টিঙ্কি, টান্টু আর খেঁকুড়েরা
টিঙ্কি আর টান্টু সে-দিন সকাল থেকেই খুনসুটি আর ঝগড়াঝাঁটি করছিল। মা যতক্ষণ বাড়িতে ছিলেন, ততক্ষণ বকেঝকে ওদের শান্ত করে রেখেছিলেন। কিন্তু রবিবার দিন দুপুরবেলা মা পাশের বাড়ি মিনুমাসিদের বাড়িতে যেতেই দু’জনে শুরু হয়ে গেল! টান্টু টিঙ্কির চুল ধরে টানতেই টিঙ্কি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে কাঁদতে বাবার কাছে নালিশ করতে ছুটল। বাবা টান্টুকে এক ধমক দিলেন। তাতে সে বেদম খেপে গিয়ে রেগেমেগে টিঙ্কির আদরের পুতুল ঝুমার জামায় কালি মাখিয়ে দিল। টিঙ্কিও ছাড়বে না। টান্টুর প্রিয় খেলনা গাড়িটাকে তিন তলার ব্যালকনি থেকে দিল নীচে ফেলে। ব্যস, সেটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেল আর সঙ্গে সঙ্গে ধুন্ধুমার লেগে গেল! রবিবার দিন দুপুরবেলা বাবা খেয়েদেয়ে একটু শুয়েছিলেন, এমন সময় ওদের প্রবল ঝগড়াঝাঁটির শব্দে ঘুম ভেঙে গেল।
‘কী হয়েছে?’ জিজ্ঞেস করতে ওরা দু’জনেই ক্রমাগত নালিশ করে চলল!
বাবা বললেন, ‘কত বার বলেছি এই রকম মারামারি করলে খেঁকুড়েরা এসে ধরে নিয়ে যাবে। তোমরা নিশ্চয়ই সেটা চাও না? যদি না চাও, তা হলে চুপ করে যে যার নিজের মতন খেলা করো আমাকে একটু ঘুমোতে দাও, বিরক্ত কোরো না!’
বলে বাবা পাশ ফিরে শুয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লেন। মা তখনও মিনুমাসির বাড়ি থেকে ফেরেননি। টিঙ্কি আর টান্টু কিন্তু বাবার কথা শুনেও ক্ষান্ত হল না। আবার ঝগড়া শুরু করে দিল। টান্টু টিঙ্কিকে ঠেলে ফেলে দিল, টিঙ্কি ক্যাঁক করে ওর হাতে কামড় বসিয়ে দিল। খামচাখামচি চুলোচুলি যখন পুরো দমে চলছে, ঠিক তখনই লোক দুটোকে দেখতে পেল ওরা! বিশাল বড় চেহারা, ইয়া-ইয়া গোঁফ, ঝাঁকড়া চুল আর ওদের দেখে খ্যাঁকখ্যাঁক করে হাসছে! টিঙ্কি আর টান্টু কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওদের এমন ভাবে তুলে নিল, যেন ওরা পালকের মতন হাল্কা! তার পরেই সাঁ সাঁ করে দৌড় দিল দু’জনে। টিঙ্কি আর টান্টু চিৎকার করারও সময় পেল না! চোখের নিমেষে ওদের দু’জনকে খেঁকুড়েদের দেশে নিয়ে গিয়ে ফেলল ওই দু’জন। সেখানে চারিদিকে শুধু খেঁকুড়ে মা খেঁকুড়ে, বাবা খেঁকুড়ে! ওদের দেখে সবার জিভ লক্লক্, লালা টপ্টপ্!
ছবি: দেবাশীষ দেব
এক জন তো বলেই ফেলল, ‘যাক অনেক দিন বাদে দুটো ঝগড়ুটে নালিশকুটে বাচ্চা পাওয়া গেছে! আহা কত দিন খাইনি! শেষ যে বার খেয়েছিলাম তার স্বাদ এখনও মুখে লেগে রয়েছে!’
টিঙ্কি আর টান্টু তো ভীষণ ভয় পেয়ে গেল। ওরা এক বারের জন্যেও ভাবেনি যে, বাবা যেটা বলছেন, সেটা ঘটে যেতে পারে! ওরা তো উল্টে ভাবছিল যে, বাবা ওদের থামানোর জন্যে মিথ্যে গল্প বানিয়ে বলছিলেন! ওরা তো বুঝতেই পারছিল না এ বার কী হবে!
ওদের দু’জনের হাত-পা বেঁধে এক জায়গায় নিয়ে গিয়ে বসাল। সেখানে বিশাল আগুনের উপর একটা হাঁড়িতে জল ফুটছে!
এক জন বলল, ‘এদেরকে কুচিকুচি করে কেটে বেশ টক-ঝাল-নুন-মিষ্টি দিয়ে রান্না করে খেলে ভাল হবে, দারুণ জমবে!’
আর এক জন মুখ ভেংচে বলল, ‘অত ঝামেলার কী দরকার? কাটাকুটিতে সময় লাগবে, দিব্যি রুটিতে মুড়ে রোল করে খেয়ে নিলেই তো হয়! দরকার হলে স্বাদের জন্যে একটু ডিম মাখিয়ে নিলেই হবে!’
কয়েকটা বাচ্চা দাঁত কিড়মিড় করে বলল, ‘না, না বড্ড গরম পড়েছে! ওদের ফ্রিজে রেখে দাও! আইসক্রিম হয়ে গেলে চুষে চুষে খাব!’
সেটা শুনে আবার অন্য কয়েক জন লাফিয়ে উঠল, ‘না, না, আমাদের বাপু ঠান্ডা সহ্য হয় না। দাঁত কনকন করে, সর্দি লেগে যায়।’
টিঙ্কি আর টান্টু মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। এদের বেগতিক তো ভাল ঠেকছে না। কী করা যায়?
টিঙ্কি টান্টুকে বলল, ‘তোর গাড়িটা ব্যালকনি থেকে ফেলে দেওয়া আমার উচিত হয়নি! আমি সরি! জন্মদিনে যে টাকা পেয়েছি, সেটা দিয়ে আমি তোকে ওই রকমই একটা গাড়ি কিনে দেব!’
টান্টুও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে, ‘না, সবটাই তোর দোষ নয়! আমিই তো তোর ঝুমা পুতুলকে কালি মাখিয়ে দিয়েছিলাম! আমি মাকে বলব ওর জামাটা কেচে দিতে, তা হলে মনে হয় কালিটা উঠে যাবে। না হলে তোয়ারদিদি ভাল জামা সেলাই করতে পারে, তাকে বলব ঝুমার জন্যে একটা নতুন জামা বানিয়ে দিতে।’
‘সত্যি বলবি তো?’
‘হ্যাঁ, নিশ্চয়ই!’
এ দিকে খেঁকুড়েরা তখনও নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে চলেছে, ‘একটু টক দিলে ভাল লাগবে!’ ওদের এক জন বলল।
আর এক জন খেঁকিয়ে উঠল, ‘না, না, আমার আবার টক খেলে অম্বল হয়! একটু তেঁতো দিয়ো বরং ভায়া আমার জন্যে!’
‘ওয়াক! তেঁতো দিলে সমস্ত জিনিসটাই মাটি হয়ে যাক আর কী! কী আক্কেল!’
ওরা কিছুতেই ঠিক করতে পারছে না, ডুমো ডুমো করে কেটে ডালনা হবে, না কুচিকুচি করে কেটে চচ্চড়ি হবে! তুমুল গণ্ডগোল বেঁধে গেল ওদের মধ্যে। বয়স্করা ঝগড়া করতে লাগল সুক্তো হবে না অম্বল হবে! কচিকাঁচারা কথা কাটাকাটি করে চলল আইসক্রিম হবে, না বার্গার হবে, না রোল হবে সেই নিয়ে! সেটা শুনে আবার বয়স্করা খেপে গেল, ‘ওগুলো আবার খাবার নাকি!’
টিঙ্কি আর টান্টু এ দিকে চুপ করে বসে আছে ভয়ে। ওরা ‘সরি’ বলেছে একে অপরকে। আর কোনও দিন ওই রকম ভাবে ঝগড়া করবে না সেই কথা দিয়েছে!
খেঁকুড়েরা প্রায় হাতাহাতিতে নেমে পড়েছিল, এমন সময় ওদের এক জন হঠাৎ বলল, ‘আরে বাচ্চা দুটোকে দেখো! ওরা তো একদম কিচ্ছু করছে না! জ্ঞানী বুড়ো খেঁকুড়েরা তো বলেছিলেন যে, ওরা ঝগড়াঝাঁটি না করলে ওদের খাওয়া চলবে না!’
সবাই ঝগড়া থামিয়ে টিঙ্কি আর টান্টুর দিকে তাকিয়ে দেখল। ওরা সত্যি আর ঝগড়া করছে না, দু’জনে হাত ধরাধরি করে চুপচাপ বসে রয়েছে!
তখন সব খেঁকুড়েদের সে কী হাত কামড়ানি!
‘ইস! যেই না ওরা এসেছিল, তখনই যদি আমরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া না করে ওদেরকে খেয়ে নিতাম, তা হলে ওরা ভাল হয়ে যাওয়ার সুযোগ পেত না! আমরা নিজেরাই নিজেদের পায়ে কুড়ুল মেরেছি!’
মনমরা হয়ে যে দু’জন খেঁকুড়ে ওদের ধরে এনেছিল তারাই আবার ওদের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে এল। খুব মন দিয়ে ওদের দেখছিল অবশ্য ওরা ঝগড়া করছে কিনা বোঝার জন্যে। কিন্তু টিঙ্কি আর টান্টু আর ঝগড়া করেনি, খুব শিক্ষা হয়ে গিয়েছে বাবা ওদের! ঝগড়া করার কী ফল সে আর ওদের বলে দিতে হবে না! ভাগ্যিস খেঁকুড়েগুলোও ঝগড়া করছিল, না হলে ওদের আর বেঁচে ফিরে আসতে হত না!
বাবা ঘুম থেকে উঠে ভয়ানক আশ্চর্য হয়ে দেখলেন যে, টিঙ্কি আর টান্টু দু’জনে শান্ত হয়ে বসে বই পড়ছে!
সেই দেখে বাবা খুশি হয়ে বললেন, ‘বাহ! এই তো খেঁকুড়েদের ভয়ে কেমন ভাল ছেলেমেয়ে হয়ে গেছ দেখছি! চলো তোমাদের আজকে আইসক্রিম খাওয়াতে নিয়ে যাব!’


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.