ঘরের ছেলেদের ঘরে ফেরান। ‘বহিরাগত’ মাওবাদীদের উচ্ছেদ না করা পর্যন্ত আমরা থামব না।
অযোধ্যা পাহাড়ে এ বার আমরাই ‘চিরুনি তল্লাশি’ চালাব।
শনিবার বলরামপুরের ঘাটবেড়ায় সভা করে এই ভাষাতেই আক্রমণ শানালেন তৃণমূল নেতারা। ঠিক এক দিন আগে জিতু সিংহকে খুন করে মাওবাদীরা সভা বানচাল করার যে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিল, বহু মানুষের উপস্থিতিতে সভা ‘সফল’ করে কার্যত তারই পাল্টা জবাব দিল তৃণমূল।
শনিবার দুপুরে স্থানীয় ঘাটবেড়া ও কেরোয়া গ্রামের মাঝে এক স্কুলমাঠে ওই সভায় বক্তাদের পুরোভাগে ছিলেন অঘোর হেমব্রম। একদা ‘মাওবাদী-ঘনিষ্ঠ’ বলে অভিযুক্ত ‘আদিবাসী মূলবাসী জনগণের কমিটি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন তিনি। বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলে যোগ দিয়ে বর্তমানে ‘মাওবাদী হঠাও অভিযানে’র নেতা। এ দিন মাওবাদীদের প্রতি তাঁর হুঁশিয়ারি, “এলাকার পরিস্থিতি খারাপ করবেন না।”
সম্প্রতি ‘জঙ্গলমহল উন্নয়ন বিরোধী প্রতিরোধ কমিটি’ গড়ে মাওবাদীদের মূলস্রোতে ফেরাতে উঠে-পড়ে লেগেছেন অঘোরবাবু। তাঁর নির্দেশে মোটরবাইক-বাহিনী মাঝে-মধ্যে বলরামপুরে মিছিল করছে এবং তাঁদের ‘কড়া বার্তা’ দিতেই জিতুর মতো ‘নিরীহ’ তৃণমূল কর্মীকে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের অনুমান। এ দিন অঘোরবাবু বলেন, “যাঁদের বাড়ির ছেলেরা ‘স্কোয়াডে’ রয়েছে, তাঁদের বলছি, অবিলম্বে ওদের ঘরে ফিরিয়ে আনুন। রাতে অস্ত্র নিয়ে এসে ওরা নিরস্ত্র মানুষকে মেরে ফেলছে। কত দিন আমরা এই জিনিস সহ্য করব!”
বলরামপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি সৃষ্টিরাম মাহাতো আবার মাওবাদীদের মধ্যে ‘বহিরাগত’ ও ‘স্থানীয়’ বিভাজন রেখা টেনেছেন। তাঁর অভিযোগ, “মাওবাদী নাম নিয়ে এলাকার কিছু বিপথগামী যুবক কিছু গরিব মানুষ ও রাজনৈতিক কর্মীকে খুন করে বহিরাগত লোকজনের রোজগারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন।” এর পরেই তাঁর হুঁশিয়ারি, “এলাকায় যত ‘বহিরাগত’ মাওবাদী রয়েছে, তাদের উচ্ছেদ না করা পর্যন্ত আমরা থামব না। ওদের যাঁরা মদত দিচ্ছেন, সাবধান হোন। অযোধ্যা পাহাড়ে এ বার আমরাই চিরুনি তল্লাশি চালাব। ভানুকে (মাওবাদী নেতা বিক্রম) এলাকাছাড়া করব।” মাওবাদীদের দাপটে যেখানে গত কয়েক বছর ধরে অন্য দলের প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় বন্ধ, সেখানে এ হেন বক্তব্য শুনে উপস্থিত হাজার ছয়েক দর্শক হাততালি দিয়ে ওঠেন। |
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বছর ছয়েকের মধ্যে ওই মাঠে কোনও সভা হয়নি। জিতু সিংহের মৃতদেহের পাশে ফেলে যাওয়া মাওবাদীদের নামাঙ্কিত পোস্টারে এ দিনের সভা বয়কট করার ডাক দেওয়া হয়েছিল। এ দিন সভায় ভিড় দেখে উচ্ছ্বসিত অঘোরবাবু বলেন, “মাত্র পাঁচ দিন আগে আমরা এই সভা ডাকি। মাওবাদীরা জিতু সিংহকে খুন করে তা বানচাল করতে চেয়েছিল। তার পরেও এত মানুষ এসেছেন। আমরা সবাই উন্নয়ন চাই।”
বৃহস্পতিবার রাতে ওই ঘাটবেড়া গ্রাম থেকেই তৃণমূল কর্মী জিতুকে তুলে নিয়ে গিয়ে গলায় তার পেঁচিয়ে খুন করা হয়েছিল। এ দিন গাঁধী মূর্তির পাদদেশে তাঁর মরদেহে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কয়েক জন মানুষ যদি মনে করে, তারা বাংলার ভাগ্য নির্ধারণ করবে, তা নয়। বাংলার ভাগ্যনির্ধারণ করবেন মানুষ। সন্ত্রাসমুক্ত বাংলা গড়ব। শান্তিই শেষ কথা। বন্দুক শেষ কথা বলে না।” শুক্রবার রাতে কলকাতায় পিস হেভ্ন্-এ রাখা হয়েছিল জিতুর দেহ। সেখান থেকেই এ দিন গাঁধীমূর্তির পাদদেশে নিয়ে যাওয়া হয়। মমতা জানান, এ বার থেকে ‘উগ্রপন্থীদের’ হাতে যারাই মারা যাবে, তাদের ‘শ্রদ্ধা জানাতে’ এখানে আনা হবে।
ঘাটবেড়ার সভায় মাওবাদীদের উদ্দেশে তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি প্রকল্প বিষয়ক মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলেছেন, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী জঙ্গলমহলের মানুষকে বাঁচার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। উন্নয়নের চেষ্টা করছেন। সেই সময়ে কিছু মানুষ মাওবাদের নাম করে গরিব মানুষকে খুন করছে। পাহাড়-সমস্যার যদি সমাধান হতে পারে, জঙ্গলমহলের ক্ষেত্রে কেন হবে না?”
এ দিন দুপুরেই রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়, আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) গঙ্গেশ্বর সিংহ ও জেলা পুলিশ সুপার সুনীলকুমার চৌধুরী গিয়ে ঘাটবেড়ায় যে পুকুরপাড়ে জিতুর দেহ পড়েছিল, তা ঘুরে দেখেন। পরে বাড়ি গিয়ে তাঁর ভাই বুধু সিংহ, অনন্ত সিংহ ও মা কুলদা সিংহের সঙ্গে কথাও বলেন। ডিজি বলেন, “এলাকায় রক্ষী শিবির আছে। আমরা পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে এসেছি।” রাতেই তৃণমূল নেতা মুকুল রায় জিতুর দেহ নিয়ে ঘাটবেড়া গ্রামে পৌঁছন। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য সরকারের তরফে মৃতের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।
|
বাঁকুড়ায় মানস
নিজস্ব সংবাদদাতা • বাঁকুড়া |
জেলাস্তরে ভিজিল্যান্স কমিটি গঠন করায় উদ্যোগী হল সেচ দফতর। শনিবার বাঁকুড়ায় এ কথা জানান সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। মন্ত্রী বলেন, “সেচ দফতরের বিভিন্ন কাজ ও আধিকারিক-কর্মীদের কাজের উপরে নজর রাখবে এই ভিজিল্যান্স কমিটি। এ জন্য জেলাস্তরে সভাধিপতি, জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, সাংসদ ও বিধায়কদের নিয়ে ভিজিল্যান্স কমিটি গঠন করা হবে।” একশো দিনের প্রকল্পে খাল, বড় জলাশয় সংস্কার করা হবে বলে তিনি জানান। বাঁকুড়ার সার্কিট হাউসে জেলার উন্নয়ন নিয়ে এই বৈঠকে জেলাপরিষদের সভাধিপতি পার্থপ্রতিম মজুমদার, সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া ছিলেন। |