দিল্লি, কলম্বো, থিম্পু। গত এই কয়েকটি সার্ক শীর্ষ সম্মেলন কার্যত ঢেকে ছিল ভারত-পাকিস্তান কূটনৈতিক দ্বৈরথের ছায়ায়। দীর্ঘদিন পর মলদ্বীপে সার্ক-এর আগে আলোর রেখা। সুসম্পর্কের আলো।
মলদ্বীপের আড্ডু শহরে আগামী কাল থেকে শুরু হচ্ছে সপ্তদশতম সার্ক সম্মেলন। সেই সঙ্গে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপালের মতো দেশের সঙ্গে ভারতের সমান্তরাল পার্শ্ববৈঠকও। বিদেশ মন্ত্রকের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার পারস্পরিক সহযোগিতার মঞ্চে এমন ইতিবাচক পরিবেশ সাম্প্রতিক অতীতে পায়নি নয়াদিল্লি। আর তাই যথেষ্ট আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ আজ মলদ্বীপে পৌঁছে বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে যাতে মুক্ত বাণিজ্য শুরু করা যায়, তার জন্য চেষ্টা করা হবে এ বার। এ ছাড়া পারস্পরিক সহযোগিতার প্রশ্নে বেশ কিছু বহুপাক্ষিক চুক্তিও হওয়ার কথা আসন্ন সার্ক সম্মেলনে। |
ভারত এবং পাকিস্তানের সম্পর্কের উত্তাপ সম্প্রতি কিছুটা কমায় সামগ্রিক ভাবে সার্কের উপর তার প্রতিফলন পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতকে বাণিজ্যে সর্বাধিক সুবিধাপ্রাপ্ত দেশ (এমএফএন)-এর মর্যাদা দেওয়ার প্রশ্নে দীর্ঘদিনের দাবি সদ্য মেনে নিয়েছে ইসলামাবাদ। নয়াদিল্লিকে তারা জানিয়েছে, বাণিজ্য সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই এমএফএন মর্যাদা দেওয়া হবে ভারতকে।
দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত সহযোগিতা নিয়ে শীর্ষ বৈঠকের আগে এই ধরনের একটি ঘটনা নিঃসন্দেহে গোটা অঞ্চলের ক্ষেত্রেই সুখবর। আজ তাই মলদ্বীপে পৌঁছে বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ এক দিকে বলেছেন, “ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে আস্থার মাত্রা বেড়েছে। দু’দেশের সম্পর্ক এখন আগের চেয়ে কিছুটা স্থিতিশীল।” ঠিক তেমনই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানিও জানিয়েছেন, “ভারতের সঙ্গে আলোচনা সঠিক দিকেই এগোচ্ছে। আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী আমরা।” কাল দুই প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বসছেন। তার আগে আজ দু’দেশের বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ ও হিনা রব্বানি খার আজ অন্তত তিন বার আলোচনায় বসেন। হিনা বলেন, “ভারত-পাক সম্পর্কের বিষয়টি জটিল। কিন্তু তা নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা সেই কাজটাই করছি।”
ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক গোটা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা এবং বাণিজ্যের প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তার পাশাপাশি গত দেড় বছরে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কেও যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। ভারত-বিরোধী সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে একের পর এক ব্যবস্থা নিয়েছেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ঢাকা সফর করে এসেছেন। তিস্তা চুক্তি এখনও হয়নি ঠিকই, কিন্তু ঢাকাকে জানানো হয়েছে, খুব শীঘ্রই যাতে এই চুক্তি করা যায়, সে জন্য সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে।
বাংলাদেশ এবং ভারতের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানের সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা দিচ্ছে নয়াদিল্লি। সম্প্রতি নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রী মাওবাদী নেতা বাবুরাম ভট্টরাই দিল্লি এসে দীর্ঘ বৈঠক করে গিয়েছেন ভারতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে। সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে ভারত। ভুটানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং নেপালে শান্তি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা দু’টোতেই ভারত যে সক্রিয় ভূমিকা নিতে চায়, এই বিষয়টি স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
সব মিলিয়ে, এই ইতিবাচক পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে সমন্বয়ে নেতৃত্বে দেওয়া ভারতের পক্ষে সহজ হবে। প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার দিকে নজর দেবে মনমোহন সরকার।
|