জ্যাকসনকে ‘ঘুম’ পাড়ান চিকিৎসকই
ছ’ফুট চার ইঞ্চির মেধাবী যুবকটি চিকিৎসাকেই এক দিন পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, ন্যূনতম চিকিৎসাটুকু করানোরও ক্ষমতা নেই যে সব মানুষদের তাঁদের দেখভাল করবেন।
অথচ সেই দেখভালে গাফিলতির জন্যই আজ দোষী সাব্যস্ত হলেন তিনি।
সেদিনের সেই যুবক আজকের ৫৮ বছরের কনরাড রবার্ট মুরে। পপতারকা মাইকেল জ্যাকসনের শেষ চিকিৎসক। জ্যাকসনকে অনিচ্ছাকৃত ভাবে খুন করার দায়ে আজ তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করল লস অ্যাঞ্জেলেসের আদালত। মুরের সাজা ঘোষণার দিন স্থির হয়েছে ২৯ নভেম্বর। চার বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে তাঁর। রায় শোনার পর নিঃশব্দে চোখের জল ফেললেন জ্যাকসনের মা ক্যাথরিন এবং বোন রেবি। আর এক বোন লা টোয়া রায় ঘোষণার পর টুইট করেন, “অবশেষে জয়!” উচ্ছ্বসিত আদালতের বাইরে ভিড় জমানো জ্যাকসনের ভক্তরাও।
২০০৯ সালের ২৫ জুন মারা যান জ্যাকসন। জানা যায় প্রোপোফল নামে একটি ওষুধ অতিমাত্রায় শরীরে প্রবেশের ফলেই মারা গিয়েছেন জ্যাকসন। সেই থেকেই প্রশ্নের মুখে জ্যাকসনের তৎকালীন চিকিৎসক মুরের ভূমিকা। অভিযোগ ওঠে, বেপরোয়া ভাবে জ্যাকসনের হাতে মাদকদ্রব্য তুলে দিয়ে সর্বনাশটা করেছেন মুরেই। মুরে পাল্টা যুক্তি দেন, মাদকাসক্ত জ্যাকসন তাঁকে না জানিয়ে নিজেই অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়েছেন। যাতেই মারা গিয়েছেন জ্যাকসন। যুক্তি-পাল্টা যুক্তির ভিড়ে কিন্তু অজানাই থেকে গিয়েছিল সে দিনের আসল কাহিনি।
কী ভাবে মারা যান জ্যাকসন, ছ’সপ্তাহব্যাপী শুনানিতে অনেকটাই স্পষ্ট হল সেই ছবিটা।
শিশু নিগ্রহের অপবাদ মাথায় নিয়ে তখন পপ দুনিয়া থেকে বহু দূরে জ্যাকসন। আর তিন সপ্তাহের মধ্যেই একটা চমকে দেওয়া প্রত্যাবর্তন ঘটাতে চলেছেন। লন্ডন জুড়ে করবেন বেশ কয়েকটি কনসার্ট। যার নাম ‘দিস ইজ ইট’। কিন্তু শরীর তো দুর্বল! সেই শরীরকে সুস্থ করে তুলতে প্রয়োজন একটাই জিনিস ঘুম। আর সেখানেই সমস্যা। শরীরে বাসা বেঁধে আছে ‘ইনসমনিয়া।’ অতএব ভরসা ঘুমের ওষুধ। যত কড়া মাত্রার সম্ভব। শুরু হল ডাক্তারের খোঁজ। বেশ কয়েক জন ওই শরীরে তাঁকে ফের ঘুমের ওষুধ দিতে অস্বীকার করলেন। শেষ পর্যন্ত জ্যাকসন পেলেন মুরেকে। ৯৪০০০ ডলার মাসোহারায় যিনি হলেন জ্যাকসনের ‘ঘুম পাড়ানোর জাদুকর’। মুরে জানিয়েছেন, সেই দিন থেকে প্রতি রাতেই জ্যাকসনকে অল্প পরিমাণে প্রোপোফল দিতেন তিনি। তাতে বেশ কাজ হচ্ছিল বলেও দাবি তাঁর। তবে জ্যাকসন ক্রমশ প্রোপোফলে আসক্ত হয়ে পড়ছেন এটা বুঝতে পেরে মুরে অন্য ঘুমের ওষুধ প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। যে দিন জ্যাকসন মারা যান, তার আগের রাতে তাঁকে তিনটি অন্য ঘুমের ওষুধ দেন মুরে। তাতেও কাজ না হওয়ায় প্রোপোফলই দিতে হয়। ঘুমিয়ে পড়েন জ্যাকসন। সে ঘুম আর ভাঙেনি। পর দিন সকালে মৃত মাইকেলকে দেখে ঘাবড়ে যান মুরে। জ্যাকসনের বাড়ির রক্ষী জানিয়েছেন, চিকিৎসার সব সরঞ্জাম লুকোতে চেষ্টা করছিলেন মুরে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তিনিই জ্যাকসনকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
তবে মুরের বিরুদ্ধে মামলা করতে লেগে যায় আরও আট মাস। কারণ, প্রোপোফল ব্যবহার নিষিদ্ধ নয়। তাই কী অভিযোগে মুরের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে তা-ই ঠিক করে উঠতে পারেনি পুলিশ! শেষ পর্যন্ত চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগই আনা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। কারণ হিসেবে বলা হয়, উপযুক্ত সাবধানতা অবলম্বন না করে প্রোপোফলের মতো ওষুধ ব্যবহার করাটাই এক জন চিকিৎসকের পক্ষে মারাত্মক গাফিলতি। আজ বিচারক যে রায় দেন, তাতেও এই গাফিলতিকেই জ্যাকসনের মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
রায় শুনে ভাবান্তর হয়নি মুরের। তবে গরিবের সেবা করার উদ্দেশ্য নিয়ে জীবন শুরু করা মানুষটির এমন পরিণতি হওয়ার তো কথা ছিল না। তা হলে? মুরের এক বন্ধুর কথায়, “দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে কাটানো নিজের ছোটবেলাকে সব সময়ই ঘেন্না করত মুরে। সে সব স্মৃতি মুছতে গিয়েই এই পথে পা বাড়িয়েছে ও।”
মাইকেল জ্যাকসন আর কনরাড মুরে। গোটা কাহিনির দুই চরিত্র। এক জন এক ফোঁটা ঘুম ‘কিনতে গিয়ে’ জীবন বিপন্ন করলেন। আর অন্য জন সেই ঘুমের সন্ধান দিতে গিয়ে নিজের জীবনের লক্ষ্যটাই গুলিয়ে ফেললেন। কোনটা বেশি ট্র্যাজিক, তা নিয়ে তর্কটা হয়তো চলতেই থাকবে।

প্রোপোফল কী?
সাধারণত অ্যানেস্থেসিয়ার প্রভাব বজায় রাখতে শিরায় ইঞ্জেকশন দিয়ে ঢোকানো হয় এই ওষুধ। কখনও কখনও উত্তেজনা কমাতে বা ঘুমের ওষুধ হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়। কু প্রভাব এর প্রভাবে কিছু মানুষের নিম্ন রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি ও চুলকানি, ইঞ্জেকশনের জায়গা ফুলে যাওয়া ও প্রচণ্ড ব্যথা হয়। এ ছাড়া সাময়িক মানসিক বিভ্রম তৈরি করে বলে একে নেশার বস্তু হিসেবেও ব্যবহার করে অনেকে।

মাইকেল জ্যাকসনের ক্ষেত্রে কী ঘটেছিল?
মাইকেল অনিদ্রায় ভুগছিলেন। নার্সের দাবি, ঘুমোনোর জন্য মৃত্যুর দু’মাস আগে থেকে নিয়মিত প্রোপোফল নিতেন মাইকেল। মৃত্যুর আগের রাতে তিনি অতিরিক্ত মাত্রায় প্রোপোফল এবং আরও তিন ধরনের ওষুধ নেন। সমস্ত ওষুধের মিশ্র প্রতিক্রিয়াতেই তাঁর মৃত্যু হয় বলে দাবি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.