ বলছেন, সম্ভব, যদি বইয়ের জগতে আমরা নাটকীয় কিছু পরিবর্তন ঘটাতে রাজি হই। শিফ্র্যাঁকে এ শহরে আনায় উদ্যোগী ছিল অলিয়ঁস ফ্রঁস্যাজ, জাতীয় গ্রন্থাগার, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, নবায়ন ও অ্যাঁস্তিত্যু ফ্রঁসে। |
|
|
|
|
|
|
|